সকল প্রশংসা জগতসমূহের অধিপতি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার প্রতি এবং সালাম পেশ করছি রাহমাতাল্লীল আলামীন ও সর্বশেষ নবী ও রাসূল মুহম্মদ (সাঃ), তাঁর পরিবার ও তাঁর সাহাবীদের প্রতি এবং যারা বিচার দিবসের আগ পর্যন্ত তাঁকে ইহসানের সাথে অনুসরণ করবেন তাদের প্রতি। অতঃপর-

অতএব, এই বইয়ে আমরা উক্ত বিষয়ে আলোকপাত করব। আমরা বলতে চাচ্ছি না এটা পূর্ণাঙ্গ ও ব্যাপক। তবে এটা অবশ্যই এ বিষয়টিকে প্রবৃত্তির অনুসরণ, যথেচ্ছাচার, অতিরঞ্জিত চিন্তাচেতনা, কুফরের অন্ধ অনুকরণ ইত্যাদি থেকে ইসলামী
শরী’য়াহ-র মূল ভিত্তির দিকে ফিরিয়ে নেয়ার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

বইটিতে মূলত ‘খিলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দাওয়াতের পদ্ধতি’ নিয়েই আলোচনা করা হবে। কারণ আজকের দিনে দাওয়াত বহন করবার ক্ষেত্রে এটাই দাওয়াতের মেরুদন্ড হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। খিলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থা এখন আর অস্তিত্বশীল নয়- এই বাস্তবতায় আজকের দিনে যখন কোন ইসলামী আহ্বানের শীর্ষে খিলাফত রাষ্ট্র পুণঃপ্রতিষ্ঠার আহ্বান না থাকে অথবা এটিকে মনোযোগের প্রধান কেন্দ্রে পরিণত না করা হয়,
তখন বুঝতে হবে সে আহ্বান আংশিক অথবা বিচ্যুত।

১. ইসলামী আক্বীদার স্পষ্টতা ও বিশুদ্ধতা
-যা ইসলামের অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
২. ইসলামিক আক্বীদার মধ্যে যন্ন (অনুমাননির্ভরতা) বা ন্যূনতম যন্ন এর সুযোগ নেই বরং তা হতে হবে ক্বাতীঈ (সুনির্দিষ্ট ও সিদ্ধান্তগ্রহণকারী)। এক্ষেত্রে ত্বাকলীদ বা অন্ধ অনুকরণের সুযোগ নেই। যদি তা না করা হয় তাহলে মুসলিমগন কুসংস্কারকে গ্রহণ করবে ও প্রবঞ্চণার মধ্যে পতিত হবে।
৩. আক্বীদার সাথে সর্ম্পকযুক্ত চিন্তার (ভিত্তিসমূহের শাখা) ক্ষেত্রে যৎসামান্য পরিমাণে যন্ন বা অনুমাননির্ভরতা এবং ত্বাকলীদ বা অনুকরণ অনুমোদনযোগ্য। শরী’য়াহ এর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
৪. শরী’য়াহ-র আইন-কানুনসমূহ সরাসরি শরী’য়াহ-র দলিল এর উপর ভিত্তি করে গ্রহন করতে হবে অর্থাৎ কুর’আন, সুন্নাহ, সাহাবাগনের ইজমা (ঐকমত্য), শরী’য়াহ-র বর্ণণা থেকে আসা শর’ঈ ইল্লাত (ঐশী কারন) এর উপর ভিত্তি করে ক্বিয়াস। শরী’য়ার দলিল থেকে কেবলমাত্র মুজতাহিদ হুকুম বের করে নিয়ে আসেন। আর মুক্বাল্লিদকে (অনুসরণকারী) সুনিশ্চিত করতে হবে যে, তিনি যে মুজতাহিদের অনুসরণ করেন,
তার বক্তব্য তিনি বুঝতে পারছেন।
