4.7.14

এটাই আমার পথঃ অধ্যায় ২ ~ ইসলামভিত্তিক রাজনৈতিক দল করার অপরিহার্যতা

অধ্যায় ~ ইসলামভিত্তিক রাজনৈতিক দল করার অপরিহার্যতা

সিয়াসাত) রাজনীতি (শব্দটি এসেছে আরবী মূল ক্রিয়া সাসা, ইয়াসুসু, সিয়াসাতান থেকে যার অর্থ হচ্ছে কারো বিষয়াদি দেখাশোনা করা। আল মু’জাম আল ওয়াসীত অভিধানে জনগণকে শাসন করা ও নেতৃত্ব দেয়াকে সিয়াসাত বলা হয়েছে। সুতরাং রাজনীতি বা সিয়াসাত বলতে উম্মাহর অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বিষয়াদি দেখাশোনা করাকে বোঝায়। এই কাজটি রাষ্ট্রশক্তি ও উম্মাহ নিজেই করে থাকে। রাষ্ট্রশক্তি রাজনৈতিক কার্যাবলি বাস্তবায়ন করে এবং উম্মাহ সেই বিষয়ে রাষ্ট্রশক্তিকে জবাবদিহি করে। এই রাজনৈতিক কাজটির কথা উল্লেখ করা হয়েছে এই হাদীসেঃ

كَانَتْ بَنُوْ إسْرَائِيْلَ تَسُوْسُهُم الأنْبِياء ...

বনী ইসরাইলের সিয়াসাত (রাজনৈতিক কাজ তথা শাসন) করতেন নবীগণ... [বুখারী]

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর সমগ্র জীবনে সিয়াসাত তথা জনগণকে শাসন করা, নেতৃত্ব দেয়া, জনগণের বিষয়াদি দেখাশোনা করার রাজনৈতিক কাজটি সুস্পষ্টভাবে বাস্তবায়ন করে গিয়েছেন। ইসলাম প্রতিষ্ঠায় রাসূলূল্লাহ (সাঃ)-এর দেখানো পদ্ধতিতে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করা বা অনুরূপ একটি আন্দোলনরত দলের সাথে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা একজন মুসলমানের জন্য একটি আবশ্যিক বিষয়।

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

وَلْتَكُنْ مِّنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى ٱلْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِٱلْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ ٱلْمُنْكَرِ وَأُوْلَـٰئِكَ هُمُ ٱلْمُفْلِحُونَ

তোমাদের মাঝে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা কল্যাণের প্রতি আহ্বান করবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দিবে আর অসৎকাজে নিষেধ করবে এবং এরাই সফলকাম।’ [সূরা আল-ইমরানঃ ১০৪]

এই আয়াতে আল্লাহ (সুব.) মুসলিম উম্মাহর মধ্যে এমন একটি দল প্রতিষ্ঠিত থাকাকে ফরয করে দিয়েছেন যে দলের কাজ হবেঃ

১. কল্যানের দিকে ডাকা
২. সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করা

এই কাজ দুটোর বিস্তারিত ব্যাখ্যাঃ

১. কল্যানের দিকে ডাকাঃ রাসূল (সাঃ) বলেনঃ কল্যান হলো কুরআন ও সুন্নাহতে।’ [তাফসীর ইবনে কাসীর]

র্থাৎ উল্লেখিত দলটি কুর’আন ও সুন্নাহর দিকে আহ্বান করবে। আর কুর’আন-সুন্নাহ বাস্তবায়নের কাজটি তো অবশ্যই রাজনৈতিক - যেরূপ রাজনৈতিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে খোদ রাসূল (সাঃ) ও সাহাবীগন কুর’আন-সুন্নাহ বাস্তবায়ন করেছিলেন।

২. সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধঃ আমল বিল মারূফ ওয়া নাহী আনিল মুনকার এর দায়িত্বটি বাস্তবায়নের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষও রাষ্ট্র। রাষ্ট্রশক্তি ব্যতীত এই দায়িত্বটি পূর্ণভাবে পালন করা সম্ভব নয়। ইমাম কুরতুবী (রহ.) বলেনঃ একমাত্র শাসকই পারে হুদুদ ও রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মা’রূফ কার্যকর করতে।’ ...আল্লাহ বলেনঃ আমি যদি তাদেরকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করি, তবে তারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত আদায় করবে, সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করবে। তাদের কাজের পরিণাম আল্লাহরই হাতে।’ [সূরা হাজ্জঃ ৪১]  [জামিউ আহকামিল কুর’আনঃ ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৭]

এই আয়াত থেকে স্পষ্ট যে, সালাত প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত দেয়া এবং সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করার জন্য পৃথিবীতে ক্ষমতা পেতে হবে অর্থাৎ শাসন কর্তৃত্ব অর্জন করতে হবে।

এই আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে ইমাম কুরতুবী তাই বলেনঃ খিলাফত (ইসলামী রাষ্ট্র) হলো দ্বীনের সেই ভিত্তি যার উপর অন্য সব ভিত্তি দন্ডায়মান।’

তাফসীরবিদ যাহহাক বলেনঃ এই আয়াতে তাদের জন্যই নির্দেশ রয়েছে, যাদেরকে আল্লাহ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন করেন। [তাফসীরে কুরতুবী]

ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অনিবার্যতার কারণে এই আয়াতে বর্ণিত দলটি রাজনৈতিক দল হতে বাধ্য। কেননা কোনো আদর্শিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন বা কোনো কুফর রাষ্ট্রশক্তিকে পরিবর্তন করার আন্দোলন পুরোপুরিই রাজনৈতিক কাজ।

তাছাড়া এদলটি এই দৃষ্টিভঙ্গিতেও রাজনৈতিক দল যে, দলটির কাজ হবে আমর বিল মা’রূফ এবং নাহি আনিল মুনকার করা। একাজের মধ্যে শাসকদেরকে ভালো কাজ করতে বলা এবং মন্দকাজ থেকে বিরত রাখাও অন্তর্ভুক্ত। বরং শাসকদেরকে কাজকর্মের ব্যাপারে ভালো-মন্দের হিসাব-নিকাশের মাধ্যমে জবাবদিহিতার মুখোমুখি করা এবং তাদেরকে উপদেশ দেয়াই সবচেয়ে বড় আমর বিল মা’রূফ এবং নাহি আনিল মুনকার। আর এটিই সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক কাজ। রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ

مَنْ أَصْبَحَ لَا يَهْتَمُّ بِالْمُسْلِمِيْنَ فَلَيْسَ مِنْهُمْ

সকালে জেগে ওঠে যে মুসলিমদের নিয়ে চিন্তিত হয় না, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ [কানজুল উম্মাল]

সুতরাং রাজনীতিতে অংশ নেয়া সকল মুসলিম নারী-পুরুষের ওপর ফরয। সমাজে যখন জুলুম, অনাচার ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে তখন ওই সমাজে বসবাসরত মুসলিমদের জন্য ওই সমাজ পরিবর্তন করার জন্য কাজ করা বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। এ দায়িত্ব পালনে এগিয়ে না আসলে সবাই একসাথে শাস্তিযোগ্য হবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেনঃ

كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِٱلْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ ٱلْمُنْكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِٱللَّهِ

তোমরাই সর্বোত্তম জাতি, মানবজাতির কল্যাণ সাধনের জন্য তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে, তোমরা সৎকাজে আদেশ করবে এবং অসৎকাজে নিষেধ করবে।’ [সূরা আল-ইমরানঃ ১১০]

এ বিষয়ে বহু হাদীসও রয়েছে যাতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করার জন্য।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ

وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ ‏، ‏لَتَأْمُرُنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَلَتَنْهَوُنَّ عَنْ الْمُنْكَرِ أَوْ لَيُوشِكَنَّ اللَّهُ أَنْ يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عِقَابًا مِنْهُ ثُمَّ تَدْعُونَهُ فَلَا يُسْتَجَابُ لَكُمْ

সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার জীবন, তোমাদেরকে অবশ্যই সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজের নিষেধ করতে হবে, না হলে অবশ্যই আল্লাহ নিজের পক্ষ থেকে তোমাদের উপর শাস্তি পাঠাবেন, অতঃপর তোমরা তাঁর কাছে প্রার্থনা করবে, কিন্তু তোমাদের ডাকে সাড়া দেয়া হবে না।’ [তিরমিযি]

তিনি (সাঃ) বলেনঃ

 لَتَأْمُرُنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَلَتَنْهَوُنَّ عَنْ الْمُنْكَرِ ‏وَلَتَحَاضُّنَّ ‏عَلَى الْخَيْرِ أَوْ لَيُسْحِتَنَّكُمْ اللَّهُ جَمِيعًا بِعَذَابٍ أَوْ لَيُؤَمِّرَنَّ عَلَيْكُمْ شِرَارَكُمْ ثُمَّ يَدْعُو خِيَارُكُمْ فَلَا يُسْتَجَابُ لَكُمْ

তোমরা অবশ্যই সৎকাজের আদেশ দেবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং লোকদের কল্যাণময় কাজের জন্য উদ্বুদ্ধ করব। অন্যথায় আল্লাহ কোনো আযাবের মাধ্যমে তোমাদের ধ্বংস করে দেবেন কিংবা তোমাদের মধ্য থেকে খারাপ লোকদেরকে তোমাদের উপর শাসনকর্তা নিযুক্ত করে দেবেন। এসময় তোমাদের মধ্যকার ভালো লোকেরা আল্লাহ কাছে দোয়া করবে, কিন্তু তা কবুল হবে না।’ [মুসনাদে আহমদ]

আবু দাউদে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ

إنَّ النَاسَ إذَا رَأوُا الظَالِمَ فَلَمْ يَأخُذُوا عَلَى يَديهِ أوْشَكَ أنْ يَعُمَّهُمْ اللّهُ بِعِقَابٍ

যারা কোনো অত্যাচার হতে দেখেও অত্যাচারীর হাত ধরে তাকে বিরত না রাখবে, তখন আল্লাহ তাদের সকলকে শাস্তি দিয়ে ছেয়ে ফেলবেন।’

হযরত আবু বকর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছিঃ

إِنَّ النَّاسَ إِذَا رَأَوْا الْمُنْكَرَ لَا يُغَيِّرُونَهُ أَوْشَكَ أَنْ يَعُمَّهُمْ اللَّهُ بِعِقَابِهِ

মানুষ যখন কোনো অসৎকাজ দেখে আর তারা সেটাকে পরিবর্তন করে না, তাহলে আল্লাহ তাদেরকে ব্যাপকভাবে তাঁর আযাবে ছেয়ে ফেলবেন।’ [ইবনে মাজাহ]

আবু দাউদে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ

مَا مِنْ قَوْمٍ يُعْمَلُ فِيهِمْ بِالْمَعَاصِي ثُمَّ يَقْدِرُونَ عَلَى أَنْ يُغَيِّرُوا ثُمَّ لَا يُغَيِّرُوا إِلَّا يُوشِكُ أَنْ يَعُمَّهُمْ اللَّهُ مِنْهُ بِعِقَابٍ

যখন কোনো জাতি পাপাচারে লিপ্ত হয় এবং তা পরিবর্তন করার শক্তি থাকা সত্ত্বেও কেউই তা পরিবর্তন করে না, তখন আল্লাহ গোটা জাতির উপর শাস্তি নাযিল করেন, যা তাদের সকলকে ছেয়ে ফেলে।’

