আমরা "কবরের আযাব" ও "খবরে আহাদ"
বিশ্বাস করি না !!??!!
কিছু ব্যক্তি হিযবুত তাহরীর এর খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার “মানহাজ” নিয়ে
এতই ত্যক্ত-বিরক্ত যে, তারা অবশেষে আশ্রয় নিয়েছে মিথ্যাচার ও কুৎসা রটনার।
বাংলাদেশের কিছু তথাকথিত সালাফি ইসলামিক ব্লগ/পেইজও দেখি একই তালে হিযব ও শেইখ
তাকিউদ্দিনের (রহঃ) নামে জঘন্য মিথ্যাচার করে বেড়াচ্ছেন এবং তাদের তথ্যসূত্র হোল “মাদখালি ওয়েইবসাইট”।
এরা বলে বেড়াচ্ছেন হিযব নাকি ১৯৭০ সালে একটি লিফলেটে
বলেছে “শাসক অমুসলিম হলেও
তার নেতৃত্ব মেনে নিতে হবে”; যদিওবা আমি একটি জনপ্রিয়
সালাফি পেইজকে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম আমাকে লিফলেটটির লিংক দিতে যা তারা আজ পর্যন্ত
দেয়নি। তারা আরও বলেন পর্ণোগ্রাফি দেখা নাকি জায়েয হিযবের চোখে, কবরের আযাব ও খবরে আহাদ নাকি হিযব
বিশ্বাস করে না ইত্যাদি। এসব কুৎসা রটানোর ক্ষেত্রে তারা মূলত
হিযবের যে দু’টি বই এর নাম রেফার করেন – “শাকসিয়া ইসলামিয়া” এবং “আদ দাউসিয়া”।
এখানে বলে রাখা ভাল আমার দাওয়াহ জীবনে বাংলাদেশ এর
দেওবন্দের টপ-লেভেল উলামাদের সাথে ইন্টারএকশন হয়েছে এবং ওনাদের বড় বড় মুফতি, ফকিহরাও ঘাবড়ে যান শেইখ তাকির ৩
খণ্ডের এই “শাকসিয়া ইসলামিয়া” মাস্টারপিসটি
পরে। পুরাটাই ইজতিহাদী ও উসুল আল ফিকহ সংক্রান্ত খুবই কঠিন একটি বই যার ৩ নং
খণ্ডটি আরবি ভাষার পণ্ডিতরাও বুঝতে রীতিমত হিমশিম খান। আর আমাদের কিছু অনলাইন
উদীয়মান ইসলামিক ব্যক্তিত্ব (!!) খুব সহজেই এই বইয়ের রেফারেন্স দিয়ে দেন বইগুলো
সম্পর্কে কোন ধারণা না রেখেই। তাই প্রথমেই ওইসব মিথ্যাচারী
মুসলিমদের বলবো আগে তাওবাহ করুন আল্লাহর কাছে। হিযবের মানহাজ নিয়ে দ্বিমত থাকাটা শারী’আহ
সম্মত; কিন্তু এই ইখতিলাফ
এর কারনে কুৎসা রটনা করা শারী’আহ বহির্ভূত গর্হিত গুনাহ। আপনাদের আমি আল্লাহর
আযাবের ভয় দেখাচ্ছি; নিজেদের বিরত রাখুন এই জঘন্য গুনাহ
থেকে।
তিরমিযি শরীফের বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “প্রতিদিন মানুষ ঘুম থেকে ওঠার পর
শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এই বলে জিহ্বাকে সতর্ক করে, ‘আল্লাহকে সর্বদা ভয় করো কারন আমরা সবাই তুমি জিহ্বার করুণায় থাকি। তুমি যদি ন্যায়পরায়ণ থাকো, তাহলে আমরাও থাকব; আর যদি তুমি কুটিল হও, তাহলে আমরাও সেরকম হয়ে
যাব।’”
আজকে শুধু কবরের আযাব নিয়েই বলবো যেহেতু এটা নিয়ে অনেকেই
জিজ্ঞাসা করেন। হিযবুত তাহরীর এর অফিসিয়াল মতামত হলো যেসব “খবর উল আহাদ” (যা মুতাওয়াতির হাদিস নয়) সুন্নাহ নাওাওিয়া হিসেবে বর্ণিত আছে তা সবই সহীহ
এবং এগুলোর ওপর অবশ্যই বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। যারা এসবের ওপর বিশ্বাস স্থাপন
করবে না তারা অবশ্যই ফাসিক (পাপী)। যারা এই ব্যাপারে ওয়াকিবহাল নন তাদের
জন্য বলছি কবরের আযাব সংক্রান্ত হাদিসগুলো “খবরে আহাদ”।
হিযবের ভাইরাও সকল মুসলিমদের সাথে নামাযের সময় আল্লাহর
