আস-সালাম আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে শরী’য়াহ হুকুম কী?
১. টিঁপঃ
মেয়েরা কি টিঁপ পড়তে পারবে কিনা? এটা কি অন্য কোন হাদারাহ্কে represent করে কিনা? মেয়েরা কোন অনুষ্ঠানে বা কোন আলোচনা সভায় (যেখানে শুধু
মেয়েরাই উপস্থিত) টিঁপ পড়া অবস্থায় থাকতে পারবে কিনা?
২. নাকফুল ~ নথ ~ নোলকঃ
মেয়েরা কি নাকফুল ~ নথ ~ নোলক পড়তে পারবে কিনা? মেয়েরা কোন অনুষ্ঠানে বা কোন
আলোচনা সভায় (যেখানে শুধু মেয়েরাই উপস্থিত) নাকফুল ~ নথ ~ নোলক পড়া অবস্থায় থাকতে
পারবে কিনা?
৩. আংটিঃ ছেলেরা কি রুপার
আংটি ব্যবহার করতে পারবে কিনা? মেয়েরা কি হাতে আংটি (such as
Gold, Diamond…) পড়ে বাইরে যেতে পারবে কিনা?
৪. হাতে বাজু ~ চুড়ি ~ কাঁকন
পড়াঃ মেয়েরা কি বাজু ~ চুড়ি ~ কাঁকন পড়তে পারবে কিনা? এটা কি অন্য কোন
হাদারাহ্কে represent করে কিনা? মেয়েরা কোন
অনুষ্ঠানে বা কোন আলোচনা সভায় (যেখানে শুধু মেয়েরাই উপস্থিত) বাজু ~ চুড়ি ~ কাঁকন
পড়া অবস্থায় থাকতে পারবে কিনা? মেয়েরা কি হাতে বাজু ~ চুড়ি ~ কাঁকন পড়ে বাইরে যেতে
পারবে কিনা (সাজ-সজ্জা করে বের হওয়া নিষেধ, কিন্তু বাজু ~ চুড়ি ~ কাঁকন পড়ার
স্থানটি সত্বর এর অংশ বিধায় আবৃতই থাকবে, সেই অবস্থায় যদি যায়)?
৫. হাতে মেহেদী দেয়াঃ
মেয়েরা কি মেহেদী দিতে পারবে কিনা? এটা কি অন্য কোন হাদারাহ্কে represent
করে কিনা? যেহেতু মেহেদী দেয়া সাজ-সজ্জা স্বরুপ, সুতরাং হাতে
মেহেদী দিয়ে সে অবস্থায় (public place) বের হওয়া যাবে
কিনা? পায়ের অংশটুকু সত্বর এর অংশ, সেখানে মেহেদী দিলে এবং স্থানটি সত্বর এর অংশ
বিধায় আবৃতই থাকবে, সেই অবস্থায় যদি মেয়েরা কোন অনুষ্ঠানে বা কোন আলোচনা সভায়
(যেখানে শুধু মেয়েরাই উপস্থিত) সেখানে পায়ের মেহেদী প্রকাশ পায় তবে সমস্যা কিনা? [ছেলেদের
কি হাতে মেহেদী দেয়া allow?]
৬. পায়েল ~ নূপুরঃ মেয়েরা
কি পায়েল ~ নূপুর পড়তে পারবে কিনা? এটা কি অন্য কোন হাদারাহ্কে represent
করে কিনা? পায়ের অংশটুকু সত্বর এর অংশ এবং স্থানটি সত্বর এর অংশ
বিধায় আবৃতই থাকবে, সেই অবস্থায় পায়েল ~ নূপুর পড়ে বাহিরে যেতে পারবে কিনা? এবং
মেয়েরা কোন অনুষ্ঠানে বা কোন আলোচনা সভায় (যেখানে শুধু মেয়েরাই উপস্থিত) সেখানে
পায়ের পায়েল ~ নূপুর যদি প্রকাশ পায় তবে সমস্যা কিনা?
৭. পায়ে আল্তা দেয়াঃ
মেয়েরা কি আল্তা দিতে পারবে কিনা? এটা কি অন্য কোন হাদারাহ্কে represent
করে কিনা? যেহেতু আল্তা দেয়া সাজ-সজ্জা স্বরুপ, সুতরাং হাতে আল্তা
দিয়ে সে অবস্থায় (public place) বের হওয়া যাবে কিনা?