৫. যদি বাধ্যবাধকতার সংখ্যা অনেক বেশী হয়ে যায় এবং সবগুলো পালন করা মুসলমানের জন্য কঠিন হয়ে যায় বা তিনি অপারগ হন, তাহলে তাকে অবশ্যই সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ বাধ্যবাধকতাটিকে প্রাধান্য দিতে হবে। (এটাও শরী’য়াহ দলিলের ভিত্তিতে হতে হবে, ব্যক্তিগত খেয়ালখুশী বা পছন্দের ভিত্তিতে নয়)

আর যখন মুসলিমগন অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে থাকবে, অর্থাৎ খিলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থা নেই, তখন খিলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থা পুণঃপ্রতিষ্ঠাকে সামনে রেখে ইসলামী দাওয়াতের কাজ করতে হবে। মুসলিমদের সংস্কার সাধনের জন্য তখন মারুফের আদেশ-মুনকারের নিষেধে এবং অন্যদিকে ইসলাম গ্রহণের জন্য অমুসলিমদের আহ্বানের কাজটি তখন সঙ্কীর্ণ পরিসরে
চলবে। কারণ যখন ইসলামী শরী’য়াহ বাস্তবায়নের জন্য মুসলিম ভূমিসমূহতে কোন রাষ্ট্র বা কর্তৃত্ব না থাকে তখন সেটি দারুল কুফর হয়ে যায়। তখন মুনকার সংঘটনের বিষয়টি একটি রীতিতে পরিণত হয় এবং সেকারণে সংস্কার সাধনের আংশিক কাজটি অকার্যকর ও অপর্যাপ্ত হয়ে যায়। আমূল পরিবর্তনের কর্মকান্ড তখন শরী’য়াহগত বাধ্যবাধকতা হয়ে যায়
-যা কুফর ব্যবস্থার মূলোৎপাটন করে ইসলামী ব্যবস্থাকে বাস্তবায়ন করবে। [খিলাফত অনুপস্থিত থাকা অবস্থায়] মুসলিম ভূমির বাইরে অমুসলিমদের দাওয়াহ
করাকে বুঝায় তাদের ইসলাম গ্রহণের জন্য দাওয়াত দেয়া। অনৈসলামী চিন্তাকে চ্যালেঞ্জ করা এবং মুসলিম ভূমির বাইরে অবস্থানরত মুসলিমদের প্রচেষ্টাসমূহকে একীভূতকরণের দ্বারা মুসলিম ভূমিতে ইসলামী
খিলাফত প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করার মাধ্যমে এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

১. খিলাফতের জন্য কাজ করা এখন ফরযে আইন (প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ফরয)। এর জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ ও কর্মতৎপরতা সৃষ্টি করা একান্ত কর্তব্য।
২. এ কাজটি দলগতভাবে হতে হবে এবং ব্যক্তিগতভাবে করবার কোন সুযোগ নেই।
৩. এই দলের একজন আমীর থাকবেন যিনি শরী’য়াহ প্রদত্ত ক্ষমতায় বলীয়ান - যার আওতার মধ্যে তাকে মান্য করা হবে।
৪. এই দলে পুরুষ এবং নারী উভয়ই থাকবে, কেননা দাওয়াত বহন করার ব্যাপারে উভয়ই দায়িত্বশীল।
৫. এই দলের সদস্যদের বন্ধনের ভিত্তি হবে ইসলামী আক্বীদাহ
ও চিন্তা।
৬. দলটিকে তার কর্মকান্ডের জন্য অবশ্যই ইসলামী চিন্তা, নিয়ম কানুন ও মতামতকে গ্রহণ করবে এবং তাদের আনুগত্য থাকবে আদর্শের প্রতি, কোন ব্যক্তিবিশেষের প্রতি নয়।
৭. দলটি অবশ্যই রাজনৈতিক হবে, কারণ এর কাজ হল রাজনৈতিক
-যা খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য ক্ষমতায় যাবে।
