বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
হে মুসলিমগণ! রোহিঙ্গা মুসলিমদের রক্ষা করার একমাত্র উপায় হচ্ছে
আরাকানকে মুক্ত করতে খিলাফতের নেতৃত্বের অধীনে আমাদের সেনাবাহিনীকে জিহাদে
প্রেরণ করা
মিয়ানমার সরকার একদিকে যেমন রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর হত্যাকান্ড,
ধর্ষণ, অঙ্গহানী ও অগ্নিসংযোগের মতো নৃসংশতা চালাচ্ছে। আর অন্যদিকে বাংলাদেশের নিষ্ঠুর হাসিনা
সরকার তাদেরকে আশ্রয় না দিয়ে এবং তাদেরকে বন্দুকের নলের মুখে পুশব্যাক করে হত্যাকারীদের
কাছে ফেরত পাঠিয়ে এই গণহত্যায় সহযোগীর ভূমিকা পালন করছে এবং আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া
তা’আলার নির্দেশের তোয়াক্কা করেনি।
“অবশ্য যদি তারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের সাহায্য কামনা করে, তবে তাদের
সাহায্য করা তোমাদের কর্তব্য।” [সূরা
আল-আনফা’লঃ ৭২]
সরকার তার ঘৃণ্য পদক্ষেপের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলছে যে, এসব অসহায়
জনগণ নাকি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি! কিসের জাতি? কিসের জাতীয় নিরাপত্তা? যখন রাসূলুল্লাহ্
(সাঃ) বলেছেনঃ “মুসলিমরা অন্যান্য জাতিদের থেকে পৃথক এবং এক উম্মাহ্।” জাতিরাষ্ট্র নামক চিন্তা একটি কুফর
চিন্তা। ইসলাম জাতীয়তাবাদকে নিষিদ্ধ করেছে; ইসলামে এমন চিন্তার কোনো স্থান নাই যে চিন্তা
মুসলিমদের জাতীয়তার ভিত্তিতে বিভক্ত করে রাখে, আলাদা আলাদা রাষ্ট্রের ভিত্তিতে, কোনোটা
বাঙালীদের জন্য, কোনোটা পাকিস্তানীদের জন্য, কোনোটা আবার সিরিয়ান কিংবা জর্ডানীদের
জন্য, ইত্যাদি। মুসলিমরা
এক উম্মাহ্, তাদের রাষ্ট্র এক, তাদের ভূ-খন্ড এক, তাদের যুদ্ধ এক এবং তাদের শান্তিও
এক। তাই
উদাহরণস্বরূপ যখন আফগানিস্তানের মুসলিমরা শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হবে তখন পাকিস্তানের মুসলিমদের তাদের
রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। ঠিক একইভাবে, যখন আরাকানের মুসলিমরা আজ আক্রান্ত তখন বাংলাদেশের মুসলিমদের তাদের রক্ষায়
এগিয়ে আসতে হবে।
যাইহোক, সরকার কর্তৃক “জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার” বুলি প্রকৃতপক্ষে
জনগণের সাথে প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই না। খুব বেশীদিন গত হয়নি যখন শেখ হাসিনা কাশ্মির ইস্যুতে
পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতকে সমর্থনের ঘোষণা দিয়েছিল। তখন জাতীয় নিরাপত্তার কোন বিবেচনা
থেকে সে তা বলেছিল? প্রকৃত সত্য হচ্ছে হাসিনা সরকার ইসলাম এবং মুসলিমদের শত্রু।
সে এবং তার সরকার দেশের
অভ্যন্তরে ইসলাম এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। সুতরাং তাদের পক্ষে রোহিঙ্গা মুসলিমদেরকে
শত্রুদের হাতে তুলে দেয়া অপ্রত্যাশিত কিছু নয়।
হে মুসলিমগণ!
