21.8.14

শাইখ আতা বিন খলিল আবু আল রাশতাঃ হিযবুত তাহরীর-এর বর্তমান আমীর ও ইসলামী আইন শাস্ত্রের প্রখ্যাত মনীষী

হিজরী ১৪২৪, সফর ১১ বা ১৩ এপ্রিল, ২০০৩ হিযবুত তাহরীর-এর দিওয়ান আল মাযালিমের প্রধান, হিযবুত তাহরীর-এর আমীরের নাম ঘোষণা করেন। তিনি হচ্ছেন প্রখ্যাত আইনবিদ, মনীষী ও প্রকৌশলী আতা বিন খলিল আবু আল রাশতা আবু ইয়াসিন। আমাদের প্রত্যাশা তাঁর নেতৃত্বেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা মুসলিমদের বিজয় দান করবেন; দাওয়াহ বর্তমানে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং প্রশাসনিক সকল কর্মকান্ড সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে। তিনি হিযব-এর শাবাবদের (নেতা-কর্মীদের) দক্ষতার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করেছেন।

শাইখ আতা আবু রাশতার জীবনের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ দিকঃ

আতা বিন খলিল বিন আহমাদ বিন আবদুল কাদির আল খতিব হিজরী ১৩৬২ সনে বা ১৯৪৩ সালে ফিলিস্তিনের আল খালিল শহরে রাআনা নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ধর্মভীরু পরিবারে তাঁর জন্ম। ছেলেবেলাতেই তিনি বিশ্বাসঘাতক আরব শাসক ও বৃটেনের সহায়তায় ফিলিস্তিনে ইহুদী আগ্রাসন ও ফিলিস্তিনি জনগণের দুঃখ-দুর্দশা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছেন। ইহুদী আগ্রাসনে বাধ্য হয়ে তাদের পরিবার আল খালিল শহরের সন্নিকটে একটি শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।

সেই শরণার্থী শিবিরেই তিনি তাঁর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। তিনি ১৯৫৯ সালে আল খালিল শহরের আল হুসাইন বিন আলি নামক স্কুল থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের সনদ অর্জন করেন। অতঃপর তিনি ১৯৬০ সালে মিশরীয় সিলেবাস অনুযায়ী আল কুদস শরীফের আল ইবরাহীমী নামক প্রতিষ্ঠান থেকে ‘আল সানিয়া আল আমা’ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ১৯৬০-৬১ শিক্ষাবর্ষে তিনি কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৬৬ সালে ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষা সমাপ্তির পর তিনি বহু আরব রাষ্ট্রে প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আল ওয়াস্ত ফি হিসাব আল কিমিয়াত ও মারাকাবাতাল মাবানি ওয়াত তারাকনামে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ওপর তিনি একটি বই রচনা করেছেন।

পঞ্চাশের দশকের মধ্যভাগে তিনি যখন মাধ্যমিক পর্যায়ে ছাত্র, তখন তিনি হিযবুত তাহরীর-এ যোগদান করেন। হক কথা বলার জন্য তাকে বহু নির্যাতন ও কারাবাসের শিকার হতে হয়। তিনি হিযব-এর প্রশাসনিক কাঠামোর অধীনে সকল কাঠামোগত ও প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি দারিস, মুশরিফ, নাকীব, উলাইয়াহ কমিটির সদস্য, মুতামাদ এবং আমীরের কার্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। হিজরী ১৪২৪ সনে ১১ সফর বা ২০০৩ সনের ১৩ এপ্রিল তিনি হিযবুত তাহরীর-এর আমীর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার নিকট সর্বদাই তাঁর প্রার্থনা তিনি যাতে তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে পারেন।

তাঁর রচিত ইসলামী বইসমূহ নিম্নরুপঃ

.সূরা বাকারার তাফসীর আত তাঈসীর ফী উসূল আত তাফসীর
. দারাসাত ফি উসূল আল ফিকহ - আত তাঈসীরুল উসূল ইলাল উসূল

এছাড়াও তিনি নিম্নোক্ত পুস্তিকাসমূহ রচনা করেছেনঃ

. অর্থনৈতিক সংকট, এর বাস্তবতা ও ইসলামের দৃষ্টিতে সমাধান
. আরব ভূখন্ড ও ভূ-মধ্যসাগরে নয়া ক্রুসেড
. শিল্পনীতি ও রাষ্ট্রের শিল্পায়ন

