25.1.15

একটি মিথ্যা অপবাদ ও জবাবঃ আমরা "কবরের আযাব" ও "খবরে আহাদ" বিশ্বাস করি না !!??!!

আমরা "কবরের আযাব" ও "খবরে আহাদ" বিশ্বাস করি না !!??!!

কিছু ব্যক্তি হিযবুত তাহরীর এর খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার মানহাজনিয়ে এতই ত্যক্ত-বিরক্ত যে, তারা অবশেষে আশ্রয় নিয়েছে মিথ্যাচার ও কুৎসা রটনার। বাংলাদেশের কিছু তথাকথিত সালাফি ইসলামিক ব্লগ/পেইজও দেখি একই তালে হিযব ও শেইখ তাকিউদ্দিনের (রহঃ) নামে জঘন্য মিথ্যাচার করে বেড়াচ্ছেন এবং তাদের তথ্যসূত্র হোল মাদখালি ওয়েইবসাইট

এরা বলে বেড়াচ্ছেন হিযব নাকি ১৯৭০ সালে একটি লিফলেটে বলেছে শাসক অমুসলিম হলেও তার নেতৃত্ব মেনে নিতে হবে”; যদিওবা আমি একটি জনপ্রিয় সালাফি পেইজকে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম আমাকে লিফলেটটির লিংক দিতে যা তারা আজ পর্যন্ত দেয়নি। তারা আরও বলেন পর্ণোগ্রাফি দেখা নাকি জায়েয হিযবের চোখে, কবরের আযাব ও খবরে আহাদ নাকি হিযব বিশ্বাস করে না ইত্যাদি। এসব কুৎসা রটানোর ক্ষেত্রে তারা মূলত হিযবের যে দু’টি বই এর নাম রেফার করেন – “শাকসিয়া ইসলামিয়াএবং আদ দাউসিয়া

এখানে বলে রাখা ভাল আমার দাওয়াহ জীবনে বাংলাদেশ এর দেওবন্দের টপ-লেভেল উলামাদের সাথে ইন্টারএকশন হয়েছে এবং ওনাদের বড় বড় মুফতি, ফকিহরাও ঘাবড়ে যান শেইখ তাকির ৩ খণ্ডের এই শাকসিয়া ইসলামিয়ামাস্টারপিসটি পরে। পুরাটাই ইজতিহাদী ও উসুল আল ফিকহ সংক্রান্ত খুবই কঠিন একটি বই যার ৩ নং খণ্ডটি আরবি ভাষার পণ্ডিতরাও বুঝতে রীতিমত হিমশিম খান। আর আমাদের কিছু অনলাইন উদীয়মান ইসলামিক ব্যক্তিত্ব (!!) খুব সহজেই এই বইয়ের রেফারেন্স দিয়ে দেন বইগুলো সম্পর্কে কোন ধারণা না রেখেই। তাই প্রথমেই ওইসব মিথ্যাচারী মুসলিমদের বলবো আগে তাওবাহ করুন আল্লাহর কাছে। হিযবের মানহাজ নিয়ে দ্বিমত থাকাটা শারী’আহ সম্মত; কিন্তু এই ইখতিলাফ এর কারনে কুৎসা রটনা করা শারী’আহ বহির্ভূত গর্হিত গুনাহ। আপনাদের আমি আল্লাহর আযাবের ভয় দেখাচ্ছি; নিজেদের বিরত রাখুন এই জঘন্য গুনাহ থেকে।

তিরমিযি শরীফের বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ প্রতিদিন মানুষ ঘুম থেকে ওঠার পর শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এই বলে জিহ্বাকে সতর্ক করে, ‘আল্লাহকে সর্বদা ভয় করো কারন আমরা সবাই তুমি জিহ্বার করুণায় থাকি তুমি যদি ন্যায়পরায়ণ থাকো, তাহলে আমরাও থাকব; আর যদি তুমি কুটিল হও, তাহলে আমরাও সেরকম হয়ে যাব

আজকে শুধু কবরের আযাব নিয়েই বলবো যেহেতু এটা নিয়ে অনেকেই জিজ্ঞাসা করেন। হিযবুত তাহরীর এর অফিসিয়াল মতামত হলো যেসব খবর উল আহাদ” (যা মুতাওয়াতির হাদিস নয়) সুন্নাহ নাওাওিয়া হিসেবে বর্ণিত আছে তা সবই সহীহ এবং এগুলোর ওপর অবশ্যই বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। যারা এসবের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করবে না তারা অবশ্যই ফাসিক (পাপী)। যারা এই ব্যাপারে ওয়াকিবহাল নন তাদের জন্য বলছি কবরের আযাব সংক্রান্ত হাদিসগুলো খবরে আহাদ

