শুরুর কথা
রাসুল
হিসাবে দায়িত্ব প্রাপ্ত হবার পর মুহাম্মদ (সাঃ) সর্বপ্রথম আহবান জানালেন তার
সহধর্মিনী খাদিজা (রাঃ) কে এবং তিনি তাঁর উপর বিশ্বাস স্থাপন করলেন। তারপর তিনি
তাঁর চাচাতো ভাই আলী (রাঃ) কে ইসলামের দাওয়াত দেন এবং তিনিও তাঁর উপর বিশ্বাস আনেন।
এরপর তিনি তাঁর ক্রীতদাস যায়েদ (রাঃ) কে আহবান করলে যায়েদও (রাঃ) তাঁর উপর ঈমান
আনেন। তারপর তিনি তাঁর বন্ধু আবু বকর (রাঃ) কে আহবান জানান এবং তিনিও বিশ্বাস
স্থাপন করেন। এরপর তিনি জনসাধারনকে ইসলামের দিকে আহবান করতে থাকেন, এদের মধ্যে কিছু
মানুষ ঈমান আনে আর বাকীরা তা গ্রহন করতে অস্বীকার করে।
আবু
বকর (রাঃ) ইসলাম গ্রহন করার পর তার কাছের মানুষদেরকে তার বিশ্বাসের কথা জানান
এবং তাদের আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর রাসুলের (সাঃ) দিকে আহবান করেন। আবু বকর ছিলেন
তার আপন লোকদের মধ্যে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন। লোকেরা তার সাহচার্য উপভোগ করত এবং বিভিন্ন
বিষয়ে তার সাথে পরামর্শ করত। সমাজে তার এ সমস্ত প্রভাব কাজে লাগিয়ে তিনি উসমান ইবনে
আফফান (রাঃ) কে ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে আসেন। এভাবে পরবর্তীতে যুবাইর ইবন
আল-আওওয়াম (রাঃ), আবদ আল রহমান ইবন আওফ (রাঃ), সা’দ ইবন আবি ওয়াক্কাস (রাঃ), তালহা
ইবন উবাইদুল্লাহ ইসলাম গ্রহন করেন। এদের সকলকে তিনি মুহাম্মদ (সাঃ) এর কাছে
নিয়ে আসেন, তারা সকলে তাদের ঈমান আনার ঘোষনা দেন এবং নামাজ আদায় করেন। এরপর, আমির ইবন
আল-যাররাহ (আবু উবাইদাহ নামে পরিচিত) ইসলাম গ্রহন করেন এবং আবদুল্লাহ ইবন আবদ
আল-আসাদ (আবু সালামাহ নামে পরিচিত) ও তার সাথে আল-আরকাম ইবন আবি আল-আরকাম, উসমান ইবন
মাজ’য়ুন এবং আরও অনেকে ইসলাম গ্রহন করেন। এভাবে একের পর এক বহুসংখ্যক মানুষ ইসলামের
ছায়াতলে চলে আসে যে পর্যন্ত না এ বিষয়টি কুরাইশ সম্প্রদায়ের মাঝে আলোচনার বস্তুতে পরিণত
হয়।
প্রথম
দিকে মুহাম্মদ (সাঃ) বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিতেন। তাদের বলতেন যে, আল্লাহ তা’আলা তাদের
তাঁর ইবাদত করতে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করার জন্য আদেশ দিয়েছেন। এরপর তিনি কুর’আনের নিম্নোক্ত
আয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে মক্কার মানুষকে প্রকাশ্যে ইসলামের দিকে আহবান করতে শুরু করেন,
যেখানে আল্লাহ আদেশ করছেনঃ
“হে বস্ত্রাবৃত! উঠো এবং সতর্ক করো।” [সুরা আল-মুদ্দাছিরঃ
১-২]
পরবর্তীতে
আল্লাহর রাসুল (সাঃ) দ্বীন ইসলামের দলভুক্ত মানুষেদের নিয়ে গোপনে একত্রিত হতেন এবং তাদের
দ্বীন শিক্ষা দিতেন। প্রথমদিকে রাসুল (সাঃ) এর সাহাবীরা কুরাইশদের আড়ালে
মক্কার প্রান্তসীমায় অবস্থিত পাহাড়ে নামাজ আদায় করতেন। যখনই নতুন কেউ ইসলাম গ্রহন করতো,
আল্লাহর রাসুল (সাঃ) তাকে কুরআন শেখানোর জন্য পূর্বে ইসলাম গ্রহনকারী একজনকে পাঠাতেন।
তিনি (সাঃ) ফাতিমা বিনত আল-খাত্তাব ও তার স্বামী সা’ঈদ কে কুরআন শেখানোর কাজে
খাব্বাব ইবনে আল-আরতকে নিযুক্ত করেছিলেন। একদিন যখন তারা দু’জন এভাবে খাব্বাব (রাঃ) এর কাছে
কুরআন শিখছিলেন, তখন সেখানে উমর ইবন আল-খাত্তাব আকষ্মিকভাবে উপস্থিত হন এবং সাথে
সাথে ইসলাম গ্রহন করেন। পরবর্তীতে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) অনুভব করেন এভাবে শিক্ষা দান
যথেষ্ঠ নয়, তাই তিনি আরকাম ইবনে আল আরকামের বাসগৃহকে তাঁর দাওয়াতের কেন্দ্র হিসাবে
মনোনীত করেন এবং এখান থেকেই তিনি মুসলিমদের কুরআন শিক্ষা দিতেন, ইসলাম সম্মন্ধে আলোচনা
করতেন, তাদেরকে কুরআন তিলাওয়াত ও কুরআন নিয়ে চিন্তা করার জন্য উৎসাহ দিতেন। যখন কেউ ইসলাম গ্রহন করতো, আল্লাহর রাসুল (সাঃ) তার সাথে
দার-উল-আরকামে সাক্ষাৎ করতেন। তিন বছর পর্যন্ত তিনি এভাবে মুসলিমদের শিক্ষা দেন, নামাজে
ইমামতি করেন, শেষ রাত্রে তাদের সাথে তাহাজ্জুদ আদায় করেন, তাদের চিন্তা চেতনাকে উদ্দীপ্ত
করেন, নামাজ এবং কুরআন তিলওয়াতের মাধ্যমে তাদের ঈমানকে আরও মজবুত করেন। কুরআনের আয়াত
ও আল্লাহর সৃষ্টিকে গভীরভাবে পর্যালোচনার মাধ্যমে নও মুসলিমদের চিন্তাধারাকে আলোকিত
করেন। এছাড়াও তিনি তাদেরকে আল্লাহর কাছে নিজেকে পরিপূর্ণভাবে সর্মপনের মাধ্যমে সকল
কষ্ট ও বাধাঁ অতিক্রমের উপায় শেখান।
মুহাম্মদ
(সাঃ) তাঁর দলভুক্ত মুসলিমদের সাথে এভাবে দার-উল-আরকামে সময় অতিবাহিত করতে থাকেন যে
পর্যন্ত না আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল করেনঃ
“অতএব তোমাকে যে বিষয়ে আদেশ করা হয়েছে, তা প্রকাশ্যে ঘোষনা কর এবং মুশরিকদের
থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও।”
[সুরা আল-হিজরঃ ৯৪]
No comments:
Post a Comment