4.9.14

অধ্যায় ৩ ~ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ভালবাসা

আল-আযহারী বলেনঃ একজন বান্দার জন্য আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ভালবাসা বলতে তাঁদের প্রতি আনুগত্য এবং তাঁদের আদেশ মেনে চলাকে বুঝায় আল-বায়দাওয়ী বলেনঃ ভালবাসা হচ্ছে আনুগত্যের অদম্য ইচ্ছা ইবনেআরাফাহ বলেনঃ আরবদের ভাষায় ভালবাসা হচ্ছে কোন কিছুকে ন্যায়নিষ্ঠভাবে সম্পন্ন করার সংকল্প আজ-জাজ্জাজ বলেনঃ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি মানুষের ভালবাসা হল তাদের মান্য করা এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা যা নির্দেশ দিয়েছেন এবং রাসূল (সাঃ) যা নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ করা

বান্দার জন্য আল্লাহর ভালবাসা হল তাঁর মাগফেরাত, সন্তুষ্টি পুরষ্কার আল-বায়দাওয়ী বলেনঃ তিনি (আল্লাহ) আপনাকে ভালবাসেন ক্ষমা করে দিবেন অর্থ হল তিনি আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবেন আল-আজহারী বলেনঃ বান্দার জন্য আল্লাহর ভালবাসার অর্থ হল মাগফেরাতসহ তার (বান্দার) প্রতি স্রষ্টার রহমত বর্ষিত হওয়া তিনি (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) বলেনঃ

আল্লাহ কাফিরদিগকে ভালবাসেন না [সূরা আল-ইমরানঃ ৩২]; অর্থাৎ তিনি তাদের ক্ষমা করবেন না সুফিয়ান বিনউনাইনাহ বলেনঃ তিনি (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) ভালবাসেন অর্থ হল, তিনি (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) আপনার খুব নিকটে আছেন, ভালবাসা মানে হল নৈকট্য আল্লাহ কাফিরদের ভালবাসেন না অর্থ হল তিনি (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) তাদেরকে নিকটে আনবেন না আল-বাগাবী বলেনঃ বিশ্বাসীদের প্রতি আল্লাহর ভালবাসা বলতে তাঁর প্রশংসা, পুরষ্কার ক্ষমাকে বুঝায় আজ-জাজ্জাজ বলেনঃ সৃষ্টির প্রতি আল্লাহর ভালবাসা বলতে তাদের প্রতি তাঁর ক্ষমা-রহমত-করুণা এবং সমর্থনকে বুঝায়

তবে এখানে আমাদের আলোচ্য বিষয় আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি বান্দার ভালবাসা উপরোল্লিখিত পদ্ধতিতে ভালবাসা বাধ্যতামূলক ভালবাসা হল এমন এক ধরনের প্রবণতা (inclination) যা মানুষের আচরণের প্রকৃতি বা নাফসিয়্যাহকে তৈরি করে ভালবাসা হতে পারে চিন্তাহীন প্রবৃত্তিগত (instinctive) প্রবণতা, যেমনঃ মানুষের মালিকানার প্রবণতা, বেঁচে থাকা, ন্যায়বিচার, পরিবার এবং সন্তানের প্রতি ভালবাসা ইত্যাদি এমন প্রবণতাও (inclination) রয়েছে যা চিন্তার সাথে সম্পর্কযুক্ত, যা মানুষের প্রবণতার ধরণকে নির্ধারণ করে যেমনঃ আমেরিকান ইন্ডিয়ানরা ইউরোপ থেকে আসা অভিবাসীদের মেনে নিতে পারেনি, কিন্তু আনসারগণ মুজাহিরদের ভালবেসেছিলেন আল্লাহ তাঁর রাসূলের প্রতি ভালবাসাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা শারীআহ সাথে সম্পর্কযুক্ত করেছেন এবং একে ফরয করেছেন ব্যাপারে প্রমাণ পাওয়া যায় আল্লাহর কিতাব থেকেঃ

