2.6.14

অধ্যায় ১ ~ শরী’আহ-র আনুগত্যে দ্রুত অগ্রসর হওয়া

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেনঃ

“এবং তোমরা স্বীয় প্রতিপালকের ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে দ্রুতবেগে ধাবিত হও- যার প্রসারতা নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সদৃশ, যা নির্মিত হয়েছে মুত্তাকীদের জন্য।” [সূরা আল-ইমরানঃ ১৩৩]

তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বলেনঃ

“মুমিনদের বক্তব্য কেবল এ কথাই যখন তাদের মধ্যে ফয়সালা করার জন্যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে আহবান করা হয়, তখন তারা বলেঃ আমরা শুনলাম ও আদেশ মান্য করলাম। তারাই সফলকাম। যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে ও তাঁর শাস্তি থেকে বেঁচে থাকে তারাই কৃতকার্য।” [সূরা আন-নূরঃ ৫১-৫২]

তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বলেনঃ

“আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন ক্ষমতা নেই, যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়।” [সূরা আল-আহযাবঃ ৩৬]

তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বলেনঃ

“কিন্তু না, আপনার রবের শপথ, তারা ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ মু’মিন হতে পারবেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা তাদের যাবতীয় মতবিরোধের ফয়সালায় আপনাকে বিচারক হিসাবে মেনে নেয় এবং কোনরূপ সর্ঙ্কীর্ণতা ও দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়াই সন্তুষ্ট চিত্তে আপনার সিদ্ধান্ত মেনে নেয়।” [সূরা আন-নিসাঃ ৬৫]

তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বলেনঃ

“মুমিনগণ, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোরস্বভাব সম্পন্ন ফেরেশতাগণ। তারা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং যা করতে আদেশ করা হয়, তাই করে।” [সূরা আত-তাহরীমঃ ৬]

তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বলেনঃ

“এরপর যদি আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে হিদায়েত আসে, তখন যে আমার বর্ণিত পথ অনুসরণ করবে, সে পথভ্রষ্ট হবে না এবং কষ্টে পতিত হবে ন এবং যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কিয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব। সে বলবঃ হে আমার পালনকর্তা আমাকে কেন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করলেন? আমি তো চক্ষুমান ছিলাম। আল্লাহ বলবেনঃ এমনিভাবে তোমার কাছে আমার আয়াতসমূহ এসেছিল, অতঃপর তুমি সেগুলো ভুলে গিয়েছিলে। তেমনিভাবে আজ তোমাকে ভুলে যাব।” [সূরা ত্বাহাঃ ১২৩-১২৬]

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ

“ফিৎনা-ফাসাদ ও বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ার পূর্বেই তোমরা সৎকাজে আত্ননিয়োগ করো। এ বিপর্যয় তোমাদেরকে অন্ধকার রাতের মতো গ্রাস করে নেবে। কোন ব্যক্তির ভোর হবে মু’মিন অবস্থায় আর সন্ধ্যা হবে কাফির অবস্থায়। আর তার সন্ধ্যা হবে মু’মিন অবস্থায় সকাল হবে কাফির অবস্থায়। মানুষ দুনিয়ার সামান্যতম স্বার্থের বিনিময়ে নিজের দ্বীনকে বিকিয়ে দিবে”। [সহীহ মুসলিমঃ কিতাবুল ঈমান, ২১৩]

রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সময় ও তৎপরবর্তী সময়ের মুসলিমগণ আল্লাহর ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে প্রচন্ড গতিতে ছুটে যেতেন। উম্মাহর মধ্যে এখনও এমন লোক রয়েছে যারা আল্লাহর আহ্বানে সাড়া দিচ্ছেন এবং তাঁর সন্তুষ্টির জন্য নিজেদের বিলিয়ে দিচ্ছেন।

জাবির বর্নিত মুত্তাফিকুন আলাইহি-এর একটি হাদীসে এসেছে যেঃ

ওহুদের দিন এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলোঃ “আজ যদি আমি নিহত হই, তাহলে আমার অবস্থান কোথায় হবে?” উত্তরে তিনি (সাঃ) বললেনঃ “জান্নাত। অতঃপর ঐ ব্যক্তি তাঁর হাতের সমস্ত খেজুর ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লো এবং ততক্ষন পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে গেলো যতক্ষণ না তিনি শহীদ হন।’’ [মুত্তাফিকুন আলাইহি]

