অধ্যায়
৫ ~ ‘এটাই আমার পথ’
বর্তমানে
কোনো দারুল কুফরকে দারুল ইসলামে পরিণত করতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই রাসূল (সাঃ) ও সাহাবীদের
অনুসৃত পথকে বেছে নিতে হবে। সেজন্য আমাদের করণীয় হচ্ছেঃ
৫.১
দল গঠনঃ
ব্যক্তির
মধ্যে পরিবর্তন ঘটিয়ে ইসলামী ব্যক্তিত্ব তৈরী করা, যার জীবনের সব কাজের একমাত্র উদ্দেশ্য
হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি সন্ধান করা। এর মানে হচ্ছে সব কাজে হালাল-হারাম মাপকাঠি
মেনে চলা; সেই সাথে নিজেকে আরো বিশুদ্ধ করার জন্য ও শয়তানের প্ররোচনা থেকে বাঁচার জন্য
ক্রমাগত আল্লাহর স্মরণ (জিকির) এ রত থাকা, বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগী করা এবং আল্লাহর
কাছে মাগফিরাত কামনা করা। এরূপ ব্যক্তিরা আল্লাহর সাথে সম্পর্ক, রাসূল (সাঃ) এর প্রতি ভালোবাসা,
জ্ঞান, দক্ষতা ও সততায় এমনভাবে গড়ে উঠবেন যেন তারা জাহেল সমাজ পরিবর্তনের সংগ্রামে
নিজেদেরকে পরিপূর্ণভাবে উৎসর্গ করতে পারেন। আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গকারী মানুষরা সুশৃঙ্খলভাবে
একটি দলের অধীনে কাজ করবেন এবং যথাযথ লক্ষ্য ও পরিকল্পনাকে সামনে রেখে কুর’আন-সুন্নাহ
নির্দেশিত পদ্ধতি অনুযায়ী সমাজ পরিবর্তনের সংগ্রামে শামিল হবেন।
৫.২
সমাজ পরিবর্তনের প্রকাশ্য আন্দোলনঃ
সমাজে
প্রচলিত দুষ্ট চিন্তা-চেতনা ও আবেগ-অনুভূতিগুলোকে
পরিবর্তন করার জন্য প্রচেষ্টা চালানো। এজন্য সমাজে ব্যাপকভাবে প্রচলিত চিন্তাগুলো সম্পর্কে
আমাদের সম্যক ধারণা থাকা প্রয়োজন। বর্তমানে আমাদের সমাজে চলছে পুঁজিবাদ, ভোগবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা,
মানুষের সার্বভৌমত্ব, সাম্প্রদায়িকতা, শাসক শ্রেণীর স্বার্থের রাজনীতি, অন্ধভাবে উপনিবেশবাদী
প্রভুদের নির্দেশের অনুসরণ ইত্যাদি দুষ্ট চিন্তা ও পদ্ধতির চর্চা ও বাস্তবায়ন। সমাজ
পরিবর্তন করতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই সমাজের এসব দুষ্ট চিন্তা ও নিয়ম-কানুনকে প্রকাশ্যে
চ্যালেঞ্জ করতে হবে, যেমনটি করেছিলেন রাসূল (সাঃ) তাঁর মাক্কী জীবনে। বর্তমানে প্রচলিত সামাজিক,
অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চর্চাকে আলোচনায় এনে মানুষের সামনে স্পষ্ট করে দেখিয়ে দিতে হবে
যে, আলোচ্য
প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে যে সীমাহীন দুর্নীতি ও জুলুম চলছে তার মূল উৎস সমাজে প্রচলিত দুষ্ট
চিন্তা ও নিয়ম-পদ্ধতি। অপরদিকে ইসলামকে এমনভাবে তুলে ধরতে হবে যেন জনগণ বুঝতে পারে
যে, সমাজে
মানুষের চাহিদা ও প্রবৃত্তিগুলো পূরণের সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে ইসলাম। আর এটা করার একমাত্র
উপায় হচ্ছে চলমান জীবন ও ঘটমান বাস্তবতা থেকে বিভিন্ন ইস্যু (যা জনগণের চিন্তাকে ব্যাপকভাবে
আলোড়িত করছে) নিয়ে মানুষের সাথে আলোচনা করা এবং মানুষকে বুঝিয়ে দেয়া কীভাবে সমাজে প্রচলিত
চিন্তা ও আইনগুলোর সুযোগ নিয়ে সুবিধাবাদী শাসক শ্রেণী ও তাদের বিদেশী প্রভুরা জনগণকে
শোষণ ও নির্যাতন করছে; সেই সাথে ইসলামী চিন্তা-চেতনা ও রাষ্ট্রব্যবস্থা (খিলাফত)
কীভাবে মানুষকে এসব মানব রচিত আইনের জুলুম থেকে মুক্ত করে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা
ও অগ্রগতির ধারা প্রতিষ্ঠিত করবে, তাও জনগণের সামনে উপস্থাপন করা।
৫.৩
প্রভাবশালীদের সমর্থনে শাসনকর্তৃত্ব অর্জনঃ
যখন
জনগণ আস্থার সাথে বুঝতে পারবে যে, একমাত্র ইসলামী জীবনাদর্শ (Ideology) দ্বারাই আমাদের
সব চাহিদা ও প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিত, তখন ব্যাপক জনমতকে ভিত্তি করে সমাজের
নেতৃস্থানীয় সৎ মানুষদের সহযোগিতায় বর্তমান পুঁজিবাদী জালিম নেতৃত্ব তথা রাষ্ট্রব্যবস্থাকে
সম্পূর্ণ অপসারণ করে ইসলামী সরকার বা রাষ্ট্রব্যবস্থা (খিলাফত) পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।
আর
এটাই আমাদের পথ।
রাসূল
(সাঃ) আমাদেরকে সুসংবাদ দিয়েছেনঃ
إِنَّهُ
سَيَكُوْنُ فِي آخِرِ هذه الْأُمَّة قَوْم لهُمْ مِثْلُ أَجْرِ أَوَّلِهِمْ ، يَأْمُرُوْنَ
بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ
‘আমার
উম্মতের শেষ দিকে এমন কিছু লোক হবে যারা প্রথম দিককার লোকদের মতো পুরস্কৃত হবে, কেননা
তারা সৎকাজে আদেশ দেবে ও অসৎকাজের নিষেধ করবে...’ [দালায়েলুন নবুওয়্যাহ -
বায়হাকী]
একই
রকম বর্ণনা রয়েছে মুসনাদে আহমদ, ৪র্থ খণ্ড, ৬২ পৃষ্ঠায়ঃ ‘নিশ্চয়ই
আমার উম্মতের মধ্যে একদল লোক প্রথম দিককার লোকদের মতো পুরস্কৃত হবে, যারা অসৎকাজের
নিষেধ করবে।’
হে
আল্লাহ! আমাদেরকে
রাসূল (সাঃ) ও সাহাবীদের অনুসৃত পথের উপর দৃঢ় রেখ যেন আমরা এই জমিনে তোমার খিলাফত রাষ্ট্র
প্রতিষ্ঠা করতে পারি।
No comments:
Post a Comment