একই রেওয়ায়াতে আরো আছেঃ

مَا مِنْ قَوْمٍ يُعْمَلُ فِيهِمْ بِالْمَعَاصِي هُمْ أَكْثَرُ مِمَّنْ يَعْمَلُهُ

যে জাতির মধ্যে পাপাচার হচ্ছে এবং পাপকারীর চেয়ে পাপ থেকে বিরত লোকের সংখ্যা অনেক বেশি... (তারাও পাপে বাধা না দিলে একই পরিণতি)।’

এমনকি পুরো জাতির মধ্যে কেবলমাত্র একজনও যদি প্রকাশ্যে মুনকার (অসৎকাজ) করে এবং অন্যরা তা প্রতিহত না করে, তাহলে সবাই দুনিয়াতে থাকতেই আল্লাহর শাস্তির মুখোমুখি হবে।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ

مَا مِنْ رَجُلٍ يَكُونُ فِي قَوْمٍ يُعْمَلُ فِيهِمْ بِالْمَعَاصِي يَقْدِرُونَ عَلَى أَنْ يُغَيِّرُوا عَلَيْهِ فَلَا يُغَيِّرُوا إِلَّا أَصَابَهُمْ اللَّهُ بِعَذَابٍ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَمُوتُوا

যে জাতির মধ্যে কোনো এক ব্যক্তি পাপাচার করে আর সে জাতির লোকেরা ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা পরিবর্তন করে না, তখন তাদের মৃত্যুর আগেই আল্লাহর আযাব তাদের উপর পতিত হবে।’ [আবু দাউদ]

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আরো বলেনঃ

إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ لَا يُعَذِّبُ الْعَامَّةَ بِعَمَلِ الْخَاصَّةِ حَتَّى يَرَوْا الْمُنْكَرَ بَيْنَ ظَهْرَانَيْهِمْ وَهُمْ قَادِرُونَ عَلَى أَنْ يُنْكِرُوهُ فَلَا يُنْكِرُوهُ فَإِذَا فَعَلُوا ذَلِكَ عَذَّبَ اللَّهُ الْخَاصَّةَ وَالْعَامَّةَ

নিশ্চয়ই আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল বিশেষ কোনো ব্যক্তির পাপাচারের জন্য জনসাধারণকে শাস্তি দেন না। কিন্তু যখন তারা (জনসাধারণ) তাদের সামনে মুনকার (অসৎকাজ) হতে দেখে এবং তা প্রতিহত করে না, যদিও তাদের তা প্রতিহত করার ক্ষমতা রয়েছে। তারা যদি এরূপ করে তখন আল্লাহ ব্যক্তিবিশেষ ও জনসাধারণ উভয়কেই শাস্তি দেন।’ [আহমদ]

এসব হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে আল্লাহ সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে বাধা প্রদানকে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। হাদীসসমূহ মুসলিমদের বাধ্য করে সর্বদা শাসকদের সৎকাজের আদেশ দিতে এবং অসৎকাজ হতে বাধা প্রদান করতে। কারণ হাদীসসমূহের নির্দেশটি সার্বজনীন বিধায় অন্য সকলের পাশাপাশি শাসকদের জন্যও প্রযোজ্য। তবে শাসকদেরকে সৎকাজের আদেশ এবং অন্যায় হতে বাধাদানের গুরুত্বকে সামনে রেখে শুধুমাত্র শাসকদের জবাবদিহিতার বিষয়ে আলাদা সুস্পষ্ট হাদীস রয়েছে। রাসূলূল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ

أَفْضَلُ الْجِهَادِ كَلِمَةُ حَقٍّ عِنْدَ سُلْطَانٍ جَائِرٍ

অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে সত্য কথা বলা সর্বোত্তম জিহাদ।’ [তিরমিযি]

তিনি (সাঃ) আরো বলেনঃ

إِذَا رَأَيْتُمْ أُمَّتِي تَهَابُ الظَّالِمَ أَنْ تَقُولَ لَهُ إِنَّكَ أَنْتَ ظَالِمٌ فَقَدْ تُوُدِّعَ مِنْهُمْ