তিনি (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) বলেনঃ

এবং মানবমন্ডলীর মধ্যে এমন লোক রয়েছে যারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কিছুকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে এবং তারা আল্লাহকে ভালবাসার ন্যায় তাদেরকে ভালবেসে থাকে কিন্তু আল্লাহ প্রতি বিশ্বাসীদের ভালবাসা পৃথিবীর যেকোন কিছুর তুলনায় বহুগুণে বেশী [সূরা আল বাক্বারাহঃ ১৬৫]

এর অর্থ হল আল্লাহর প্রতি মুমিনদের ভালবাসা আল্লাহর প্রতি কাফিরদের বিদ্রোহের চেয়ে বেশী

তিনি (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) বলেনঃ

বল, যদি তোমাদের পিতা, সন্তান, ভাই, স্ত্রী-পরিজন, অর্জিত সম্পদ আর ব্যবসা যার মন্দার আশংকা কর, আর গৃহসমূহ যাকে তোমরা পছন্দ কর, (এসব কিছু যদি) আল্লাহ তাঁর রাসূলের চেয়ে এবং তাঁর পথে জিহাদ করার চেয়ে তোমাদের নিকট অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর যে পর্যন্ত না আল্লাহ তাঁর (শাস্তির) নির্দেশ পাঠিয়ে দেন এবং আল্লাহ ফাসি সম্প্রদায়কে হেদায়েত প্রদান করেন না [সূরা আত তাওবাহঃ ২৪]

আর বিষয়ে সুন্নাহ হতে প্রাপ্ত দলিলসমূহ নিম্নরূপঃ

§  আনাস (রা.) বর্ণনা করেনঃ

একজন ব্যক্তি কিয়ামত দিবস সম্পর্কে রাসূল (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করল ব্যক্তি বললোঃ কিয়ামত কখন আসবে? তিনি (সাঃ) বললেনঃ তুমি এর জন্য কী প্রস্তুতি নিয়েছ? সে বললোঃ কিছুই না, কিন্তু আমি আল্লাহ রাসূল (সাঃ)-কে ভালবাসি তিনি (সাঃ) বললেনঃ তুমি যাকে ভালবাস তুমি তার সাথেই থাকবেআনাস (রা.) বলেনঃ আল্লাহর রাসূল (সাঃ) যখন বললেন তোমরা তার সাথেই থাকবে যাকে তুমি ভালবাস, তখন একথা শুনে আমাদের আনন্দের সীমা রইল না আনাস (রা.) বলেনঃ আমি রাসূল (সাঃ), আবু বকর (রা.) এবং ওমর (রা.)-কে ভালবাসি এবং ভালবাসার জন্য আমি তাঁদের সাথেই থাকব বলে আশা করি, যদিও আমার আমলের পরিমাণ তাঁদের মত নয় [মুত্তাফিকুন আলাইহি]

§  আনাস (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেনঃ

যে ব্যক্তি তিনটি বিষয় অর্জন করতে পারবে সে ঈমানের মিষ্টতা অনুভব করবে- আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সাঃ)-কে যেকোন কিছুর চেয়ে বেশী ভালবাসা, আল্লাহর জন্য কাউকে ভালবাসা এবং পূণরায় কাফির হওয়ার চিন্তাকে সেভাবেই অপছন্দ করা যেভাবে সে নিজেকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে অপছন্দনীয় মনে করে [মুত্তাফিকুন আলাইহি]

§  আনাস (রা.) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ

তোমাদের কেউ ঈমানদার হিসেবে গণ্য হবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পরিবার, তার সম্পদ এবং সব মানুষের চেয়ে অধিক প্রিয় হই [মুত্তাফিকুন আলাইহি]

সাহাবীগণ (রা.) তাদের এই দায়িত্ব সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন ছিলেন আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল যাদেরকে ভালবাসেন তাদের অন্তর্ভূক্ত হবেন এই সম্মান প্রাপ্তির আশায় সাহাবীগণ (রা.) পরস্পর প্রতিযোগীতা করতেন আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ

ওহুদ যুদ্ধের এক পর্যায়ে সাহাবায়ে কেরাম নবী করিম (সাঃ) থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন তখন আবু তালহা (রা.) ঢাল হাতে নিয়ে নবী করীম (সাঃ)-এর সম্মুখে প্রাচীরের ন্যায় অটল হয়ে দাঁড়ালেন আবু তালহা (রা.) সুদক্ষ তীরন্দাজ ছিলেন অনবরত তীর ছুড়তে থাকায় তার হাতে ঐদিন দুবা তিনটি ধনুক ভেঁঙ্গে যায় সময় তীর ভর্তি শরাধার নিয়ে যে কেউ তাঁর নিকট দিয়ে যেত নবী করিম (সাঃ) তাকেই বলতেনঃ তোমরা তীরগুলি আবু তালহার জন্য রেখে দাও এক সময় নবী করীম (সাঃ) মাথা উঁচু করে শত্রুদের অবস্থা অবলোকন করতে চাইলে আবু তালহা (রা.) বললেনঃ হে আল্লাহ্ রাসূল! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক! আপনি মাথা উচু করবেন না হয়ত শত্রুদের নিক্ষিপ্ত তীর এসে আপনার গায়ে লাগতে পারে আমার গর্দান এবং বক্ষ আপনাকে রক্ষা করার জন্য ঢাল স্বরূপ [মুত্তাফিকুন আলাইহি]

§  বর্ণিত আছে যে কায়েস বলেছেনঃ

আমি দেখেছি আবু তালহার সে হাতটি সেদিন বোধশক্তিহীন (paralysed) হয়ে গিয়েছিল, যে হাতটি দিয়ে তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে একটি তীরের আঘাত হতে রক্ষা করেছিলেন [আল বুখারী]

যে তিনজন ব্যক্তি তাবুক অভিযানে অংশ নেয়নি তাদের সম্পর্কিত কা বিন মালিক কর্তৃক বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদীসে কা বলেনঃ

যখন বয়কটের ব্যাপারটি প্রলম্বিত হচ্ছিল, তখন আমি ততক্ষণ পর্যন্ত হাটলাম যতক্ষণ না আবু কাতাদা বাগানের দেয়ালের উপর পর্যন্ত আরোহণ করি সে ছিল আমার চাচাতো ভাই এবং লোকদের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় আমি তাঁকে সালাম দিলাম, কিন্তু তিনি সালামের কোনরূপ উত্তর দিলেন না সে কারণে আমি বললামঃ আবু কাতাদাহ, আমি আল্লাহর ওয়াস্তে তোমার কাছে আরজ করছি, তুমি কি জান যে, আমি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে (সাঃ) ভালবাসি?’ আবু কাতাদাহ্ চুপ থাকলেন আমি আল্লাহর ওয়াস্তে দ্বিতীয়বার তার কাছে একইভাবে আরজ করলাম তখনও সে নিশ্চুপ থাকল যখন আমি তৃতীয়বার আরজ করলাম তখন তিনি বললেনঃআল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ব্যাপারে ভাল জানেনতখন কষ্টে আমার চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে এল আমি ফিরলাম এবং দেয়াল টপকে চলে আসলাম’’ [মুত্তাফিকুন আলাইহি]

§  সাহল বিন সা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) খায়বারের যুদ্ধের দিন বলেনঃ

কুতাইবা বিন সাঈদ আমাদেরকে বর্ণনা করেন যে, আবি হাজিম হতে ইয়াকুব বিন আবদুর রহমান আমাদেরকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বললেন সাহলু বিন সা (রা.) আমাকে বললোঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) খায়বারের দিন বলেনঃ আমি এমন একজনকে আজ ব্যানার প্রদান করব যে আল্লাহ তাঁর রাসূলকে ভালবাসে এবং তাঁরাও (আল্লাহ তাঁর রাসূল) তাকে ভালবাসেন এই সম্মান প্রাপ্তির আশায় সব মুসলিম পরদিন সকালে ব্যানার গ্রহণের জন্য উপস্থিত হল রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আলী ইবনে আবি তালিবকে ডেকে পাঠালেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে জানানো হল তার চোখে ব্যাথা তিনি (সাঃ) বললেনঃ তাকে ডেকে পাঠাও তাকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে আনা হল এবং তিনি আলী (রা.)-এর চোখে থুতু লাগিয়ে তার জন্য দুকরলেন আলী (রা.)-এর চোখ এমনভাবে ভাল হয়ে গেল যেন আগে কখনো ব্যাথা ছিল না অতঃপর তিনি (সাঃ) আলীর (রা.) হাতে ব্যানার তুলে দিলেনআলী (রা.) তার পক্ষ থেকে শপথ নিলেন যে, তিনি ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ করবেন যতক্ষণ না তারা ইসলাম গ্রহণ করে রাসূল (সাঃ) তাকে বললেনঃ সবকিছু সহজভাবে গ্রহণ কর এবং তাদেরকে ইসলাম গ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানাবে এবং তাদেরকে আল্লাহর প্রতি তাদের কর্তব্য সম্পর্কে জানাবে আমি আল্লাহর কসম খেয়ে বলছি, যদি তোমার হাতে একজন লোক হিদায়াত পায়, তাহলে তা আমাদের সেরা উটসমূহের চেয়েও ওজনে বেশী হবে [মুত্তাফিকুন আলাইহি]