মুসলিম উল্লেখিত হাদীসে আনাস (রা.) বর্ণনা করেন যেঃ

“রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এবং সাহাবীগণ, মুশরিকদের আগমনের পূর্বেই বদর প্রান্তরে পৌঁছান। যখন মুশরিকরা উপস্থিত হলো তখন তিনি (সাঃ) সাহাবীদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ চলো এমন এক জান্নাতের দিকে ছুটে যাই যার প্রশস্ততা আসমান ও জমীন পর্যন্ত বিস্তৃত। ‘উমায়ের বিন আল হাম্মাম আল আনসারী অবাক বিস্ময়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল, এমন এক জান্নাত যার প্রশস্ততা আসমান ও জমীন পর্যন্ত বিস্তৃত? তিনি (সাঃ) বললেনঃ হ্যাঁ। উমায়ের প্রতিক্রিয়া জানালোঃ আহ, কী চমৎকার! রাসূল (সাঃ) তাকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ কোন জিনিস তোমাকে এরূপ মন্তব্যে উদ্ধুদ্ধ করলো? জবাবে সে বললোঃ হে আল্লাহর রাসূল, আল্লাহর কসম, আমি ঐ অধিবাসীদের একজন হবো, এই প্রত্যাশা ছাড়া অন্যকোনো প্রত্যাশা থেকে আমি এ মন্তব্য করিনি। অতঃপর রাসূল (সাঃ) বললেনঃ নিশ্চয়ই তুমি সেই বাসিন্দাদের একজন। তখন উমায়ের তার থলে হতে কিছু খেজুর বের করে সেগুলো খাওয়া শুরু করলো এবং মনে মনে চিন্তা করতে লাগলো যে, যদি আমি এই খেজুরগুলো শেষ করার অপেক্ষায় থাকি তাহলে তা হবে সময়কে দীর্ঘায়িত করা। অতঃপর তিনি তার হাতের অবশিষ্ট খেজুরগুলোকে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন এবং শহীদ হওয়া পর্যন্ত কাফিরদের সাথে যুদ্ধে করতে থাকেন।”

আনাস (রা.) বর্ণিত মুত্তাফিকুন আলাইহির আরেকটি হাদীসে এসেছেঃ

“আমার চাচা আনাস বিন আন নদর বদরের যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি বলতেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! মুশরিকদের বিরুদ্ধে আপনার প্রথম যুদ্ধে আমি অনুপস্থিত ছিলাম। যদি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাকে মুশরিকদের বিরুদ্ধে একটি যুদ্ধে অংশগ্রহনের সুযোগ প্রদান করতেন, তবে তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) প্রত্যক্ষ করতেন, কত সাহসীকতার সহিত আমি যুদ্ধে অবতীর্ণ হই।” অতঃপর যখন ওহুদের ময়দান হতে মুসলিমগণ পৃষ্ঠ প্রদর্শন করলো এবং পালাচ্ছিল, তখন তিনি (রা.) বললেনঃ “হে আল্লাহ, এরা (সাহাবীগণ) আজ যা করছে, তা হতে আমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং এই মুশরিকরা যা করছে তাকে আমি তীব্র ভাষায় ধিক্কার জানাই।” অতঃপর তিনি যখন ওহুদের ময়দানের দিকে অগ্রসর হতে লাগলেন, তখন তাঁর সাথে সাদ বিন মু’য়াজ (রা.) সাক্ষাৎ হলো। তিনি (নদর) তাকে আহ্বান করে বললেনঃ “হে সাদ বিন মু’য়াজ! জান্নাত। আন-নদরের রবের কসম! ওহুদের ময়দান হতে আমি তার সুভাস পাচ্ছি।” অতঃপর সা’দ বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল! আনাস সেই দিন যে দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে আমি তা পারিনি। আমরা তার সমস্ত শরীরে তলোয়ারী, বর্শা ও তীরের আঘাতজনিত আশিটিরও অধিক ক্ষতচিহ্ন দেখতে পাই। আমরা তাকে মৃত অবস্থায় পাই। মুশরিকরা তার সমস্ত শরীরকে এমন নৃশংসভাবে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করেছিল যে, শেষ পর্যন্ত তার বোন আঙুল দেখে তাঁকে সনাক্ত করতে সমর্থ্য হয়।” আনাস (রা.) বলেনঃ “আমরা সবাই ভাবতাম নিম্নোক্ত আয়াতটি হয়তো তাকে (আন-নদর) বা তার মত কাউকে উদ্দেশ্য করে নাযিল হয়েছেঃ ‘মু’মিনদের মধ্যে কতক ব্যক্তি রয়েছেন যারা আল্লাহর নিকট তাদের কৃত ওয়াদা পূর্ণ করেছেন।’ [সূরা আল-আহযাবঃ ২৩]”

