৬.৪ Secularism/ধর্মনিরপেক্ষতা
Secularism বা ধর্মনিরপেক্ষতা মতবাদটিকে কেউ কেউ সকল ধর্মের সমান স্বাধীনতা বা সবাই নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে -
এই অর্থে বোঝাতে চান। প্রকৃতপক্ষে Secularism মানে হলো ধর্মীয় আইন-কানুন থেকে রাষ্ট্র আলাদা থাকবে। Oxford Dictionary-তে Secularism-কে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এভাবেঃ
The belief that
religion should not be involved in the organisation of society, education etc. [সমাজের গঠন/সংগঠন, শিক্ষা ইত্যাদিতে ধর্ম যুক্ত হবে না -
এই বিশ্বাসের নাম Secularism.]
Encarta
Dictionary-তে Secularism এর সংজ্ঞা দেয়া হয়েছেঃ
Exclusion of
religion from public affairs: the belief that religion & religious bodies should
have no part in political or civic affair or in running public institutions,
especially schools etc. [সরকারি কাজকর্ম থেকে ধর্মের বিচ্ছিন্নতাঃ রাজনীতি বা নাগরিক কার্যকলাপ বা সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ, বিশেষতঃ
স্কুল ইত্যাদি পরিচালনার ক্ষেত্রে ধর্ম বা ধর্মীয় ব্যক্তিত্বরা অংশ নিতে পারবে না -
এই বিশ্বাসের নাম Secularism.]
কিন্তু রাষ্ট্রের সঙ্গে ধর্মের বিচ্ছিন্নতা কোনো মুসলিম মেনে নিতে পারে নাঃ
يٰأَيُّهَا
ٱلَّذِينَ آمَنُواْ ٱدْخُلُواْ فِى ٱلسِّلْمِ كَآفَّةً
‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ কর।’ [সূরা আল-বাকারাহঃ ২০৮]
ইবন কাসীর (রহ.) এ আয়াতের তাফসীরে বর্ণনা করেন, ইবন আব্বাস (রাঃ) এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেছেনঃ
এ আয়াতে আল্লাহ নির্দেশ দিচ্ছেনঃ
ادخلوا
في شرائع دين محمد صلى الله عليه وسلم ولا تَدَعوا منها شيئًا
‘তোমরা পরিপূর্ণভাবে মুহাম্মদ (সাঃ) এর দ্বীনের সমস্ত আইনের আনুগত্য কর এবং সেখান থেকে কোনো কিছুই পরিত্যাগ করো না।’
এই আয়াতের তাফসীরে মুফতি শাফে’ঈ (রহ.) বলেনঃ
‘কুর’আন ও সুন্নাহতে বর্ণিত পূর্ণাঙ্গ জীবন-বিধানের নামই হচ্ছে ইসলাম। কাজেই এর সম্পর্ক বিশ্বাস ও ইবাদাতের সঙ্গেই হোক কিংবা আচার-অনুষ্ঠান, সামাজিকতা অথবা রাষ্ট্রের সঙ্গেই হোক অথবা রাজনীতির সঙ্গেই হোক, এর সম্পর্ক বাণিজ্যের সঙ্গেই হোক কিংবা শিল্পের সঙ্গে - ইসলাম যে পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা দিয়েছে তোমরা সবাই তারই অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও।’ [মা’আরেফুল কুর’আন]
যারা ইসলামের বিধি-বিধানসমূহকে আংশিকভাবে পালন করতে চায় তাদেরকে আল্লাহ কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন এই বলে যে,
أَفَتُؤْمِنُونَ
بِبَعْضِ ٱلْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ فَمَا جَزَآءُ مَن يَفْعَلُ ذٰلِكَ
مِنكُمْ إِلاَّ خِزْيٌ فِى ٱلْحَيَاةِ
ٱلدُّنْيَا وَيَوْمَ ٱلْقِيَامَةِ
يُرَدُّونَ إِلَىٰ أَشَدِّ ٱلّعَذَابِ
‘তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস কর এবং কিছু অংশ প্রত্যাখ্যান কর? অতএব তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ করে তাদের একমাত্র প্রতিফল পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনা আর কিয়ামতের দিন এরা কঠিন শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে।’ [সূরা আল-বাকারাহঃ ৮৫]