৮. দলটির কাজ হবে বুদ্ধিবৃত্তিক; সহিংস (violent) কোন কর্মকান্ডের সাথে এর সম্পৃক্ততা থাকবে না। কারণ ইসলামের ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে জনমত তৈরি করে জনগনের সহায়তায় ক্ষমতায় আসাই এ দলের কাজ।
৯. বর্তমান কুফর শাসনব্যবস্থার সাথে কোনরকম ক্ষমতার অংশীদার হওয়া এ দলের জন্য নিষিদ্ধ।
১০. বর্তমান কুফর শাসনব্যবস্থার উপর যে কোন ধরনের নির্ভরশীলতা এ দলের জন্য নিষিদ্ধ। কুফর ব্যবস্থা থেকে কোন ধরনের অর্থনৈতিক সাহায্য বা নির্ভরশীলতা অবশ্যই বর্জনীয়।

১. বাস্তব মূলনীতির (practical
principle) অনুসরণ -দাওয়াতের কাজ অন্তঃসারশূন্য হবে না, বরং সুচিন্তিত হবে। আর এই চিন্তাও কেবলমাত্র অনুমাননির্ভর হবে না, বরং তা আসবে বাস্তব উপলদ্ধি থেকে। এই চিন্তার সাথে কাজ যুক্ত করে একটি লক্ষ্যকে সামনে রেখে অগ্রসর হতে হবে। এই লক্ষ্য, কর্মকান্ড ও চিন্তা সবই ইসলাম থেকে উৎসারিত হতে হবে। আর চূড়ান্ত লক্ষ্য হল ইসলামিক আক্বীদাহ-র ভিত্তিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি। এটা দাওয়াত বহনকারীকে ঈমানের পরিবেশে রাখে, তাকে উদ্দীপনা দেয় এবং নিয়ন্ত্রনে রাখে।
২. পদ্ধতি ও উপকরণের পার্থক্য সুস্পষ্ট হতে হবে। ত্বরিকা বা পদ্ধতি হল শরী’য়াহ-র আহকাম -যা ক্বিয়ামতের দিন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট। ঊসলুব বা উপকরণ হল মুবাহ
-যা পরিবেশ ও পরিস্থিতি অনুসারে দাওয়াত বহনকারী গ্রহণ করতে পারে।
৩. আহকাম শরী’য়াহ-র মতই রাজনৈতিক বাস্তবতার জ্ঞান অপরিহার্য। এর কারণ হল হুকুম শরী’য়াহ প্রয়োগ করতে হলে হুকুম শরী’য়াহ ও এর বাস্তবতা বা মানাত (যে বাস্তবতার জন্য হুকুমটি এসেছে) সর্ম্পকে জ্ঞান থাকা দরকার। কেউ যদি শরী’য়াহ-র হুকুম জানে কিন্তু মানাত না জানে, তাহলে সে তা প্রয়োগে ব্যর্থ হবে এবং আমরা যদি তা বাস্তবায়ন করতে যাই, তবে আমরা ভুল করে ফেলব কারণ আমরা এ হুকুমের বাস্তবতা হতে কোনো পৃথক বাস্তবতায় তা বাস্তবায়ন করে ফেলব। যারা বর্তমান ব্যবস্থার মূলোৎপাটন করে ক্ষমতা গ্রহণ করতে চায় তাদেরকে অবশ্যই কেবলমাত্র আভ্যন্তরীণ নয়, আঞ্চলিক ও আর্ন্তজাতিক রাজনৈতিক বাস্তবতার সম্পূর্ণ জ্ঞান রাখতে হবে।
৪. কেউ কেউ ভাবতে পারেন, খিলাফত প্রতিষ্ঠা ও ক্ষমতা গ্রহণের জন্য কেবলমাত্র ক্ষমতাধর ও কর্তৃত্বশীল ব্যক্তিদের মাধ্যমে প্রচেষ্টা চালালেই হবে। কিন্তু এ ধারণা সঠিক নয়। বরং প্রথমে সাধারণ জনগনের কাছে দাওয়াত নিয়ে যেতে হবে। দাওয়াত যখন চিন্তা বিকাশের স্তর থেকে গনসংযোগের পর্যায়ে যাবে এবং সফলভাবে জনগনের সাথে সংযোগ স্থাপনে সমর্থ হবে ও সাধারণ সচেতনতা থেকে ইসলামের পক্ষে জনমত তৈরি হবে তখন দলটি ক্ষমতাধর ও কর্তৃত্বশীল লোকদের কাছে নুসরাহ চাইবে।
