12.7.15

বাংলাদেশে চলমান জলাবদ্ধতার সংকট এটাই প্রমাণ করে যে প্রতারক ধর্মনিরপেক্ষ শাসকদের নিকট জনগণের স্বার্থের কোন মূল্যই নাই

::বাংলাদেশে চলমান জলাবদ্ধতার সংকট এটাই প্রমাণ করে যে প্রতারক ধর্মনিরপেক্ষ শাসকদের নিকট জনগণের স্বার্থের কোন মূল্যই নাই::

প্রসঙ্গঃ

ভারী বর্ষণের দরুণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক রাজধানী ও অর্থনৈতিক রাজধানী নামে খ্যাত যথাক্রমে ঢাকা ও চট্টগ্রামের জনগণ বিশেষতঃ এই রমযান মাসে চরম দূর্ভোগ পোহাতে শুরু করেছে। বর্ষা আগমনের পূর্বেই এই দুটি শহর হাটু পানির নীচে চলে গেছে এবং তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এমনকি সামান্য বৃষ্টিপাতেও যে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে তা নিরসনে সরকারের ব্যর্থতার দরুণ প্রতি বছর এভাবেই এই শহর দুটির অধিকাংশ অঞ্চলের জনগণকে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

মন্তব্যঃ

জলাবদ্ধতা সমস্যা শহরবাসীর জন্য একটি পুরাতন আতঙ্কের নাম, যার কারণে তাদের জীবন দিনকে দিন দূর্বিসহ হয়ে উঠছে। প্রতিবার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পূর্বে, মেয়র প্রার্থীরা এসব সমস্যা সমাধানের জন্য ভোটারদেরকে ওয়াদা দেন কিন্তু বাস্তবে নির্বাচনের পর কোন কিছুরই পরিবর্তন হয় না। রাজধানীকে ‘সবুজ ঢাকা’ বানানোর বর্ণিল নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর পর নতুন মেয়র শিল্পপতি আনিসুল হক এখন সমাধান অনিশ্চিতের দিকে ঝুঁকছেন। সাম্প্রতিক একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমি জানিনা কবে এই জলাবদ্ধতা সমস্যার ইতি ঘটবে। আমি শুধু এটুকুই বলতে পারি যে নিকট ভবিষ্যতে তা নিয়ন্ত্রনে আসবে।” পূর্বের সকল মেয়রের মত তিনিও এই সমস্যার জন্য সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দোষারোপ করে দায় এড়ানো একই পুরাতন খেলা খেলেছেন।

বাস্তব সত্য হচ্ছে যে, মিডিয়া যেভাবে নতুন মেয়র আনিসুল হককে জনগণের ত্রানকর্তা হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে, প্রকৃতপক্ষে তিনি তা নন, বরং তিনি হচ্ছেন এই দুর্নীতিগ্রস্ত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একটি অপরিহার্য অংশ এবং শুধুমাত্র লোভী পুঁজিপতি ও সরকারের বিভিন্ন সুবিধাভোগীদের স্বার্থ সংরক্ষনের জন্যই তাকে ঐ জায়গায় বসানো হয়েছে। নগর উন্নয়নের জন্য বরাদ্দকৃত বিভিন্ন প্রজেক্টের বিশাল অংকের টাকা যে সরকার দলীয় ও তাদের চাটুকারদের পকেটে যায় তা কারও অজানা নয়। গত চার বছরে ৩০০ কোটিরও বেশী টাকা (প্রায় ৪০০,০০০ ডলার) ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের বরাদ্দকৃত বিভিন্ন প্রজেক্টে খরচ হয়েছে, যার কোন ইতিবাচক ফলাফল এখনও চোখে পড়ে নাই এবং এই টাকা কোথায় গেছে তা আমাদের সবার জানা আছে। এই সংকটের আরেকটি প্রধান কারণ হচ্ছে রাজনৈতিক মদদপুষ্ট ভুমিদস্যুদের কর্তৃক শহরের বিভিন্ন লেক এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক জলাধারসমূহ অবৈধ দখল হয়ে যাওয়া। সরকার কর্তৃক বন্যার পানি নিয়ন্ত্রনকারী এসব প্রাকৃতিক জলাধারসমূহ ভরাট করে রিয়েল স্টেট ব্যবসার অনুমোদন, এই সমস্যাকে সমাধানের আওতার বাইরে নিয়ে গেছে। তাছাড়া, এইসব জলাধারসমূহ বুড়িগঙ্গা নদীর সাথে সংযুক্ত, যা আবার সরকারী মদদপুষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দ্বারা অবৈধভাবে দখলকৃত হয়ে আছে। এই হচ্ছে মানবরচিত ক্ষতিকারক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার আসল চেহারা, জনগণের অধিকার ও স্বার্থকে জলাঞ্জলী দিয়ে কিছু নির্দিষ্ট শ্রেনী গোষ্ঠীর স্বার্থকে পরিপুষ্ট ও লালন করার জন্যই এটা বিদ্যমান রয়েছে।

খিলাফত ব্যবস্থার শাসনের অধীনে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে জনগণ যে উন্নত নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছে ইতিহাস তার সাক্ষী এবং খিলাফতের আশু প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমেই একমাত্র বাংলাদেশের নগরবাসীরা এই জলাবদ্ধতার সমস্যা হতে পরিত্রাণ পাবে। শারী’আহ-এর দৃষ্টিতে এসব লেক ও প্রাকৃতিক জলাধারসমূহ হচ্ছে গণমালিকানাধীন সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত এবং কায়েমী স্বার্থান্বেষী কোন গোষ্ঠী যাতে এসব সম্পত্তিকে কুক্ষিগত করে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট করতে না পারে, খিলাফত তা নিশ্চিত করবে। সুতরাং, সবকিছুর সঠিক সমাধান করে ঠিক জায়গায় নিয়ে আসতে গণতন্ত্র এবং এর বিশ্বাসঘাতক শাসকদের ইতিহাসের নর্দমায় নিক্ষেপ করা এখন সময়ের দাবি।

“এবং যে কেউ আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, সে প্রকাশ্য ক্ষতিতে পতিত হয়।” [সূরা আন-নিসাঃ ১১৯]


১৫ রমযান, ১৪৩৬
০২ জুলাই, ২০১৫


হিযবুত তাহরীর-এর কেন্দ্রীয় মিডিয়া অফিসের জন্য লিখেছেন
ইমাদুল আমিন, মিডিয়া অফিস সদস্য
হিযবুত তাহরীর, উলাই’য়াহ্ বাংলাদেশ

No comments:

Post a Comment