তাঁর সময়ে হিযবুত তাহরীর নিম্নোক্ত বইসমূহ প্রকাশ করেছেঃ

. ইসলামী নাফসিয়ার গুরুত্বপূর্ণ উপাদানসমূহ
. রাজনৈতিক ইস্যু - অধীকৃত ইসলামী ভূখন্ডসমূহ
. ইসলামী ধারণাসমূহ বইয়ের সংযোজন
. খিলাফত রাষ্ট্রের শিক্ষানীতির ভিত্তি
. খিলাফত রাষ্ট্রের কাঠামো ও প্রতিষ্ঠানসমূহ (শাসন ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা)

সর্বশক্তিমান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার নিকট সর্বদা তিনি প্রার্থনা করেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা যেন তাঁকে প্রদত্ত দায়িত্ব পালনে শক্তি ও সাহস দান করেন এবং তা এমনভাবে পালন করতে পারেন যাতে আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ) তাঁর উপর সন্তুষ্ট হবেন। তিনি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার দরবারে আরো প্রার্থনা জানান, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা যেন তাঁর হাতেই খিলাফত দান করেন; আমাদের সৃষ্টিকর্তা সর্বশ্রোতা এবং আমাদের প্রার্থনা কবুল করেন।

তাঁর সময়ে ২৮ রজব, ১৪২৬ হিজরী (২ সেপ্টেম্বর, ২০০৫) ৮৪ বছর পূর্বে খিলাফত ধ্বংস হবার হৃদয় বিদারক ঘটনার স্মরণে খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সারা বিশ্বে একযোগে মুসলিমদের প্রতি উদাত্ত্ব আহ্বান জানানো হয়। ইন্দোনেশিয়া হতে শুরু হওয়া এ আহ্বান পূর্বে প্রশান্ত মহাসাগরের তীর থেকে পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে ধ্বনিত হয়েছে এবং শুক্রবারের নামাজে এজন্য প্রার্থনা জানানো হয়েছে। এ আহ্বানে সমগ্র উম্মাহ ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়। হিযবুত তাহরীর-এর বহু সভা-সমাবেশ ও সম্মেলনে তিনি সত্যের পক্ষে বলিষ্ঠ কন্ঠে আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রথম থেকে তাঁর নেতৃত্বের সময়টুকু খায়েরে (উত্তম) পরিপূর্ণ রয়েছে এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার কাছে তাঁর নেতৃত্বের বাকি দিনগুলোতেও বরকত কামনা করি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ইচ্ছায় তাঁর নেতৃত্বের অধীনে নুসরাহ-এর পরিষ্কার নিদর্শন পরিদৃষ্ট হচ্ছে। তাঁর হাতেই মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বিজয় দান করবেন - আমরা সেই প্রত্যাশায় রয়েছি, আমিন।

এই মহান আমীরের আল্লাহভীরুতা উল্লেখ করার মতো। তিনি আবেগের সাথে তাঁর উদ্দেশ্য অর্জনে উদ্বিগ্ন এবং সর্বদা তাঁর দায়িত্ব পালনে উদার। হিযবুত তাহরীর-এর প্রশাসনিক বিভিন্ন দায়িত্ব পালনকালে তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠা ও দক্ষতার সাথে তাঁর উপর অর্পিত সকল দায়িত্ব সম্পাদন করেছেন। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বসমূহ ছিল মুতামাদ, হিযবুত তাহরীর-এর মুখপাত্র ও প্রাক্তন আমীরের সহযোগী হিসেবে দায়িত্ব পালন। এ কারণেই তিনি তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন ও সম্যক অবগত। তিনি যথেষ্ট দক্ষতা ও সচেতনতার সাথে হিযব-এর সকল কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন; হিযব-এর শাবাবগণ (নেতা-কর্মীগণ) কার্যক্ষেত্রে প্রতিটি পদক্ষেপে তাঁর উপস্থিতি অনুভব করে; সেকাজ বড় বা ছোট যাই হোক না কেন। এভাবেই তিনি শাবাবদের যোগ্যতা ও দক্ষতার পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করেন।

No comments:

Post a Comment