25.2.14

লিফলেটঃ সামরিক বাহিনীর নিষ্ঠাবান অফিসারদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান


সামরিক বাহিনীর নিষ্ঠাবান অফিসারদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান
খিলাফত প্রতিষ্ঠায় হিযবুত তাহরীর-কে নুসরাহ্ (সামরিক সহায়তা) প্রদান করে মজলুম জনগণকে যালিম হাসিনার যুলুম হতে মুক্ত করুন

হে সামরিক বাহিনীর নিষ্ঠাবান অফিসারগণ!

আসসালামু আ’লাইকুম, ওয়া রাহমাতুল্লাহি, ওয়া বারাকাতুহু।
আমরা শুরুতেই আপনাদের স্মরণ করাতে চাই যে, আপনারা হলেন মুসলিম সেনাবাহিনীর গর্বিত অফিসারগণ, যেই বাহিনীর রাজকীয় উত্থান ঘটেছিল, যার পূর্বপুরুষরা ছিলেন মেধাবী সেনাপতি এবং জেনারেল, যার ইতিহাস গৌরবের এবং যার দায়িত্ব হল একমাত্র “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্” পতাকাকে উচ্চে তুলে ধরার কাজ নিষ্ঠার সাথে পালন করা। এই বাহিনীর প্রতিষ্ঠা ও উত্থান ঘটেছিল যার হাতে, তিনি হলেন আমাদের প্রানপ্রিয় নবী, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)। ১৩ বছরের দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও কষ্টকর সংগ্রামের পর তিনি (সাঃ) মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন করেন এবং মুসলিম সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন। এই সেনাবাহিনী হতে উসামা বিন যায়িদ (রা.), খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.), সালাহ্উদ্দিন আইয়ুবী, তারিক বিন যিয়াদ, মুহাম্মদ বিন কাসিমের মতো মেধাবী এবং সাহসী সেনাপতিদের জন্ম। তারা একের পর এক ভূ-খন্ড জয় করে খিলাফতের পতাকার অধীনে এনে ইসলাম ও উম্মাহ্’র জন্য গৌরব বয়ে আনেন। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে বখতিয়ার খিলজীর বঙ্গ জয়ের মাধ্যমে এই ভূ-খন্ডে মুসলিম সেনাবাহিনী গড়ে উঠে। এরাই আপনাদের পূর্বপুরুষ, হে অফিসারগণ! এবং আপনারা ইতিহাসে চির সম্মান ও প্রসংশার অধিকারী এসব মেধাবী পুরুষদের উত্তরসূরী। সুতরাং এটাই আপনাদের পরিচয়। আপনারা বাঙ্গালী কিংবা বাংলাদেশী সেনাবাহিনী কিংবা অন্যকোন সাধারণ সেনাবাহিনী নন, বরং আপনাদের প্রথম এবং প্রধান পরিচয় হচ্ছে আপনারা মুসলিম সেনাবাহিনীর গর্বিত অফিসারগণ।

সুতরাং, তথাকথিত শান্তিরক্ষী বাহিনী হিসেবে বিশ্ব পরিচিতি আপনাদের মানায় না, পুরোবিশ্ব জানে এই শান্তিরক্ষী বাহিনী ক্রুসেডার আমেরিকা ও পশ্চিমাদের দেয়া ভাড়াটে বাহিনীর ছদ্দনাম কারণ তারা আফ্রিকা ও অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় তাদের সৈন্য পাঠাতে চায় না। আমেরিকা ও পশ্চিমাদের স্বার্থরক্ষা করে কিছু ডলার অর্জনের তুচ্ছ পার্থিব মোহে ধাবিত হওয়া আপনাদের জীবনের উদ্দেশ্য হতে পারে না। দুনিয়ার মোহ এবং তুচ্ছ দুনিয়াবী অর্জনের লোভ-লালসা ইহুদী এবং মুশরিকদের জীবনকে ধাবিত করে, মুসলিম এবং মুসলিম সেনাবাহিনীকে নয়।

না এটা আপনাদের জন্য মানায় যে আপনারা আপনাদের শত্রু যালিম হাসিনার অধীনে শাসিত হবেন এবং তার কাছে নতী শিকার করবেন। একদিকে আপনাদের অফিসারগণ নৃসংশ হত্যাকান্ডের শিকার হবে আর উপযুক্ত প্রতিশোধ ছাড়া আসল খুনি হাসিনা এবং তার সহযোগিরা অপমানকর পরাজয় ভোগ না করেই পার পেয়ে যাবে, তা হতে পারে না।