§  ইবনে হিব্বান তার সহীহ্তে উল্লেখ করেন যেঃ

“... যখন উরওয়া কুরাইশদের কাছে ফেরত গেলেন, তিনি বললেনঃ আমি বিভিন্ন রাজ দরবারে গিয়েছি এবং সিজার, খসরু এবং নাজ্জাশীদের জাঁকজমকতা অবলোকন করেছি কিন্তু কখনো আমি মুহাম্মদের মত এমন একজন রাজা দেখিনি যার সাথীরা তাকে এত ভক্তি করে আল্লাহর কসম সে যদি থুতুও ফেলে তবে তাঁর সাথীরা তা মাটিয়ে পড়তে দেয় না বরং হাতে নিয়ে মুখে চামড়ায় মাখে যখন তিনি (সাঃ) কোন বিষয়ে নির্দেশ দেন তখন তারা সেটি সম্পাদন করার জন্য তৎপর হয়ে উঠে এবং যখন তিনি (সাঃ) অযু করেন তখন তারা তাঁর (সাঃ) ব্যবহৃত পানি নিয়ে কাড়াকাড়ি করে যখন তিনি (সাঃ) কথা বলে তখন তারা তাদের কন্ঠস্বর নীচু রাখে এবং তারা কখনোই ভক্তির কারণে তার দিকে সরাসরি তাকায় না...

§  মুহম্মদ বিন শিরিন বলেনঃ

ওমর (রা.)-এর শাসনামলে লোকেরা এই বলে স্মৃতিচারণ করছিল যে, তারা কি আবু বকরের চেয়ে ওমরকে বেশী ভালবাসে কীনাওমর বিন আল-খাত্তাব (রা.)-এর কাছে যখন খবর পৌঁছাল তখন তিনি (রা.) বললেনঃ আল্লাহর কসম, আবু বকরের সংস্পর্শে থেকে একটি রাত্রি যাপন উমরের পরিবার অপেক্ষা উত্তম রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আবু বকরের সাথে সাওর পর্বত গুহা অভিমূখে যাত্রা করলেন এবং আবু বকর কখনও রাসূলুল্লাহর (সাঃ) সামনে, কখনো পেছনের দিকে ছুটছিলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার উৎকন্ঠা দেখলেন তিনি (সাঃ) আবু বকরকে জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আবু বকর! কী ব্যাপার? তুমি একবার আমার পশ্চাদে আরেকবার আমার সম্মুখে ছুটছো কেন? প্রত্যুত্তরে আবু বকর বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! যখন আমার এই চিন্তা হয় যে শত্রুরা আপনাকে পেছন থেকে অনুসরণ করছে, তখন আপনার পেছনে যাই এবং আবার যখন এই চিন্তা হয় যে, সামনে হয়ত কেউ পেতে আছে তখন আবার সামনে চলে যাই কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ হে আবু বকর! আমার বদলে তুমি যাতে আক্রান্ত হও, এটাই কি তোমার চাওয়া? তিনি (আবু বকর) বললেনঃ হ্যাঁ অবশ্যই, যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন তাঁর কসম! আপনাকে কোন দূর্ভোগ স্পর্শ করার আগে তা যেন আমার উপর পতিত হয় এটাই আমার আকাংখা এটিও বর্ণিত আছে যে, যখন তারা সাওর পর্বত গুহায় পৌঁছালেন আবু বকর রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে ততক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে অনুরোধ করলেন যতক্ষণ না তিনি গুহাটিকে পরীক্ষা পরিষ্কার করে নেন তিনি অতঃপর গুহাতে প্রবেশ করলেন এবং সেটি পরীক্ষা পরিষ্কার করলেন অতঃপর তার হঠাৎ স্মরণ হলো যে তিনি একটি গর্তকে সঠিকভাবে পরীক্ষা করেননি তাই তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে আবারও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে অনুরোধ করলেন যাতে তিনি তা পরীক্ষা করে নিতে পারেন অতঃপর তিনি যখন পুরোপুরি সন্তুষ্ট হলেন যে জায়গাটি সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং কোন ক্ষতিকারক পোকা বা সরীসৃপ নেই তখন তিনি বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) প্রবেশ করুন ওমর বললেনঃ যেই সত্ত্বার হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম! সে রাতটি ছিল উমরের পরিবারের অপেক্ষায়ও উত্তম ছিল’” (আল হাকিম তার আল-মুসতাদরাক- এটি উল্লেখ করেছেন তিনি বলেন মুরসাল হওয়া সত্ত্বেও দুই শায়খ-আল বুখারী মুসলিমের শর্ত অনুসারে এর ইসনাদ সহীহ যা গ্রহণযোগ্য মুরসাল-এর প্রকারের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত

§  আনাস বিন মালেক (রা.) হতে বর্ণিত:

ওহুদের যুদ্ধের দিন যখন শত্রুরা মুসলিমদের উপর আধিপত্য বিস্তার করল, তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে আনসারদের মধ্য থেকে মাত্র সাতজন কুরাইশদের মধ্য থেকে দুইজন অবশিষ্ট ছিল যখন শত্রুরা তাঁর দিকে অগ্রসর হল এবং ঘিরে ফেললো, তিনি (সাঃ) বললেনঃ যে আজ তাদেরকে আমাদের কাছ থেকে পিছু হটাবে সে জান্নাত অর্জন করবে অথবা সে জান্নাতে আমার সাথী হবে? আনসারদের একজন অগ্রগামী হয়ে ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ করল যতক্ষণ না সে শহীদ হয়ে গেল সাতজন আনসারের সকলেই একের পর এক শহীদ হওয়া পর্যন্ত অবস্থা চলতে থাকল অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর বাকী দুইজন সাহাবীকে বললেনঃআমরা আমাদের সাথীদের প্রতি ন্যায়বিচার করিনি’” [মুসলিম]

§  আবদুল্লাহ বিন হিশাম বলেনঃ

আমরা একদিন নবী (সাঃ) এর সাথে ছিলাম যখন তিনিউমরের হাত ধরলেন উমর বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! শুধুমাত্র আমার দুই বক্ষপার্শ্বের মধ্যবর্তী ত্না ছাড়া, আমি আপনাকে পৃথিবীর যেকোন কিছুর চেয়ে বেশী ভালবাসি প্রত্যুত্তরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ ‘তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষ না আমি তার কাছে তার নিজ জীবনের চেয়ে প্রিয় হই উমর বললেনঃ ‘সেই সত্ত্বার কসম যিনি আপনার উপর কিতাব নাযিল করেছেন, এখন আমি আপনাকে আমার দুই বক্ষপার্শ্বের মধ্যবর্তী আত্মার চেয়েও বেশী ভালবাসি নবী (সাঃ) বললেনঃ ‘এখন তুমি তার (ঈমান) অধিকারী! [আল-বুখারী]

§  আন-নববী তার সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যায় (শরহে) সুলাইমান আল-খাত্তাবীর বরাত দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে ভালবাসার অর্থ সম্পর্কে উল্লেখ করেন যেঃ

আমার প্রতি ততক্ষন পর্যন্ত তোমরা সত্যিকারের ভালবাসা অর্জন করতে পারবে না, যতক্ষণ না আমার আনুগত্যে তোমরা সকল প্রচেষ্টা ব্যয় কর, যতক্ষন না আমার ইচ্ছাকে তোমরা তোমাদের খেয়াল-খুশির চেয়ে বেশী প্রাধান্য দিবে যদিও এতে তোমরা মৃত্যুমুখে পতিত হও