হিযবের ভাইরাও সকল মুসলিমদের সাথে নামাযের সময় আল্লাহর কাছে এই বলে পানাহ চায়, “হে আল্লাহ! আমরা আপনার কাছ থেকে কবরের আযাব থেকে আশ্রয় চাই 

হিযব শুধু এতটুকু বলে কেও যদি তা অবিশ্বাস করে তাহলে তার ব্যাপারে তাকফীর” (কাফের ঘোষণা দেয়া) করা যাবে না কারন খবর উল আহাদকখনো কাতিঈ” (দ্ব্যর্থহীন) হয় না যার ওপর ভিত্তি করে কোন ধর্মীয় বিশ্বাস আল ইমানু ইয়াকিনিবা তাসদিক জাযিম” (সন্দেহাতীতভাবে বিশ্বাস করা) পর্যায়ে পৌছতে পারে; শুধুমাত্র মুতাওয়াতিরবর্ণনাই ইয়াকিনপর্যায়ে পৌছায় এবং এই মতামত শুধু হিযব এর না বরং উসুল আল হাদিস” (হাদিস বিজ্ঞান) এর একটি প্রসিদ্ধ নীতি।

শেইখ তাকিউদ্দিন নাবাহানির খবর আহাদ এবং কবর আযাবসংক্রান্ত এই মতামত নতুন কিছু না বরং অতীতের ক্লাসিক্যাল স্কলারদের জমহুর (ম্যাজরিটি) মতামতের সাথে অভিন্ন।  মালিকি মাযহাবের প্রখ্যাত ইমাম আশ-শাতিবি (রহঃ) ওনার আল মুওয়াফাকাতএ বলেছিলেনঃ শুধুমাত্র খবরে আহাদ আমরা অ্যাকশন (যা দ্বীনের শাখা) এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারি, কারন আহাদ বর্ণনা সন্দেহাতীত নয়; কিন্তু আকিদার ক্ষেত্রে এটা ব্যবহারের অনুমতি আল্লাহ দেন নি

শাফি’ঈ মাযহাবের অবিসংবাদিত স্কলার ইমাম নববী (রহঃ) বলেছিলেনঃ সাহাবা, তাবে’ঈন, তাবে-তাবে’ঈন থেকে শুরু করে মুহাদ্দিসিন (উসুল আল হাদিসের স্কলার), মুজতাহিদিন (উসুল আল ফিকহের স্কলার) এবং ফুকাহাদের ভেতর জমহুর (ম্যাজরিটি) মতামত হোল খবর আহাদআমরা কখনই আকিদার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারব না; বরং পারবো অ্যাকশন (শারী’আহ) এর ক্ষেত্রে কারন খবরে আহাদ কখনই সন্দেহমুক্ত হয় না এবং ইয়াকিনপর্যায়ে পৌছায় না [আল মুওয়াফাকাত, পৃঃ ১৩০-১৩১]উলামাদের খুবই মাইনরিটি একটি দল, যেমনঃ ইমাম ইবন তাইমিয়া, মনে করেন খবরে আহাদ আকিদার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যায়।

তাই যারাই ইলম উল কালাম, উসুল আল হাদিস এবং উসুল আল ফিকহ নিয়ে পড়াশোনা করেন তারাই জানেন শেইখ তাকিউদ্দিন এর খবর আহাদ ও আযাবুল কবরসংক্রান্ত মতামত ম্যাজরিটি ক্লাসিক্যাল ওলামাদের সাথেই সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই যারাই বলেন হিযবুত তাহরির কবরের আযাব বিশ্বাস করে না এবং খবর আহাদ মানে না, তারা নির্জলা মিথ্যাচার করছেন। শাকসিয়া ইসলামিয়ায়” (তৃতীয় খণ্ড) শেইখ তাকি বলেছেনঃ