আবু সারু’আহ (রা.)-এর বরাত দিয়ে আল-বুখারী বর্ণনা করেন যেঃ

“আমি মদীনাতে নবী (সাঃ)-এর ইমামতির পেছনে সালাতুল আছর আদায় করেছিলাম। তিনি (সাঃ) সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করা মাত্রই দ্রুততার সাথে উঠে দাড়ালেন এবং সকলের মাঝখান দিয়ে তাঁর কোন এক স্ত্রীর বাসস্থান অভিমূখে ছুটে গেলেন। তাঁর গতি সবাইকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে তুললো। অতঃপর রাসূল (সাঃ) ফিরে আসলেন এবং তাঁর তৎপরতায় সবাইকে বিস্মিত পেয়ে বললেনঃ “আমার মনে পড়লো একটি স্বর্ণের টুকরা বাড়িতে রয়ে গেছে এবং আমি চাই না এটি আল্লাহর ইবাদতের সময় আমার মনোযোগ সেদিকে নিয়ে যাক, সেকারণে সেটিকে দান করার নির্দেশ দিয়ে এলাম”।”

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে যেঃ

“সাদাকাহ-র এক টুকরো স্বর্ণ বাড়িতে রয়ে গেছে, আমি তা ফেলে রাখাকে অপছন্দ করি।” এ থেকে বুঝা যায়, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা মুসলিমদের উপর যা বাধ্যতামূলক করেছেন তা বাস্তবায়ন করার জন্য কতটা তৎপর হওয়া উচিত।

আল-বুখারী আল-বার্‌রা’ এর বরাত দিয়ে উল্লেখ করেন যেঃ

“রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন মদীনাতে আসলেন তখন তিনি ষোল বা সতের মাস বায়তুল মাকদিসের দিকে ফিরে নামায আদায় করেন। তিনি (সাঃ) কাবা ঘরকে কিবলা বানাতে চাচ্ছিলেন। অতঃপর, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা নিম্নোক্ত আয়াতটি নাযিল করেনঃ ‘নিশ্চয়ই আমি আপনাকে বার বার আকাশের দিকে তাকাতে দেখি। অতএব, অবশ্যই আমি আপনাকে সে কেবলার দিকেই ঘুরিয়ে দেব যাকে আপনি পছন্দ করেন।’ [সূরা আল-বাক্বারাহঃ ১৪৪]। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন কাবার দিকে মুখ করে আছরের নামায আদায় করছিলেন তখন এক ব্যক্তি তাঁর সাথে নামায আদায় করেন। নামায শেষে ঐ ব্যক্তি যখন বের হন তখন তিনি আনসারদের কিছু লোককে অতিক্রম করার বললেন যে, আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে নামায আদায় করেছি এবং তাঁকে (সাঃ) কাবা’র দিকে মুখ করে নামায পড়তে দেখেছি। এই কথা শ্রবণ করা মাত্র তাঁরা সবাই আসরের নামাযে রুকুরত অবস্থায় কাবার দিকে ঘুরে গেল।”