আপনাদের রোহিঙ্গা মুসলিম ভাই-বোনদের উদ্ধার ও রক্ষা করতে হলে
শত্রু রাষ্ট্র মিয়ানমারের সরকার ও হিংস্র বৌদ্ধ
ভিক্ষুদের কবল হতে আরাকানকে মুক্ত করতে হবে এবং সেই লক্ষ্যে খিলাফতের নেতৃত্বের অধীনে
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জিহাদে প্রেরণ করতে হবে। সরকারের নিকট সাহায্যে এগিয়ে আসার
দাবী জানিয়ে সমাবেশ করে কোনো লাভ নেই। এই সরকারের (কিংবা জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের)
নিকট দাবী জানানোর পরিবর্তে সামরিক বাহিনীর অফিসারদের নিকট দাবী জানান, যেন তারা এই
সরকারকে অপসারণ করে খিলাফত প্রতিষ্ঠায় হিযবুত তাহরীর-এর নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করে।
আপনাদের আয়োজিত সমাবেশ
ও মিছিলগুলো থেকে এই দাবী তুলে আপনাদের দায়িত্ব পালন করুন। আপনাদের দাবী হতে হবে সেনানিবাসগুলোর
প্রতি, সরকারের প্রতি নয়। আপনাদের পরিচিত সেনাঅফিসারগণ যারা আপনাদের পরিবারের
সদস্য, আত্মীয় কিংবা বন্ধু, তাদের নিকটও এই দাবী পৌঁছে দিতে হবে।
তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ
করুন, তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করুন যেন তারা দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
খিলাফত প্রতিষ্ঠাই স্বমূলে
এই সমস্যার সমাধান করবে এবং এটাই একমাত্র কার্যকর স্থায়ী সমাধান।
নয়তো আগ্রাসনকারীরা বারবার
তাদের খেয়ালখুশি মতো আগ্রাসন চালাতে থাকবে আর এখানকার অন্ধ-বধির-বোবা সরকার এসব অসহায়দেরকে
হত্যাকারীদের হাতে তুলে দিবে। অতীতে আমরা এমনটাই প্রত্যক্ষ করেছি যেমনটি বর্তমানে
করছি।
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ইমাম (খলিফা) হচ্ছেন সেই ঢাল যার পেছনে মুসলিমরা জিহাদ করে এবং নিজেদেরকে
রক্ষা করে।” [সহীহ্ মুসলিম]
খিলাফত রাষ্ট্র হচ্ছে একমাত্র রাষ্ট্র যা মুসলিমদের সর্বদা
নিরাপত্তা প্রদান করেছে এবং করবে। এই অঞ্চলের ইতিহাসে আপনাদের কাছে রয়েছে তার একটি গৌরবোজ্জ্বল
দৃষ্টান্ত। ৭১১
খ্রিস্টাব্দে, সিংহল হতে একদল মুসলিম বণিক যখন ভারত মহাসাগরে সিন্দু উপকূলে নোঙর ফেলে,
তখন তাদের জাহাজ লুট করা হয় এবং তাদেরকে আটক করে বন্দী করা হয়।
এই খবর যখন খিলাফতের
রাজধানীতে পৌঁছায় তখন খলিফা ওয়ালিদ বিন আবদুল মালিক তার গভর্ণর হাজ্জাজ বিন ইউসূফকে
এই নির্দেশ প্রদান করেন যেন তিনি সিন্দের হিন্দু শাসকের নিকট থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় এবং
মুসলিমদের মুক্ত করেন। উম্মাহ্’র শ্রেষ্ঠ সন্তানদের একজন, তরুন মুসলিম জেনারেল, মুহাম্মদ বিন কাসিমের
নেতৃত্বে একটি সেনাবাহিনীকে দ্রুত প্রেরণ করা হয়। খলিফার সেনাবাহিনী যখন দিবাল নামক
(বর্তমান করাচির নিকটস্থ) স্থানে পোঁছায়, তখন মুহাম্মদ বিন কাসিম রাজা দাহিরের নিকট
তার দাবী উপস্থাপন করেন। রাজা তার বিরোধীতা করে এবং মুসলিমদের নিকট পরাজিত হয়
এবং রাজ্য হারায়। এই ঘটনা তখন ফাতেহ্ আল-হিন্দের অর্থাৎ হিন্দ বিজয়ের পটভূমিতে পরিণত হয়।
হায়! হাসিনা সরকার আমাদের
সেই ইতিহাসের কতই না বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে, যে কিনা মুসলিমদের সাগরে নিক্ষেপ করছে,
হত্যাকারীদের হাতে অর্পণ করছে!
হে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিষ্ঠাবান
অফিসারগণ!