না এটাও আপনাদের জন্য মানায় যে আপনারা দেশের মজলুম জনগণকে যালিম হাসিনার হাতে অসহায় অবস্থায় ছেড়ে যাবেন। যেই শাসকগোষ্ঠীকে অপসারণে সামরিক সহায়তার জন্য জনগণ দাবি জানাচ্ছে, তা উপেক্ষা করে সেই শাসকগোষ্ঠীকেই সামরিক সহায়তা প্রদান করবেন, তা হতে পারে না। হাসিনার মতো স্বৈরাচারী শাসকের রক্ষকের খিলাফত প্রতিষ্ঠায় হিযবুত তাহরীর-কে নুসরাহ্ (সামরিক সহায়তা) প্রদান করে মজলুম জনগণকে যালিম হাসিনার যুলুম হতে মুক্ত করুন ভূমিকা পালন করা যিনাহ্ কিংবা সুদ কিংবা ঘুষপ্রদান ও ঘুষগ্রহণের মতোই গুণাহ্’র কাজ।

“এমন সময় আসবে যখন মানবজাতির মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট, মূর্খ ও স্বৈরাচারীদের তোমরা শাসক হিসেবে পাবে এবং তারা তাদের খেয়ালখুশিকে অনুসরণ করবে এবং নামাযকে নির্ধারিত সময় হতে বিলম্বিত করবে। সুতরাং যদি তোমরা তাদেরকে পাও তবে তাদের শাসনের অধীনস্থ সৈনিক, পুলিশ, কর আদায়কারী কিংবা কোষাধক্ষ্য হইও না...” [সহীহ্ ইবনে হিব্বান]

হে সামরিক বাহিনীর নিষ্ঠাবান অফিসারগণ!
হাসিনা শাসন ক্ষমতা আকঁড়ে থাকায় আওয়ামী-বিএনপি শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক লাশের স্তুপ, ধ্বংসযজ্ঞ এবং যুলুম হতে পরিত্রাণে জনগণের একটাই বিকল্প পথ আছে। সেই বিকল্প পথটি হচ্ছে হিযবুত তাহরীর-এর নেতৃত্বে খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। একমাত্র হিযবুত তাহরীর-এরই রয়েছে সঠিক নেতৃত্বের গুণাবলী যা এই মুহুর্তে জাতির জন্য খুবই প্রয়োজন - চিন্তাশীল, সচেতন এবং সাহসী নেতৃত্ব। হিযব্-এর আমির, শেখ আতা’ ইবনে খলিল আবু আর-রাশতা একজন বিশিষ্ট রাষ্ট্রনায়কোচিত ব্যাক্তিত্ব, ফকীহ্, এবং রাজনীতি ও আর্থ-সামাজিক বিষয়ের পন্ডিত। এবং তিনি হিযবুত তাহরীর-এর প্রথম মুখপাত্র (জর্ডান) থাকা অবস্থায় দীর্ঘকাল কারাগারে থেকে যালিম শাসকের যুলুম-নির্যাতন মোকাবেলা করে তাঁর উদ্যম ও সাহসীকতার দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্ব এবং তত্ত্বাবধানে হিযব্-এর নেতা-কর্মীগণ হাসিনাসহ বিভিন্ন যালিম শাসকদের বিরুদ্ধে নির্ভয়ে রাজনৈতিক সংগ্রাম পরিচালনা করছে, বুলেটের মুখোমুখি হচ্ছে এবং কারাগারে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে। এবং তাদের রয়েছে ইসলাম ও রাজনৈতিক বিষয়াবলীতে পরিপক্বতা এবং বিবিধ বিষয়ে জ্ঞান।

খিলাফত রাষ্ট্র, হিযবুত তাহরীর যা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানাচ্ছে, তা সকল মুসলিমের কাঁধে অর্পিত ফরয দায়িত্ব। নাফি’ হতে বর্ণিত, আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর (রা.) বলেছেন, “আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি:
“যে ব্যক্তি খলিফার কাছ থেকে আনুগত্যের হাত সরিয়ে নিবে সে পরকালে প্রমাণবিহীন অবস্থায় আল্লাহ্’র সামনে হাজির হবে, এবং যে ব্যক্তি তার কাঁধে খলিফার প্রতি বাই’আত ব্যতীত মৃত্যুবরণ করলো, তার মৃত্যু জাহেলিয়াতের মৃত্যু।” [সহীহ্ মুসলিম]