ইবনে আবি আওফা’র বরাত দিয়ে আল-বুখারী উল্লেখ করেন যেঃ

“খায়বারের রাতগুলোতে আমরা প্রচন্ড ক্ষুধা-যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছিলাম। খায়বারের দিন আমরা কিছু গৃহপালিত গাধা পেলাম এবং সেগুলোকে জবাই করলাম। পাত্রের ভেতর মাংস যখন সিদ্ধ হওয়া শুরু হলো, তখন রাসূল (সাঃ)-এর একজন বার্তাবাহক আমাদের নিকট আসলো এবং বললোঃ তোমাদের পাত্রসমূহ উপুড় করে দাও এবং এর মাংস গ্রহণ করো না। আবদুল্লাহ বলেনঃ আমরা বলি যে যেহেতু এগুলো থেকে খুমুস বা গণীমতের মালের এক পঞ্চমাংশ নেয়া হয়নি তাই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এগুলো খেতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেনঃ অন্যদের বক্তব্য হলো তিনি (সাঃ) এ মাংস পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেছেন। আমি সা’ইদ বিন জুবায়েরকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, যিনি বলেনঃ তিনি (সাঃ) এটিকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেছেন।”

আনাস বিন মালিক (রা.) বরাত দিয়ে বুখারী উল্লেখ করেন যে, তিনি বলেনঃ

“আমি আবু তালহা আল আনসারী, উবাইদা বিন আল জাররাহ ও উবাই বিন কাবকে কাঁচা খেজুর ও তাঁজা খেজুর থেকে প্রস্তুত করা মদ পরিবেশন করছিলাম। তখন একজন আগন্তুক আসলো এবং বললোঃ নিশ্চয়ই মদকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। অতঃপর আবু তালহা বলে উঠলোঃ হে আনাস! দাঁড়াও এবং কলসটি ভেঁঙ্গে ফেলো। আমি উঠে দাঁড়ালাম এবং একটি সূচালো পাথর দিয়ে কলসটিকে ততক্ষণ আঘাত করলাম, যতক্ষণ না এটি ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।”

আল-বুখারী আয়েশা (রা.)-এর বরাত দিয়ে বর্ণনা করেন যেঃ

“আমাদেরকে আরও বলা হয় যে, যখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা হুকুম নাযিল করলেন যে, ইসলাম গ্রহনের পর হিজরতকারী স্ত্রীগণের প্রতি মুশরিকদের ব্যয়িত অর্থ তোমরা ফিরিয়ে দাও এবং মুসলিমদের জন্য মুশরিক স্ত্রী বৈধ নয়, উমর তার দুই স্ত্রীকে তালাক দেন।”

আয়েশা (রা.)-এর বরাত দিয়ে আল-বুখারী বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেনঃ

“মুজাহির নারীদের প্রতি আল্লাহ রহমত বর্ষণ করুক। যখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা পবিত্র কুর’আনে আয়াত নাযিল করলেনঃ “এবং তারা যেন তাদের ঘাড় এবং বক্ষদেশ মাথার কাপড় (ওড়না বা চাদর) দ্বারা আবৃত করে রাখে” [সূরা আন-নূরঃ ৩১], তখন তারা তাদের বস্ত্রখন্ড ছিড়ে ফেললো এবং নিজেদেরকে আবৃত করলো।”

আয়েশা (রা.)-এর বরাত দিয়ে সা’ফিয়া বিনতে সা’য়বা এবং তার বরাত দিয়ে আবু দাউদ বর্ণনা করেনঃ

“আয়েশা (রা.) আনসার মহিলাদের নাম উল্লেখ করে তাদের প্রশংসা করেন এবং তাদেরকে নিয়ে উত্তম মন্তব্য করেন। অতঃপর তিনি (রা.) বলেনঃ “যখন সূরা নূর নাযিল হয়, তৎক্ষনাৎ তারা পর্দার কাপড় ছিঁড়ে তা দিয়ে মাথার ওড়না তৈরি করলেন।”