“রাসুলুল্লাহ (সাঃ) একদা ওনার সাহাবাদের স্বতন্ত্রভাবে বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছিলেন, তারা ইসলাম শিক্ষা দিয়েছিল, আহকাম শিখিয়েছিল সেইসব দেশের মানুষদের, নিজেরাই একলা হাদিস বর্ণনা করেছিলেন (খবরে আহাদ); মুয়ায বিন জাবাল (রাঃ)-কে এরুপে প্রেরণ করা হয়েছিল। যদি একজন ব্যক্তিকে দিয়ে এরুপে ইসলাম প্রচার বিধিসম্মত না হতো, তাহলে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ব্যক্তি না পাঠিয়ে সাহাবাদের দল পাঠাতেন

***লেখকঃ ইমতিয়াজ সেলিম

24.1.15

প্রেস বিজ্ঞপ্তি: হিযবুত তাহরীর, অনতিবিলম্বে যালিম হাসিনা ও বর্তমান শাসনব্যবস্থার পতন এবং খিলাফত প্রতিষ্ঠায় সামরিক বাহিনীর নিষ্ঠাবান অফিসারদের সাথে যোগাযোগ ও তাদের সংগঠিত করার কাজে সক্রিয়ভাবে সহযোগীতার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহবান জানাচ্ছে

শুক্রবার, ০৩ রবিউস সানি, ১৪৩৬ হিজরী                                                                   ২৩.০১.২০১৫ ইং

::প্রেস বিজ্ঞপ্তি::

হিযবুত তাহরী, অনতিবিলম্বে যালিম হাসিনা ও বর্তমান শাসনব্যবস্থার পতন এবং খিলাফত প্রতিষ্ঠায় সামরিক বাহিনীর নিষ্ঠাবান অফিসারদের সাথে যোগাযোগ ও তাদের সংগঠিত করার কাজে সক্রিয়ভাবে সহযোগীতার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহবান জানাচ্ছে

আওয়ামী-বিএনপির ক্ষমতা ও প্রতিহিংসার রাজনীতির কারণে গোটা বাংলাদেশ আজ এক ভয়াবহ মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। একদিকে আওয়ামী লীগ উপহার দিয়েছে গুম-খুন ও আতংকের ফেরাউনি শাসন, আর অন্যদিকে বিএনপি পেট্রোল বোমা এবং নিরীহ মানুষদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারার রাজনীতি ছাড়া আর কিছুই উপহার দিতে পারেনি। মানুষের রক্ত নিয়ে ছিনিমিনি খেলার রাজনীতি থেকে দেশবাসীকে পরিত্রাণ দিতে টকশো, সেমিনার, গোলটেবিল বৈঠক এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিধ্বনি হচ্ছে সংলাপ ও সুষ্ঠু অন্তর্বর্তীকালীন নির্বাচনের দাবি। প্রকৃতপক্ষে, এসবই হচ্ছে মূল সমস্যাকে অনুধাবন করার চেষ্টা না করে উপসর্গ নিয়ে আলোচনা। মুলতঃ বাংলাদেশ গণতন্ত্র নামক বিষাক্ত এক মরনব্যাধিতে আক্রান্ত। এই মরনব্যাধিকে জিইয়ে রেখে নির্বাচন বা সংলাপের মাধ্যমে দেশবাসীকে মুক্ত করা সম্ভব নয়।

ইতিহাস সাক্ষী যে, গণতন্ত্র কখনো কোথাও সুশাসন ও শান্তি নিশ্চিত করতে পারেনি কারণ এই ব্যবস্থা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার পরিবর্তে সমাজের গুটিকয়েক প্রভাবশালী মানুষকে দেয় আইন প্রণয়নের অসীম ক্ষমতা। স্বাভাবিকভাবেই তাই ব্যক্তি ও গোষ্ঠীগত স্বার্থ হাসিলের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় আরোহন ও টিকে থাকা হয়ে ওঠে মূল উদ্দেশ্য এবং এই ক্ষমতার রাজনীতির শিকার হয় দেশের সাধারণ জনগণ। এটি শুধু বাংলাদেশের রাজনীতি বলে কথা না, ইউরোপ-আমেরিকার বেলায়ও আমরা একই চিত্র দেখতে পাই। বুশ সরকারের সাবেক হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি টম রিজ তার আত্মস্বীকারোক্তি মূলক “The Test of Our Times: America Under Siege...And How We Can Be Safe Again” বইয়ে উল্লেখ করেছে যে, ২০০৪ সালের নির্বাচনের পূর্বে তাকে দিয়ে জোর করে সন্ত্রাসী হামলার সতর্কতা ঘোষণা করানো হয় যাতে আতংক সৃষ্টি করে বুশ দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে পারে। তাই এই পুঁজিবাদী গণতন্ত্রের একটি রূপই আমরা দেখতে পাই, আর তা হলো মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের আখের গোছানোর রাজনীতি।

হে সচেতন, নিষ্ঠাবান বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়!