কাছে এই বলে পানাহ চায়, “হে আল্লাহ! আমরা আপনার কাছ থেকে কবরের আযাব থেকে আশ্রয় চাই”।
হিযব শুধু এতটুকু বলে কেও যদি তা অবিশ্বাস করে তাহলে তার
ব্যাপারে “তাকফীর” (কাফের ঘোষণা দেয়া) করা যাবে না কারন “খবর উল আহাদ” কখনো “কাতিঈ” (দ্ব্যর্থহীন)
হয় না যার ওপর ভিত্তি করে কোন ধর্মীয় বিশ্বাস “আল ইমানু
ইয়াকিনি” বা “তাসদিক জাযিম”
(সন্দেহাতীতভাবে বিশ্বাস করা) পর্যায়ে পৌছতে পারে; শুধুমাত্র “মুতাওয়াতির” বর্ণনাই “ইয়াকিন” পর্যায়ে
পৌছায় এবং এই মতামত শুধু হিযব এর না বরং “উসুল আল হাদিস” (হাদিস বিজ্ঞান) এর একটি প্রসিদ্ধ নীতি।
শেইখ তাকিউদ্দিন নাবাহানির “খবর আহাদ এবং কবর আযাব” সংক্রান্ত এই মতামত নতুন কিছু না বরং অতীতের ক্লাসিক্যাল স্কলারদের
জমহুর (ম্যাজরিটি) মতামতের সাথে অভিন্ন। মালিকি মাযহাবের প্রখ্যাত ইমাম
আশ-শাতিবি (রহঃ) ওনার “আল মুওয়াফাকাত” এ বলেছিলেনঃ “শুধুমাত্র খবরে আহাদ আমরা অ্যাকশন (যা
দ্বীনের শাখা) এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারি, কারন আহাদ বর্ণনা সন্দেহাতীত নয়;
কিন্তু আকিদার ক্ষেত্রে এটা ব্যবহারের অনুমতি আল্লাহ দেন নি”।
শাফি’ঈ মাযহাবের অবিসংবাদিত স্কলার ইমাম নববী (রহঃ)
বলেছিলেনঃ “সাহাবা, তাবে’ঈন, তাবে-তাবে’ঈন থেকে শুরু করে মুহাদ্দিসিন (উসুল আল হাদিসের স্কলার),
মুজতাহিদিন (উসুল আল ফিকহের স্কলার) এবং ফুকাহাদের ভেতর জমহুর
(ম্যাজরিটি) মতামত হোল “খবর আহাদ” আমরা কখনই আকিদার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারব না; বরং পারবো অ্যাকশন (শারী’আহ) এর ক্ষেত্রে কারন খবরে আহাদ কখনই
সন্দেহমুক্ত হয় না এবং “ইয়াকিন” পর্যায়ে পৌছায় না” [আল মুওয়াফাকাত, পৃঃ ১৩০-১৩১]। উলামাদের
খুবই মাইনরিটি একটি দল, যেমনঃ ইমাম ইবন তাইমিয়া, মনে করেন খবরে আহাদ
আকিদার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যায়।
তাই যারাই ইলম উল কালাম, উসুল আল হাদিস এবং উসুল আল ফিকহ নিয়ে
পড়াশোনা করেন তারাই জানেন শেইখ তাকিউদ্দিন এর “খবর আহাদ ও
আযাবুল কবর” সংক্রান্ত মতামত ম্যাজরিটি ক্লাসিক্যাল
ওলামাদের সাথেই সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই যারাই বলেন হিযবুত তাহরির কবরের আযাব বিশ্বাস
করে না এবং খবর আহাদ মানে না, তারা নির্জলা মিথ্যাচার
করছেন। “শাকসিয়া ইসলামিয়ায়” (তৃতীয়
খণ্ড) শেইখ তাকি বলেছেনঃ
“রাসুলুল্লাহ (সাঃ) একদা ওনার সাহাবাদের স্বতন্ত্রভাবে
বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছিলেন, তারা ইসলাম শিক্ষা দিয়েছিল, আহকাম শিখিয়েছিল
সেইসব দেশের মানুষদের, নিজেরাই একলা হাদিস বর্ণনা
করেছিলেন (খবরে আহাদ); মুয়ায বিন জাবাল (রাঃ)-কে এরুপে
প্রেরণ করা হয়েছিল। যদি একজন ব্যক্তিকে দিয়ে এরুপে ইসলাম প্রচার বিধিসম্মত না হতো,
তাহলে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ব্যক্তি না পাঠিয়ে সাহাবাদের দল পাঠাতেন।”
***লেখকঃ ইমতিয়াজ সেলিম