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) একদা তাওয়াফরত অবস্থায় কা’বাকে উদ্দেশ্য
করে বলেনঃ
“...কতোই না তোমার সম্মান, কতোই না তোমার মর্যাদা! কিন্তু যেই সত্ত্বার
হাতে মুহাম্মদের প্রাণ তাঁর কসম, আল্লাহর নিকট একজন ঈমানদারের রক্ত ও সম্পদ তোমার মর্যাদার
তুলনায় অনেক বেশী!”
[ইমাম আল-মুনদিরি কর্তৃক তারগীব ওয়া’ল তারহিব-এ বর্ণিত, ৩/২৭৬]
আপনাদের দায়িত্ব হচ্ছে মুসলিমদের রক্ত ও সম্পদের এই মর্যাদাকে
রক্ষা করা। অবিলম্বে
এই সরকারকে অপসারণ করুন এবং আমাদের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করুন; হিযবুত তাহরীর-এর সম্মানিত
আমির খলিফা পদে অধিষ্ঠিত হবেন এবং আপনাদের ভাই-বোনদের মুক্ত করতে আপনাদেরকে জিহাদে
নেতৃত্ব দিবেন। আপনারা
কি আপনাদের নির্যাতিত ভাই-বোনদের কান্না শুনতে পাননা? তাদের রক্তাক্ত অবস্থা
এবং ধ্বংসস্তুপ কি আপনাদের চোখে পড়েনা? তাদের নিদারুন কষ্ট দেখে আপনাদের হৃদয়ে কি রক্তক্ষরণ
হয়না? তাদের অসহায় মুখগুলো দেখে আপনাদের কি একটুও দয়া হয়না, একটুও মায়া হয়না? আমরা
জানি নিঃসন্দেহে আপনারা তাদের ভালোবাসেন, তাদের ব্যাথা হৃদয়ে অনুভব করেন এবং তাদের
দুঃখ-কষ্ট প্রত্যক্ষ করছেন এবং তাদের আত্মচিৎকার শুনছেন। সুতরাং, নিজের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন
না। কিংবা
নিজের সাথে প্রতারণা করে মিথ্যা অজুহাত দিয়ে বলবেন না যে আপনাকে সংবিধানের প্রতি আনুগত্যশীল
থাকতে হবে এবং শুধুমাত্র সরকার কর্তৃক প্রদত্ত দায়িত্ব পালন করতে হবে।
এই সংবিধানের মূল্য এক
টুকরো লিখিত কাগজের চেয়ে বেশী কিছু নয়, সরকার যে কিনা তা প্রণয়ন করেছে, সেও এর তোয়াক্কা
করে না। সরকারের
শিকল ছিন্ন করে
নিজেকে মুক্ত করুন, যে কিনা আপনাদেরকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের নামে দূরবর্তী
দেশসমূহে প্রেরণ করে, অথচ আপনাদের পার্শ্ববর্তী দেশের ভাই-বোনদের রক্ষায় নীরব
থাকে। ফলাফল
বা পরিণতির ভয়ে আর ভীত থাকবেন না, আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার উপর ভরসা রাখুন, ইনশা’আল্লাহ্
আপনারাই সফলকাম হবেন।
“এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা রাখে, তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। নিঃসন্দেহে, আল্লাহ্ তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করবেন। নিশ্চয়ই, আল্লাহ্ সবকিছুর জন্য একটি পরিমাণ ধার্য করে রেখেছেন।” [সূরা আত-ত্বলাকঃ ৩]
হে আল্লাহ্! এদেশের সেনাঅফিসারদের মধ্য হতে এমন
কিছু সাহসী পুরুষের উত্থান ঘটান যেন তারা আমাদের এই আহ্বানকে সাদরে গ্রহণ করে এবং আমাদের
অসহায় ভাই-বোনদেরকে শত্রুর এবং আমাদেরকে যালিম হাসিনার যুলুমের কবল থেকে মুক্ত করে।
আমিন!
২৯ সফর, ১৪৩৮ হিজরী
২৯ নভেম্বর, ২০১৬ খ্রিস্টাব্দ
হিযবুত তাহরীর,
উলাই’য়াহ্ বাংলাদেশ
No comments:
Post a Comment