হিযবুত তাহরী, আপনাদের আহবান করতে চায় আওয়ামী-বিএনপির ধ্বংসের রাজনীতির বিপরীতে অবাস্তব ও কাল্পনিক প্রকৃত গণতন্ত্রপ্রতিষ্ঠার কথা বলে দেশবাসীকে আর বিভ্রান্ত করবেন না। বিশ্বের ইতিহাসে আজ পর্যন্ত প্রকৃত গণতন্ত্র”-এর কোন আদর্শ মডেল আমরা দেখতে পাইনি যেখানে ইসলামের খিলাফত শাসনব্যবস্থা ১৩০০ বছর যাবৎ বিশ্বকে শাসন করে এসেছিল। তাই আপনারা যদি প্রকৃত অর্থেই দেশের কল্যাণ কামনা করে থাকেন, তাহলে আলোচনার টেবিলে সমাধান হিসেবে খিলাফত শাসনব্যবস্থাকে নিয়ে আসুন এবং এর পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে আমাদের সহায়তা করুন। হিযবুত তাহরী-এর আত্মবিশ্বাসী ও সুশিক্ষিত নেতা-কর্মীগণ খিলাফত শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করতে প্রস্তুত।

হে মুসলিমগণ!

পশ্চিমাদের মদদপুষ্ট আওয়ামী-বিএনপির শাসন ও রাজনীতি দ্বারা আর কতো প্রতারিত হবেন? যেখানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য জীবনব্যবস্থা হলো ইসলাম, সেখানে প্রতিবার আপনাদেরই ভোটের মাধ্যমে কেন তাদেরকে নির্বাচিত করেন যারা ইসলামকে ত্যাগ করে নিজস্ব আইন দ্বারা সমাজ পরিচালনা করছে? গণতন্ত্র নামক কুফরি শাসনব্যবস্থাকে অক্ষত রেখে শুধু সরকার পরিবর্তনে বর্তমান জুলুমের শাসনের অবসান হবে না। তাই আপনাদের প্রতি আমাদের আহবান, ক্ষমতার মুল চাবিকাঠি যাদের হাতে, সেই নিষ্ঠাবান সেনাঅফিসারদের কাছে খিলাফতের দাবী তুলুন

§  আপনাদের পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে যারাই সামরিক বাহিনীর অফিসার, তাদেরকে খিলাফতের ফরজ হুকুমের ব্যাপারে সচেতন করুন এবং আহবান করুন যাতে খিলাফত প্রতিষ্ঠায় অতি সত্বর তারা হিযবুত তাহরী-কে নুসরাহ (সমর্থন) প্রদান করেন।
§  এবং অনতিবিলম্বে যালিম হাসিনা ও বর্তমান শাসনব্যবস্থার পতন এবং খিলাফত প্রতিষ্ঠায় সামরিক বাহিনীর নিষ্ঠাবান অফিসারদের সাথে যোগাযোগ ও তাদের সংগঠিত করার কাজে হিযবুত তাহরী-কে সহযোগীতা করুন এবং এই কাজে সক্রিয়ভাবে জড়িত হউন। 

মনে রাখবেন, এ কাজে অবহেলা দুনিয়ার বুকে নিপীড়িত হওয়ার পাশাপাশি শেষ বিচারের দিনে আমাদের জন্য খুব ভয়ংকর পরিণতির কারণ হতে পারে।

وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَى

এবং যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কিয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করবো।” [সুরা ত্বা-হাঃ ১২৪]



হিযবুত তাহরী-এর মিডিয়া কার্যালয়, উলাইয়াহ বাংলাদেশ

Mobile: +8801798367640                    Skype: htmedia.bd
New official Website: www.ht-bangladesh.info
হিযবুত তাহরীর-এর আমীর শেখ আতাইবনে খলিল আবু-রাশতা-এর ফেসবুক লিংকঃ www.facebook.com/Ata.AbualRashtah
fb page: PeoplesDemandBd
Hizbut Tahrir official website: www.hizb-ut-tahrir.org
Hizbut Tahrir Media Website: www.hizb-ut-tahrir.info