৫. শরী’য়াহ একাধিক কুতলাহ বা দল অনুমোদন করে। তবে শর্ত হল তারা অবশ্যই ইসলামী আক্বীদাহ
ও শরী’য়াহ-র ভিত্তিতে গঠিত হবে।
৬. যদি একের অধিক রাজনৈতিক দলের উপস্থিতি থেকে থাকে,
তবে তাদের প্রত্যেককেই শরী’য়াহ হুকুমের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে, যেন তাদের মধ্যকার মতপার্থক্যগুলো আদাব আল ইখতিলাফ বা মতপার্থক্যের নিয়মানুযায়ীই হয়ে থাকে। কোন বিষয়ে মতপার্থক্য সৃষ্টি হলেই একজন মুসলিম অপর মুসলিমকে কুফর বা সীমালঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত করবে
-এ বিষয়টি অনুমোদিত নয়। কোন মতামতের পক্ষে দূর্বল বা শক্তিশালী দলিল বা দলিলের সাথে সাদৃশ্যতা (সুবহাত আদ দলিল) থাকলে এটি একটি আইনসঙ্গত মতামত। এ ধরনের মতামত অবলম্বনকারীদের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করা যাবে না। দূর্বল দলিল বা দলিলের সাদৃশ্যতার ক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি যে, আপনার মতামত ভুল বা দূর্বল এবং তার সাথে উত্তম নসীহত সহকারে প্রামাণ্য দলিলের ভিত্তিতে আলোচনা করতে পারি। যদি কোন মতামতের শরী’য়াহ
ভিত্তিক
দলিল না থাকে অথবা সাদৃশ্য না থাকে তাহলে সে মতামতটি অনৈসলামিক (কুফরী মতামত) হবে। সেক্ষেত্রে এই মতামতের বিরুদ্ধাচরণ করা ছাড়া আর কোন গত্যন্তর থাকবে না এবং এ মতাবলম্বীদের এ ব্যাপারে সাবধান করে দেয়া উচিত (যদিও সবসময় কুফরী মতামত অবলম্বনকারীরা কাফের নয়)।
৭. যেসব শাসক ইসলামী শরী’য়াহকে পরিত্যাগ করে এবং চাপ প্রয়োগ না করা সত্ত্বেও অন্য আইন দিয়ে শাসন করে, তাদের অধিকাংশই কাফির
-যদিও তারা সালাত আদায় করে, রোজা পালন করে, হজ্জব্রত পালন করে এবং মুসলিম বলে দাবি করে। এর কারণ হচ্ছে তারা ইসলামী
আইন না নিয়ে কুফরী আইনকে গ্রহণ করেছে। যদি তারা বিশ্বাস করে যে ইসলামী শরী’য়াহ হল সর্বশ্রেষ্ঠ আইন এবং তারা সাময়িকভাবে খেয়ালের বশবর্তী হয়ে তা পরিত্যাগ করে তবে সে জালিম হবে, কিন্তু কাফের হবে না। সে কারণে একজন দাওয়াত বহনকারী কখনোই এ ধরনের শাসককে মেনে নেয়ার ঘোষণা দিতে পারেন না, সমর্থন ব্যক্ত করতে পারবেন না, এমনকি তার ব্যাপারে নীরবতা পালনও করতে পারবে না। কারণ এ ব্যাপারে যে প্রসিদ্ধ হাদীসটি রয়েছে, তা হলঃ
“তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি অন্যায় কাজ হতে দেখলে সে যেন তার হাত দ্বারা তা প্রতিহত করে। তার এই সামর্থ্য না থাকলে সে যেন তার মুখ দ্বারা তা প্রতিহত করে। তার এই সামর্থ্যও না থাকলে সে যেন তার অন্তর দ্বারা তা প্রতিহত করে (ঘৃণার মাধ্যমে), আর এটা হলো দূর্বলতম ঈমান।” (মুসলিম, তিরমিযী)

১. রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কাফেরদেরকে ইসলামে প্রবেশ করবার জন্য আহ্বান জানাতেন। আর আমরা এখন অধিকাংশ
ক্ষেত্রে
মুসলিমদের
ইসলাম গ্রহণের জন্য আহ্বান জানাই।
২. রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এমন এক সময়ে দাওয়াতের দায়িত্ব পালন করেছিলেন যখন পুরো শরী’য়াহ অবতীর্ণ হয়নি। এখন আমাদের সামনে সম্পূর্ণ শরী’য়াহ রয়েছে। তার মানে রাসূল (সাঃ) মক্কায় অনেক হুকুম অবতীর্ণ না হওয়ার কারণে পালন করতে পারেননি, কিন্তু আমাদেরকে এগুলো মেনে চলতে হবে। আবার কিছু আইন তিনি মেনে চলেছেন যেগুলো পরবর্তীতে রহিত হয়ে গেছে। সে কারণে সেই রহিত আইনসমূহ আমাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য নয়। যেমনঃ
মক্কায় জিহাদ আইনসিদ্ধ ছিল না, কিন্তু এটা এখন বৈধ (রক্ষণাত্নক জিহাদ আজকে আমাদের উপর ফরয এবং এটা রাষ্ট্র না থাকলেও করা যাবে। কেননা এই ধরনের জিহাদের সাথে রাষ্ট্র বা খিলাফত থাকার বিষয়টি বিজড়িত নয়)। মক্কায় কেবলমাত্র রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর দাওয়াতের কাজ করা ফরয ছিল, কিন্তু সাহাবাদের জন্য এটা মানদুব ছিল, যেহেতু তখন তারা তাঁর প্রতি কেবল নারীদের বাই’য়াতের অনুরূপ বাইয়াতে আবদ্ধ ছিলেন। এ অবস্থা চলতে থাকে যতদিন না দ্বিতীয় আকাবার শপথে আওস ও খাযরায গোত্র বাই’য়াত প্রদান করে। এরপর থেকে শুধুমাত্র রাসূলই (সাঃ) নয়, বরং সাহাবীদের উপরও দাওয়াতের কাজ করা ফরয হয়ে যায়। আর যা রহিত হয়েছে তা হল মক্কা বিজয়ের পর মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করবার ফরযিয়াত।
৩. কাজের প্রকারভেদের দিক থেকে মক্কার হুকুমসমূহ অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যক্তির সাথে সর্ম্পকযুক্ত ছিল এবং মদীনার হুকুমসমূহ শাসকের (খলিফা) দায়িত্বের সাথে সর্ম্পকযুক্ত ছিল। কিছু কিছু নির্দেশ আছে যা কেবলমাত্র শাসকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, ব্যক্তির বা দলের ক্ষেত্রে নয়; যেমনঃ
হুদুদ বাস্তবায়ন, জিহাদ ঘোষণা করা এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পাদন করা। আবার কিছু কাজ আছে যা ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, ব্যক্তি দারুল ইসলাম বা দারুল কুফর যেখানেই থাকুক, যেমনঃ
ইবাদত (উপাসনা), আখলাক (নৈতিকতা), মু’তুয়ামাত (খাবার), মালবুসাত (পোশাক পরিচ্ছদ) এবং মু’আমালাত (লেনদেন)। আবার কিছু হুকুম রয়েছে যা ব্যক্তি ও শাসক উভয়ই সম্পাদন করে থাকে, যেমনঃ