পায়ের অংশটুকু সত্বর এর অংশ, সেখানে আল্তা দিলে এবং স্থানটি সত্বর এর অংশ বিধায়
আবৃতই থাকবে, সেই অবস্থায় যদি মেয়েরা কোন অনুষ্ঠানে বা কোন আলোচনা সভায় (যেখানে
শুধু মেয়েরাই উপস্থিত) সেখানে পায়ের আল্তা প্রকাশ পায় তবে সমস্যা কিনা?
৮. কাজলঃ (মেয়েদের ক্ষেত্রে) কাজল দেয়া যাবে কিনা? আমাদের দেশে বাচ্চাদের কাজল
দেয়া হয় এবং অনেকের মধ্যে একটি কুসংষ্কার বিদ্যমান যে বাচ্চাদের কাজল দিয়ে রাখতে
হবে, নয়তো কুনজর লাগবে। সুতরাং বাচ্চাদের কাজল দেয়া যাবে কিনা? এটা কি অন্য কোন
হাদারাহ্কে represent করে কিনা?
উত্তরঃ
এখানে যেহেতু সবগুলি প্রশ্নই
মহিলাদের সাজসজ্জা সম্পর্কিত তাই আলাদাভাবে উত্তর না দিয়ে পুরো বিষয়টিকে ৩ টি aspect এ আলোচনা করা যায়ঃ
প্রথমতঃ প্রশ্নে উল্লেখিত item গুলো মেয়েরা ব্যবহার করতে পারে কিনা। সেটা private life এ হোক অথবা public life এ হোক। এখানে বেশির
ভাগ জিনিসই সুনির্দিষ্টভাবে কোন হাদারা বা আকীদাহ-র সাথে সংশ্লিষ্ট না হওয়ায় ব্যবহার
করার ক্ষেত্রে শরী'য়াহ-র তেমন কোন বাধানিষেধ নেই। যেমনঃ নাকফুল, নথ, নোলক, আংটি,
পায়েল, কাজল ব্যবহার করা অনেকের মতে মুবাহ হলেও ভিন্ন মতও আছে।
মেহেদী মুলত আরবদের সংস্কৃতি যা
ঐতিহ্যগতভাবে মুসলমানরা practice করে আসছে। তবে ছেলেদের জন্য
মেহেদী ব্যাবহার করার কোন অনুমতি নেই কারন সাজসজ্জা নারীদের জন্য নির্ধারিত। ছেলেদের
জন্য সোনা ব্যতীত হিরা বা রুপার আংটি পরার অনুমতি আছে। কুসংষ্কারকে আমলে না নিয়ে
কাজল ব্যবহারে কোন বাধা নেই। হাতের বাজু,
কাঁকন, চুড়ি ব্যবহারের সময় অবশ্যই শব্দ হওয়া যাবে না যাতে দৃষ্টি আকর্ষণ হয় অথবা
সৌন্দর্য প্রকাশ পায়। আল্লাহ (সুবঃ) বলেনঃ
“ঈমানদার নারীদেরকে বলুন তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন
অঙ্গের হেফাজত করে। তারা যেন যা সাধারনত প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য
প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন
তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রতুস্পুত্র,
ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাদী, যৌন কামনামুক্ত পুরুষ ও বালক, যারা
নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতিত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ
না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজসজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারনা না করে’।
(সুরা আন-নূরঃ ৩১)
তবে কপালের টিপ, আলতা সরাসরি একটি
নির্দিষ্ট ধর্মীয় ইবাদতের সাথে সংযুক্ত যা হারাম। বিধর্মীদের ধর্মীয় চিহ্ন কোন অবস্থাতেই গ্রহণ করা যাবে না। যেমনঃ
টিপের সাথে সিদুরের সম্পর্ক, দেবীর কপালে টিপ লাগানো, দেবী দুর্গার পায়ে এবং
রামায়নে বর্ণীত বনবাসের সময় শ্রীকৃষ্ণ কর্তৃক রাধার পায়ে আলতা লাগানো সবই