যদি তোমরা দেখ যে, আমার উম্মত কোনো জালেমকে একথা বলতে ভয় পাচ্ছে যে, ‘নিশ্চয়ই তুমি একজন জালেম,’ তাহলে সেই উম্মতকে বিদায় (অর্থাৎ এটা উম্মতের জন্য বিদায় বা পতনের সংকেত)।” [আহমদ, তাবারানী, হাকিম, বায়হাকী]

এসব হাদীস শাসকদের বিরুদ্ধে সত্য উচ্চারণ ও তাদের কঠোরভাবে জবাবদিহি করার জন্য মুসলিম জনগণের দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট অর্থবোধক হাদীস।

অতএব, কঠোর সংগ্রাম ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে সেসব শাসকদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া বাধ্যতামূলক, যারা জনগণের অধিকার হরণ করে অথবা দায়িত্ব পালনে অবহেলা করে। রাসূল (সাঃ) নিজেও উপরোক্ত হাদীসে এটাকে সবচেয়ে উত্তম জিহাদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। শাসককে প্রশ্নের মুখোমুখি করা মুসলিমদের জন্য যে বাধ্যতামূলক এটা প্রমাণ করার জন্য এই বক্তব্যই যথেষ্ট। শাসকের অত্যাচার ও জুলুম-নির্যাতনকে পরোয়া না করে মুসলিমদের তার মুখোমুখি হওয়াকে রাসূল (সাঃ) নিজেই নিম্নোক্ত হাদীসের মাধ্যমে বিশেষভাবে উৎসাহিত করেছেন, যাতে একজন মুসলিম সর্বদাই এরূপ কর্তব্য পালনে অনুপ্রাণিত থাকেঃ

سَيِّدُ الشُّهَدَاءِ حَمْزَةُ بن عَبْدِ الْمُطَّلِبِ ورَجُلٌ قَالَ إِلَى إِمَامٍ جَائِرٍ فَأَمَرَهُ وَنَهَاهُ فَقَتَلَهُ

শহীদদের সর্দার হামযা বিন আবদুল মুত্তালিব এবং ওই ব্যক্তিও, যে অত্যাচারী শাসককে (সৎকাজে) আদেশ ও (অসৎকাজে) নিষেধ করার পর (ওই শাসক) তাকে হত্যা করে ফেলে।’ [হাকিম]

কানজুল উম্মাল-এর রেওয়ায়াতে আছেঃ

سَيِّدُ الشُّهَدَاءِ حَمْزَةُ بن عَبْدِ الْمُطَّلِبِ وَرَجُلٌ قَامَ إِلَى إِمَامٍ جَائِرٍ فَأَمَرَهُ وَنَهَاهُ فَقَتَلَهُ

শহীদদের সর্দার হামযা বিন আবদুল মুত্তালিব এবং ওই ব্যক্তিও, যে অত্যাচারী শাসকের সামনে দাঁড়িয়ে তাকে (সৎকাজে) আদেশ ও (অসৎকাজে) নিষেধ করার পর (ওই শাসক) তাকে হত্যা করে ফেলে।’

এথেকে বোঝা যায় যে, অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে মুসলিমদের সর্বদাই কঠোর সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে এবং জীবনের বিনিময়ে হলেও প্রকাশ্যে তাকে জবাবদিহিতার মুখোমুখি করতে হবে।


এই দীর্ঘ আলোচনায় এটা সুস্পষ্ট যে, ইসলামে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধের ব্যাপারটি অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং একাজের পরিধি অনেক ব্যাপক ও শাসকবর্গ বিশেষভাবে এর অন্তর্ভুক্ত। কাজেই ইসলামের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দল করা মুসলিম উম্মাহর উপর ফরয।

No comments:

Post a Comment