এবং খিলাফত প্রতিষ্ঠায় সামরিক সহায়তা প্রদানে এগিয়ে আসা সামরিক ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাক্তিদের ফরয দায়িত্ব। খিলাফত হচ্ছে দ্বীনের অধীনে জীবন-যাপনে ব্যাকুল প্রতিটি জনগণের প্রকৃত আকাঙ্খা। শুধুমাত্র আল্লাহ্’র দ্বীনের ওয়াস্তে হিযবুত তাহরীর-এর নেতা-কর্মীগণ হাসিনার বুলেটের মুখোমুখি হচ্ছে, সুতরাং তাকে অপসারণ করে এবং তার স্থলে হিযবুত তাহরীর-এর আমিরকে মুসলিমদের খলিফা হিসেবে অধিষ্ঠিত করতে আপনাদের সামরিক সহায়তা তাদের প্রাপ্য।

পরিশেষে আমরা বলতে চাই, আপনাদের মধ্যে হয়তো এই চিন্তা আসতে পারে যে হাসিনাকে অপসারণ করা একটি ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়। প্রথমত আমরা আপনাদের স্মরণ করাতে চাই, পার্থিব লোভ-লালসা যেমন ইহুদী-মুশরিকদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ঠিক তেমনি ‘ভয়ও’ তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। এটা মুসলিম সেনাবাহিনীতো দূরের কথা কোনও মুসলিমের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হতে পারে না এবং এটা মুসলিম সেনাবাহিনীতো দূরের কথা এমনকি প্রকৃত কোনও সেনাবাহিনীরই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। আপনাদের কাজ শত্রুর অন্তরে ভীতি সঞ্চার করা। তাছাড়া আপনারা যে বিষয়ের ভয় করছেন তা মূলতঃ শয়তানের প্ররোচনা, যা পুঁজি করে প্রতিটি যালিম শাসক মাথাচাড়া দিয়ে উঠে, যা পুঁজি করে হাসিনাও মাথাচাড়া দিয়েছে, সে এমন একটি আবহ তৈরি করেছে যেন মনে করা হয় প্রতিটি জায়গায় তার গুপ্তচর আছে এবং প্রত্যেককেই সে নজরদারীর মধ্যে রেখেছে।

“এ হচ্ছে শয়তান যে তোমাদের তার আউলিয়াদেরকে (অনুসারী ও বন্ধু) ভয় করতে বলে, সুতরাং তাদের ভয় করো না, বরং আমাকে ভয় করো, যদি তোমরা মু’মিন হও।” [সূরা আলি-ইমরান : ১৭৫]

হে সামরিক বাহিনীর নিষ্ঠাবান অফিসারগণ!
ভয় পাবেন না। এবং জাতিসংঘ মিশন হতে কিছু ডলার অর্জনের মতো তুচ্ছ পার্থিব মোহ পরিত্যাগ করেন। খুব দেরী হওয়ার পূর্বে এবং পিলখানায় সেনাঅফিসার হত্যাকান্ডের শাস্তি থেকে পার পাওয়ার পূর্বে হাসিনা ও তার কুফর সরকারকে আঘাত করুন। জনগণের পক্ষে অবস্থান নিন এবং তাদের উদ্ধার করুন, যালিম হাসিনার যুলুম হতে মজলুম দেশবাসীকে মুক্তি দিন। ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠায় সামরিক সহায়তা দিয়ে আপনাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পূর্ণ করুন। দুনিয়ায় কল্যাণ লাভে ত্বরান্বিত হয়ে খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আনসারের মর্যাদা লাভ করুন। এবং আখিরাতের কল্যাণে খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আনসারের ভূমিকা পালন করে পুরষ্কার হিসেবে জান্নাত লাভ করবেন, ইনশা’আল্লাহ্।

“এবং এ বিষয়ের (জান্নাতের) প্রতিযোগিরা প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হোক।”[সূরা আল-মুতাফ্ফিফীন : ২৬]


জনগণের প্রতি নির্দেশ:

১. সামরিক বাহিনীর নিষ্ঠাবান অফিসারদের সাথে যোগাযোগ করুন এবং এই আহ্বানটি পৌঁছে দিন; এবং

২. যালিম হাসিনা এবং আওয়ামী-বিএনপি শাসকগোষ্ঠীকে অপসারণ করে হিযবুত তাহরীর-এর নেতৃত্বে খিলাফত প্রতিষ্ঠায় তাদের নিকট দাবি জানান।

হিযবুত তাহরীর, উলাই'য়াহ বাংলাদেশ
১৯ রবিউল আউয়াল, ১৪৩৫ হিজরী
২০ জানুয়ারী, ২০১৪ খ্রিস্টাব্দ

No comments:

Post a Comment