ইবনে ইসহাক বলেনঃ

“... কিনদাহ হতে আগত প্রতিনিধি দলের অংশ হিসেবে আল আশ’আদ বিন কায়েস রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট আগমন করলেন। আয-যুহুরী আমাকে জানান যে, তিনি কিন্দা থেকে আশিজন আরোহীসহ আসেন। তারা মসজিদে নববীতে প্রবেশ করলেন। তাদের লম্বা চুল ও চোখ সজ্জিত ছিল। তারা রেশমের আচল যুক্ত জুব্বা পরিহিত ছিল। যখন তারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে পৌঁছলেন, তখন তিনি (সাঃ) বললেনঃ তোমরা কি ইসলাম গ্রহণ করোনি? তারা বললঃ করেছি। নবী (সা) বললেনঃ ‘তাহলে কেন রেশমী কাপড় কাঁধে জড়িয়ে রেখেছো?’ অতঃপর তারা রেশমী কাপড় ছিড়ে ফেলে দিল।”

ইবনে জারীর, আবু বুরাইদাহ থেকে এবং আবু বুরাইদাহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যেঃ

“আমরা তিন চারজন লোক বালির উপর বসে একটি জগে নিয়ে খামার (মদ) পান করছিলাম যা তখন হালাল ছিল। অতঃপর আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে সালাম দেয়ার জন্য তাঁর কাছে গেলাম। ততক্ষণে খামার নিষিদ্ধ হওয়া সম্পর্কিত কুর’আনের আয়াত নাযিল হচ্ছিল (হে ঈমানদারগণ! মদ ও জুয়া...) থেকে দুই আয়াতের শেষ পর্যন্ত (তারপরেও কি তোমরা বিরত হবে না?)। তখনও কিছু লোকের হতে মদ ছিল অর্থাৎ কিছু অংশ খেয়েছে এবং কিছু এখনও পেয়ালাতে বাকী রয়ে গেছে। সে আরেক চুমুক দেয়ার জন্য উপরের ঠোটের নীচের অংশের সাথে পেয়ালাটি উঁচু করে ধরেছে। অতঃপর তাঁদের পাত্রগুলোতে যা ছিল তা ফেলে দিল এবং বললঃ হে আল্লাহ! আমরা বিরত হলাম।”

হানজালা বিন আবি আমির (রা.)-কে ফেরেশতাগণ গোসল দিয়েছিলেন। তিনি উহুদের যুদ্ধের কথা শুনামাত্র তাড়াহুড়ো করে সে আহ্বানে সাড়া দেন। তিনি ওহুদের ময়দানে শহীদ হন। ইবনে ইসহাক উল্লেখ করেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ

‘তোমাদের সাথীকে ফেরেশতাগণ গোসল দিচ্ছেন, তার পরিবারকে জিজ্ঞেস করো তার কী হয়েছিল?’ তার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করা হলো। সে (স্ত্রী) সেই রাতে নববধূ ছিল এবং হানজালা যখন যুদ্ধের ডাকে সাড়া দিয়ে ওহুদ প্রান্তরের দিকে রওয়ানা হলেন তখন তিনি অপবিত্র ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ ‘একারণে ফেরেশতাগণ তাঁকে গোসল দিচ্ছে।’”

রাফি বিন খাদিজ (রা.) এর বরাত দিয়ে ইমাম আহমদ বর্ণনা করেনঃ


“রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সময় আমরা জমি চাষ করতাম। এক তৃতীয়াংশ, এক চতুর্থাংশ বা নির্দিষ্ট পরিমাণ খাবারের বিনিময়ে সে জমি বন্দোবস্ত দিতাম। একদা আমার বাবার দিকের আত্নীয়ের মধ্য থেকে একজন আসলেন এবং বললেনঃ ‘রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এমন কিছুকে নিষিদ্ধ করেছেন যা আমাদের জন্য লাভজনক ছিল, কিন্তু আল্লাহ তাঁর রাসূলের আনুগত্য তার চেয়েও বেশী লাভজনক। তিনি (সাঃ) আমাদেরকে এক তৃতীয়াংশ, এক চতুর্থাংশ বা অন্য কোন পরিমাণ খাবারের বিনিময়ে জমি বন্দোবস্ত দিয়ে চাষ করতে নিষেধ করেছেন; তিনি জমির মালিককে হয় জমি চাষ করতে বলেছেন, অন্যথায় চাষ করতে পারবে এমন কাউকে সে জমি দিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। জমি বন্দোবস্ত দেয়া বা এধরনের কিছু করাকে তিনি অপছন্দ করেছেন।”

No comments:

Post a Comment