বিশ্বাসের সাথে সম্পর্ককে ইঙ্গিত করে। নূপুর ব্যবহার মু’মিন নারীদের জন্য নিষিদ্ধ
কারন এটি শব্দ উৎপাদন করে যা অন্য পুরুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তাছাড়া নুপুর
ঐতিহাসিকভাবেই মুলত নাচের অলংকার হিসেবেই পরিচিত। সুতরাং যেগুলো হারাম সেগুলো
প্রকাশ্যে বা গোপনে সর্বাবস্থায়ই হারাম, পুরুষ-মহিলা সবার সামনে এমনকি স্বামীর
সামনেও।
দ্বিতীয়তঃ সৌন্দর্য প্রদর্শন বা
তাবাররুজ (Tabbarruz) - তাবাররুজ হল সৌন্দর্যের এমন প্রদর্শন যা অন্যের দৃষ্টি
আকর্ষণ করে যদিওবা সমস্ত শরীর ঢাকা (without uncovering private parts) থাকে যা মুমিন নারীদের জন্য হারাম করা হয়েছে। আবার লজ্জাস্থান (private
parts which is defined by shari’ah) উম্মুক্ত রাখাও হারাম সেটি
দৃষ্টি আকর্ষণ করুক আর না করুক। কিন্তু তাবাররুজ শরীর ঢাকা থাকার সাথে সংশ্লিষ্ট
নয় বরং প্রদর্শন বা দৃষ্টি আকর্ষণের সাথে সংশ্লিষ্ট। অর্থাৎ
এমন কিছু পরিধান করা বা এমন সাজসজ্জা করা যা ঐ সমাজের (community) মানুষের কাছে অপরিচিত (not in common)। উদাহরণস্বরূপ হাতে (যে অংশ প্রকাশ করা যায়) এমনভাবে মেহেদী দেওয়া যা সকলের
দৃষ্টি আকর্ষণ করে যদিও হাতের এ অংশ প্রকাশ করা শরী'য়াহ অনুমোদিত, কোন গ্রামে যদি
কেউ পায়েল পরে তা ঐ গ্রামের মানুষের কাছে যথেষ্ট আগ্রহের বিষয় এবং সকলের দৃষ্টি
আকর্ষণ করতে যথেষ্ট অথবা হাতের আঙ্গুলে এমন রিং পরা হল যা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ
করে, এমন বোরখা (figure tight) পরিধান করা যা শরীরের
অবয়ব প্রকাশ করে বা বুকের দিকে এমন ডিজাইন/কাজ করা যা সহজেই অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ
করে যেগুলো তাবাররুজ হিসেবে গণ্য হবে।
এখানে হাতে মেহেদী দেওয়া, পায়ে পায়েল পরা, আঙ্গুলে রিং পরা কোনটিই শরী'য়াহ দ্বারা
নিষিদ্ধ নয় যতক্ষণ অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ না করে।
তৃতীয়তঃ শরী'য়াহ-র সীমা লঙ্ঘন না
করে নারীকে সাজসজ্জা করার অনুমতি ইসলাম দিয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে modesty হিজাবের একটি significant অংশ। উপরোক্ত item গুলোর বেশিরভাগই নারীদের modesty
concept এর সাংঘর্ষিক। তাছাড়া এগুলোর বেশির ভাগই মুসলমানদের
সংস্কৃতি থেকে আসেনি বরং হিন্দু তথা মুশরিকদের culture থেকে
গ্রহন করা হয়েছে। যেই মুশরিকদেরকে মুসলমানরাই শিখিয়েছিল কিভাবে সেলাই করে কাপড়
পরতে হয় আজ মুহাম্মদের (সাঃ) উম্মত কেন এত দেউলিয়া হয়ে গেল যে তাকে সাজসজ্জার নামে
কাফের মুশরিকদের বেহায়াপনাকে গ্রহন করার জন্য শরী'য়াহ-র দলিল খুজতে ব্যস্ত হতে হল।
বরং এগুলোকে ঘৃনা ভরে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ “তোমরা যে জাতির সাথে মিল রাখবে তার সাথেই তোমাদের হাশর-নশর হবে।”
No comments:
Post a Comment