মসজিদ নির্মাণ করা, সৎ কাজের আদেশ প্রদান করা, অসৎ কাজে নিষেধ করা ও দলিলের ভিত্তিতে দাওয়াতী কাজ করা।


১. অনেকে নিম্নের আয়াতটিকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে থাকেঃ
‘হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদের চিন্তা কর। তোমরা যখন সৎপথে রয়েছ, তখন কেউ পথভ্রান্ত হলে তাতে তোমাদের কোন ক্ষতি নাই। তোমাদের সবাইকে আল্লাহর
কাছে ফিরে যেতে হবে। তখন তিনি তোমাদেরকে বলে দেবেন, যা কিছু তোমরা করতে।’ (সূরা আল-মায়িদাহঃ ১০৫)
সুতরাং এই আয়াত থেকে অনেকে এ সিদ্ধান্তে পৌছে যে, মুসলিমগন কেবলমাত্র তার এবং তার পরিবারের ব্যাপারে দায়িত্বশীল ও তাকে অন্য মুসলিমদের কাছে দাওয়াত বহন না করলেও চলবে।
২. নিম্নের হাদীসটিকেও অনেকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে থাকেঃ
‘এটা ঠিক নয় যে, একজন মু’মিন নিজেকে অপমানিত হওয়ার মত পরিস্থিতিতে ফেলে দেয় এবং এমন দূর্ভোগের মধ্যে নিজেকে ঠেলে দেয়
-যা বহনে সে অক্ষম।’
এ হাদীস থেকে অনেকে এ সিদ্ধান্তে পৌছে যে, এমন কোন কাজ করা যাবে না যা তাকে কারাভোগ, কর্মস্থল থেকে পদচ্যুতি এবং অত্যাচারী শাসকের রোষানলে পড়তে হয়। সেক্ষেত্রে যদি তাকে দাওয়াতী কাজ থেকে বিরত থেকে অত্যাচারী শাসককে মেনে নিতে হয় তারপরেও।
৩. অনেকে হুযায়ফা বিন ইয়ামান (রাঃ) বর্ণিত রাসূল (সাঃ) হাদীসকে ভুল বুঝে থাকে-
‘আমি বললামঃ যদি মুসলিমদের কোন জামায়াত বা ইমাম না থাকে তাহলে কী হবে? তখন তিনি (সাঃ) বললেনঃ ‘অতঃপর তুমি এসমস্ত দলগুলিকে পরিত্যাগ করবে, যদিও বা তোমাকে কোন গাছের গুড়ি কামড়ে থাকতে হয় যতক্ষন না তোমার মৃত্যু এসে যায়।”
লোকেরা এটা থেকে ধারণা করে যে, যখন মুসলিমদের খলিফা থাকবে না তখন মুসলিমদের জন্য খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করা ফরয নয়। বরং এ অবস্থায় মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কোন ব্যক্তি নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা করে ফেলবে।
৪. আবার কেউ কেউ নিচের বিখ্যাত হাদীসকে ভুল বুঝে থাকেঃ
‘তোমাদের কাছে এমন একটি দিন বা বছর আসবে না, যা তোমাদের রবের সাথে সাক্ষাতের পূর্ব পর্যন্ত আরও বেশী মন্দ হতে থাকবে না।’ সুতরাং, এটা সেইসব লোকদের নিরাশ, হতাশ ও কর্মবিমুখ করে।
৫. আবার অনেকে বলেন যে, পরিবর্তনের দায়িত্ব ইমাম মাহদীর এবং এর জন্য আমরা দায়িত্বশীল নই। ফলে তারা এ গুরুত্বপূর্ণ দাযিত্ব থেকে নিষ্ক্রিয় থাকে।

সালাম ও দরুদ পেশ করছি নবী মুহম্মদ (সাঃ), তাঁর পরিবারবর্গ, শেষ দিবসের পূর্ব পর্যন্ত আগত তাঁর অনুসারীদের প্রতি এবং সকল প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার।
No comments:
Post a Comment