23.1.15

উসুলি কা'ইদাহ "সকল বস্তুর 'আসল' হল ইবাহা" প্রয়োগ করে কি করে গনতন্ত্রকে জায়েয এবং খিলাফতকে ধ্বংস করা হয়েছিল

উসুলি কা'ইদাহ "সকল বস্তুর 'আসল' হল ইবাহা" প্রয়োগ করে কি করে গনতন্ত্রকে জায়েয এবং খিলাফতকে ধ্বংস করা হয়েছিল

যারাই বলে থাকেন ইসলামে ইবাদতের 'তউকিফি' (অর্থাৎ ওহী দ্বারা সুনির্দিষ্ট) ইস্যুগুলো ছাড়া বাকি সব *একশন (কাজ)* বাই ডিফল্ট মুবাহ বা হালাল, তারা ইসলামী আইনবিজ্ঞানের (উসুল আল ফিকহ) বিষয়ে সাধারণ মানুষের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে খুব ভয়ংকরভাবেই উম্মাহকে ভুল পথে চালিত করছেন। পর্যাপ্ত ধারণা না থাকায় আমাদের অনেকের মনে এটা গেঁথে গেছে (কিছু ভ্রান্ত প্রচারনার দ্বারা) কোন বিষয় যদি ইসলামের সাথে কনফ্লিক্ট না করে এবং ঐ ব্যাপারে কোন শারী’আহ-র নুসুস (দলীল) যদি না থাকে, তাহলেই তা মুবাহ বা হালাল। এই ভয়ংকর চিন্তার কারনেই মুসলিম উম্মাহকে ইসলামিক গণতন্ত্র”, “ইসলামিক সমাজতন্ত্র”, “সোশ্যাল জাস্টিসইত্যাদি কুফরি চিন্তা গলধঃকরণ করানো হয়েছিল। খিলাফত ধ্বংসের বিস্তারিত ইতিহাস নিয়ে যারা অবহিত নন, তারা এই বিষয়টিও হয়তো জানেন না যে, কাফেররা মুসলিম ভূমিগুলোকে বাইরে থেকে আক্রমণ পরে করেছিল। প্রথমে ভেতর থেকে ধ্বংস করা হয়েছিল কিছু ভ্রান্ত উসুলি কাইদাহ (নীতি) প্রয়োগ করে যার ভেতর ছিল এইটিও – “সকল কিছুই বাই ডিফল্ট মুবাহএই নীতির দ্বারা ঐ পশ্চিমা চিন্তাধারা দ্বারা প্রভাবিত মুসলিম পণ্ডিতরা বলা শুরু করেছিল যে রাজনীতি তউকিফি” (আল্লাহ দ্বারা নির্ধারিত) না এবং সব কাজই বাই ডিফল্ট হালাল এবং তা বলেই ফ্রেঞ্চ পেনাল কোড ও রোমান আইন এবং গণতন্ত্র মুসলিম খিলাফতে ঢোকানো হয়েছিল বিখ্যাত পণ্ডিতদের দ্বারা।

এক্ষেত্রে দেখা যায় যেসব ফকিহ বা উসুলিয়্যুন এই চিন্তার প্রচার-প্রসার ঘটান, তারা নীচের কাইদাহ (নীতি) টি সর্বদাই উল্লেখ করে থাকেনঃ

সব বস্তুর আসলবা অরিজিন হল ইবাহা (বা হালাল)” [আল আসলু ফিল-আশইয়া আল ইবাহা]

এখানে উল্লেখ্য ফিকাহ শাস্ত্রবিদরা শুধু বস্তু/জিনিস (আশইয়া) এর ক্ষেত্রে এই কাইদাটি ব্যবহার করতেন (আফ'আল বা কাজের ক্ষেত্রে না)।  আল্লাহ (সুব.) কুর’আনে বলেছেনঃ

وَخَلَقَ لَكُمْ مَا في الأَرْضِ جَمِيعاً

এবং তিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীর বুকে যা আছে সবই সৃষ্টি করেছেন

আয়াতটিতে আল্লাহ বস্তুকে আম’ ভাবে উল্লেখ করেছেন তাই সকল বস্তু বাই ডিফল্ট হালাল এবং যেগুলো হারাম সেগুলো উল্লখে করা আছে।