§  ইবনে শিরিন বলেনঃ আমি ওবায়দাহকে বললামঃ

আমাদের কাছে নবী (সাঃ)-এর কিছু চুল রয়েছে যা আনাস (রা.) অথবা তার পরিবারের মাধ্যমে সংগ্রহ করেছিলাম তিনি বললেনঃ পুরো পৃথিবী এর মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)-এর একটি চুল আমার কাছে বেশী প্রিয় হওয়া উচিত [আল বুখারী]

§  আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন যে, আবু বকর (রা.) বলেনঃ

যে সত্ত্বার হাতে আমার প্রাণ তার কসম! রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর ত্নী-স্বজনের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা আমার নিজের ত্নী-স্বজনের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখার চেয়ে আমার কাছে অধিকতর প্রিয় [আল বুখারী]

§  আয়েশা (রা.) বলেন, হিন্দ বিনতেতবা আসলেন এবং বললেনঃ

হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ), দুনিয়ার বুকে এমন কোন পরিবার ছিল না যা আমার কাছে আপনার পরিবারের চেয়ে অধিক ঘৃণিত ছিল কিন্তু আজকে আমার কাছে আপনার পরিবারের চেয়ে সম্মানিত আর কোন পরিবার নাই [মুত্তাফিকুন আলাইহি]

§  তারিক বিন শিহাব বর্ণনা করেন যে, তিনি ইবনে মাসউদকে বলতে শুনেছেনঃ

আল-মিকদাদ বিন আল-আসওয়াদের এমন একটি বিষয় আমি দেখতে পেয়েছি যা আমার কাছে থাকলে সেটিকে আমি যেকোন সমপর্যায়ের জিনিস থেকে অধিকতর প্রিয় মনে করতাম তা হল- বদর যুদ্ধে এক সময় তিনি (আল-মিকদাদ) রাসূল (সাঃ)-এর কাছে গিয়ে দেখতে পেলেন তিনি (সাঃ) মুশরিকদের জন্য বদ্দু করছেন তখন আল-মিকদাদ বিন আল-আসওয়াদ বললেনঃ মূসা (আঃ)-এর কওম যেমনটি বলেছিল- তুমি এবং তোমার পালনকর্তা গিয়ে কাফিরদের সাথে যুদ্ধ কর (আমরা এখানে বসে রইলাম)’, আমরা আপনাকে সেরূপ কিছু বলব না; বরং আমরা আপনার ডান দিকে-বাম দিকে এবং সম্মুখে-পশ্চাতে থেকে যুদ্ধ করব ইবনে মাসউদ বলেনঃ আমি দেখলাম, একথা শুনে রাসূল (সাঃ)-এর মুখমন্ড খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠল [আল বুখারী]

§  আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, সা (রা.) বলেনঃ

হে আল্লাহ! আপনি জানেন, যারা আপনার রাসূলকে অবিশ্বাস করেছে এবং মক্কা থেকে বিতাড়িত করেছে তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করার চেয়ে প্রিয় কিছু আমার কাছে নেই [মুত্তাফিকুন আলাইহি]

§  আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, সুমামা বিন উতাল বলেন যেঃ

হে মুহম্মদ! আল্লাহর কসম, আপনার চেহারার চেয়ে ঘৃণিত কোন মুখ আমার কাছে ছিল না, কিন্তু এখন এটি আমার কাছে সবচেয়ে বেশী প্রিয় আল্লাহর কসম, আপনার দ্বীনের চেয়ে ঘৃণিত কোন দ্বীন আমার কাছে ছিল না, কিন্তু এখন এটি আমার কাছে সবচেয়ে বেশী প্রিয় আল্লাহর কসম, আপনার দেশের চেয়ে ঘৃণিত কোন দেশ আমার কাছে ছিল না, কিন্তু এখন এটি আমার কাছে সবচেয়ে বেশী প্রিয়... [মুত্তাফিকুন আলাইহি]

No comments:

Post a Comment