৬.৫ জাতীয়তাবাদ
জাতীয়তাবাদ বলতে নির্দিষ্ট কোনো ভাষা, অঞ্চল, জনগোষ্ঠী, গোত্র, বর্ণ ইত্যাদির ভিত্তিতে রাষ্ট্র গঠনের রাজনৈতিক চিন্তাকে বোঝায়। এনসাইক্লোপিডিয়া বৃটানিকায় বলা হয়েছে, ‘Nationalism is a sense of shared identity
and loyalty, based upon common history, language, culture, and traditions.’ [জাতীয়তাবাদ হলো একই ইতিহাস, ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সামষ্টিক পরিচয় ও আনুগত্যের অনুভূতি।]
কিন্তু ভাষা, অঞ্চল, জনগোষ্ঠী, গোত্র, বর্ণ ইত্যাদির ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হবার চিন্তা (عَصَبِيَّة - আসাবিয়্যাহ) ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ
لَيْسَ مِنَّا مَنْ دَعَا إلى عَصَبِيةٍ، وَلَيْسَ مِنَّا مَنْ قاتل عَلَى
عَصَبيةٍ، وَلَيْسَ مِنَّا مَنْ مَاتَ عَلَى عَصَبِيةٍ
‘যে ব্যক্তি আসাবিয়্যাতের দিকে ডাকে, নিজেও আসাবিয়্যাতের সমর্থনে যুদ্ধ করে এবং আসাবিয়্যাতের সমর্থনে মৃত্যুবরণ করে, সে আমাদের মধ্য হতে নয়।’ [আবু দাউদ]
রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ
وَمَنْ
قَاتَلَ تَحْتَ رَايَةٍ عِمِّيَّةٍ يَغْضَبُ لِعَصَبَةٍ أَوْ يَدْعُو إِلَى عَصَبَةٍ
أَوْ يَنْصُرُ عَصَبَةً فَقُتِلَ فَقِتْلَةٌ جَاهِلِيَّةٌ
‘যে ব্যক্তি একটি অন্ধ পতাকার অধীনে যুদ্ধ করে, তার স্বজাতির সঙ্গে ক্ষুব্ধ হয় অথবা স্বজাতিকে আহ্বান করে অথবা স্বজাতিকে সাহায্য করে এবং সে কারণেই নিহত হয়, তাহলে সে নিহত হলো জাহিলিয়্যাতের মধ্যে।’
[মুসলিম]
সুতরাং ইসলামে জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রের কোনো ভিত্তি নেই।
৬.৬ নারী নেতৃত্ব
ইমাম বুখারী (রহ.) বর্ণনা করেনঃ
পারস্যবাসী
কর্তৃক কিসরার কন্যাকে রাষ্ট্রপ্রধান বানানোর খবর শুনে রাসূল (সাঃ) বলেনঃ
لَنْ يُفْلِحَ قَوْمٌ وَلَّوْا
أَمْرَهُمْ امْرَأَةً
‘সেই জাতি কখনো সফল হবে না, যারা শাসন ক্ষমতা নারীর হাতে অর্পণ করেছে।’
কাজী আবু বকর ইবনুল আরাবী (রহ.) এই হাদীস সম্বন্ধে বলেনঃ
هذا نَصٌ فِي أن المرأة لا تَكُوْن خَلِيْفَة ولا خلاف فِيْهِ
‘নারী যে খলীফা হতে পারবে না, উপরিউক্ত হাদীস তার বলিষ্ঠ প্রমাণ - এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই।’ [তাফসীরে কুরতুবী, ১৩শ খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৮৩]
ইমাম ইবনে হাযম (রহ.) বলেনঃ
وجميع
فرق أهل القبلة ليس منهم أحد يجيز إمامة امرأة
‘কিবলার অনুসারীদের (মুসলিম) বিভিন্ন ফিরকার মধ্যে কেউ এমন নেই, যে নারী নেতৃত্বকে জায়েজ মনে করে।’ [আল ফাসল ফিল মিলাল ওয়াল আহওয়ায়ী ওয়ান নাহল]
শায়খ আবদুল কাদীম জাল্লুম (রহ.) উল্লিখিত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেনঃ
‘যেহেতু রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যারা নারীদেরকে শাসকের দায়িত্ব দেবে তাদের অসফলতার কথা বলেছেন, সুতরাং এটি নিষেধাজ্ঞার ইঙ্গিতবাহী। ...এখানে প্রদত্ত ইঙ্গিতটি চুড়ান্ত। ...অতএব, নারীকে (শাসক হিসেবে) নিয়োগ দেয়া হারাম।’ [নিযামুল হুকুম ফিল ইসলাম]
No comments:
Post a Comment