দাওয়াতী কার্যক্রমের সম্প্রসারন
মুহাম্মদ
(সাঃ) বনু সাকিফ এবং তায়েফ গোত্র কর্তৃক নির্মম আঘাতে ক্ষতবিক্ষত এবং হজ্জ্বের মৌসুমে
কিন্দা, কালব, বনু আ-মির ও বনু হানিফা কর্তৃক সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যাত হবার পর থেকেই
মূলতঃ আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এবং তাঁর সাহাবীদের প্রতি কুরাইশদের সহিংসতা চুড়ান্ত আকার
ধারন করে। এ অবস্থা কুরাইশদের মুহাম্মদ (সাঃ) এবং তাঁর দলকে সমাজ ও বহির্জগৎ থেকে
আরো বিচ্ছিন্ন করার সুযোগ তৈরী করে দেয়। কিন্তু, এ সমস্ত ঘটনা আল্লাহর রাসুল (সাঃ) ও তাঁর
সাহাবীদের দৃঢ় ঈমানে না কোন ফাটল ধরাতে পারে, না তারা আল্লাহর প্রতিশ্রুত বিজয়ের
ব্যাপারে কখনো সন্দেহ প্রকাশ করেন। বরং, তারা শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত সত্য পথের উপর অবিচল
ভাবে দন্ডায়মান থাকে।
এভাবে,
মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর দাওয়াতী কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকেন এবং পরিণাম নিয়ে বিন্দুমাত্র
চিন্তিত না হয়ে যখনই সম্ভব বিভিন্ন গোত্রের কাছে নিজেকে উপস্থাপন করতে থাকেন। কুরাইশ
সম্প্রদায়ের মধ্য থেকে কেউ কেউ চেষ্টা করেছে তাঁর আনিত দ্বীনের ভবিষ্যত নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ
ও ঠাট্টা তামাশা করতে, কিন্তু তিনি এসব কটুক্তি বা হীন মন্তব্যে কখনো কান দেননি বা
ইসলামের বিজয়ের ব্যাপারে এতোটুকু সন্দেহ প্রকাশ করেননি। তিনি জানতেন আল্লাহ তা’আলা তাকে
তাঁর রাসুল হিসাবে পাঠিয়েছেন। তাই, তাঁকে (সাঃ) সবরকম ক্ষতি থেকে রক্ষা করা
এবং তাঁর মনোনীত দ্বীনকে পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠা করা তাঁরই দায়িত্ব। তাই তিনি দাওয়াতী
কার্যক্রমের ভয়ঙ্কর সঙ্কটপূর্ণ অবস্থাতেও অবিচল থেকেছেন এবং সন্তুষ্ট চিত্তে আল্লাহর
সাহায্যের অপেক্ষা করেছেন।
সৌভাগ্যবশত
ইসলামের বিজয়ের জন্য মুহাম্মদ (সাঃ) কে খুব বেশীদিন অপেক্ষা করতে হয়নি।
হজ্জ্বের মৌসুমে ইয়াসরিব (মদীনা) থেকে আগত আল-খাযরাজ গোত্রের একদল মানুষ যখন আল্লাহর
রাসুল (সাঃ) এর আহবানে ইসলাম গ্রহন করলো তখনই তাঁর আনিত দ্বীনের বিজয়ের লক্ষনগুলো
সুস্পষ্ট ভাবে প্রকাশিত হতে থাকলো।
আল্লাহর
রাসুলের আহবান শোনার পর তারা একে অন্যের দিকে তাকিয়ে বলেঃ “আল্লাহর কসম, এই হচ্ছে সেই নবী যার
কথা আমরা ইহুদীদের কাছে শুনেছি এবং আমরা তাঁকে (আল্লাহর রাসুলকে) কোন অবস্থাতেই আমাদের
পূর্বে তাদের স্বীকৃতি দেবার সুযোগ দেবো না।” এরপর তারা রাসুল (সাঃ) এর আহবানে সাড়া দেয় এবং ইসলাম
গ্রহন করে। তারা তাকে (সাঃ) কে বললঃ “আমরা আমাদের সম্প্রদায়কে (আওস
ও খাযরাজ) এমন পর্যায়ে রেখে এসেছি যে, তাদের মাঝে যেরুপ পারস্পরিক শত্রুতা আছে, তা
অন্য কোন জাতির মধ্যে নেই। আমরা আশাবাদী, আল্লাহ তা’আলা আমাদের গোটা সম্প্রদায়কে
অচিরেই আপনার মাধ্যমে একতাবদ্ধ করে দিবেন, যার ফলে, আপনার চাইতে শক্তিশালী কেউ হবে
না।”
ইয়াসরিবে
ফিরে যাবার পর তারা নিজ গোত্রের লোকদের মুহাম্মদ (সাঃ) এর কথা জানায় এবং ইসলাম এর দিকে
আহবান করে। তারা সেখানকার মানুষের হৃদয় ও অন্তরকে সত্য দ্বীন গ্রহন করার জন্য প্রস্তুত
করতে সক্ষম হয় এবং আউস ও খাযরাজ গোত্রের প্রতিটি ঘরে ঘরে মুহাম্মদ (সাঃ) আলোচনার
বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়।
আকাবার প্রথম শপথ
পরের
বছর মদীনা থেকে বারো জনের একটি দল হজ্জ্বের উদ্দেশ্যে মক্কায় আগমন করে এবং আকাবার উপত্যকায়
মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করে। এখানেই তারা মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে
অঙ্গীকারবদ্ধ হয়, যা আকাবার প্রথম শপথ নামে পরিচিত। তারা আল্লাহর রাসুল (সাঃ) কে এ মর্মে অঙ্গীকার
দেয় যে, তারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, চুরি করবে না, অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন
(zinah) করবে না, তাদের সন্তানদের হত্যা করবে না, প্রতিবেশীর সাথে দূর্ব্যবহার করবে
না এবং সর্বাবস্থায় মুহাম্মদ (সাঃ) এর নেতৃত্ব মেনে নেবে। যদি তারা তাদের শপথ
রক্ষা করে তবে পুরস্কার স্বরূপ রয়েছে জান্নাত। কিন্তু, যদি তারা ওয়াদা ভঙ্গ করে তবে
আল্লাহ চাইলে তাদের শাস্তি দেবেন অথবা ক্ষমা করবেন। রাসুল (সাঃ) এর সাথে এ চুক্তিতে আবদ্ধ হবার
পর তারা হজ্জ্বের মৌসুম শেষে মদীনায় ফিরে যায়।
No comments:
Post a Comment