কিন্তু সমস্যা হয় যখন বস্তুর (আশইয়া) সাথে একশন বা কাজ (আফআল)-কে মিশিয়ে ফেলে এই কাইদাহটি দ্বারা জাস্টিফাই করানো হয়। এটি একটি কমনসেন্স যে বস্তু আর একশন কখনই এক বিষয় হয় না। আমরা বলতে পারি না 'ছুরি' (বস্তু) আর ছুরি মারা’ (একশন) এক বিষয়। তাই অতীতে স্কলাররা প্রয়োজন বোধই করেননি এই নীতির ক্ষেত্রে বস্তুকে একশন থেকে আলাদা করে বোঝানোর। 

তাই আফআল (একশন) এর ক্ষেত্রে আসল’ (অরিজিন) হল

হুকুম আশ-শারঈর মাঝে নিজেদের কাজকে সীমাবদ্ধ রাখার মাধ্যমে শারী’আহ-র সাথে লেগে থাকা

তাই যদি আল্লাহ কোন কাজের জন্য ইবাহা (অনুমতি) দেয় তাহলে তা হবে মুবাহ আর যদি আমরা অনুমতি না দেখতে পাই তাহলে আদিল্লাহ আশ-শারিয়্যাহ” (শারী’আহর দলীল) থেকে হুকুম বের করে আনতে হবে। এটা বলার কোন সুযোগ নেই যেহেতু শারী’আহ এক্ষেত্রে এপারেন্টলি নীরব, তাই আমরা সেই একশন সমূহ পালন করতে পারবো।

যারা এই বস্তুর সাথে একশনকে মিলিয়ে দেখেন তারা আবার মুবাহ” (যা করলে কোন সাওয়াব বা গুনাহ নেই)-কে ভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেন। তারা মনে করেন যেসব বিষয়ে শারী’আহ কোন তিরস্কার (হারাজ) করে না বা শারী’আহ নিশ্চুপ, সেগুলোই হল মুবাহ। তাই তিরস্কারের অনুপস্থিতিই হল অনুমতি” (ইবাহা)। তারা রাসুলের (সাঃ) কথাটি উল্লেখ করেনঃ

وَمَا سَكَتَ عَنْهُ فَهُوَ عَفْو

এবং যে বিষয়ে নিশ্চুপ থাকা হয়েছে সেসব বিষয়ে মাফ করে দেয়া হয়েছে

এভাবেই নিকট অতীতের স্কলাররা গনতন্ত্রকে জায়েয করেছিল এই যুক্তিতে যে গণতন্ত্রও শুরা” (পরামর্শ) ও সামাজিক ন্যায় দ্বারা পরিচালিত এবং সকল বস্তুই যেহেতু বাই ডিফল্ট হালাল, তাই গণতন্ত্রও এডোপ্ট করা যাবে এবং বর্তমানেও অতীতের সেই বিষাক্ত চিন্তা অনেক স্কলাররাই বহন করছে।

তাই এটা জেনে নেয়া ভাল উসুল আল ফিকহের ক্লাসিক্যাল বইগুলোতে কোথাও বলা নেই কোন বিষয়ের ক্ষেত্রে হারাজ (তিরস্কার) এর অনুপস্থিতিই হল অনুমতি” (ইবাহা), কারন কোন কাজ করা বা না করার ক্ষেত্রে হারাজ এর অনুপস্থিতি ইঙ্গিত বহন করে না যে ঐ কাজ বা বস্তুটি মুবাহ। আবার ব্যাপারটি এমনও না যে ঐ হারাজটিকে তুলে নেয়ার অর্থই হল অনুমতি তাই, কোন বিষয় মুবাহ হওয়ার অর্থ হল উক্ত বিষয়ে হুকুমদাতা (আল্লাহ) মানুষকে কোন কাজ করা বা না করার ক্ষেত্রে বাছাই করার অপশন দিয়েছেন এবং এই বাছাইয়ের অপশনটিও শারী’আহর দলীল দ্বারা সমর্থিত হতে হবে

যারা উপরে বর্ণিত হাদিসটির (এবং যে বিষয়ে নিশ্চুপ থাকা হয়েছে সেসব বিষয়ে মাফ করে দেয়া হয়েছে”) এভাবে ব্যাখ্যা দেন যে শারী’আহ কিছু বিষয়ে নিশ্চুপ রয়েছে তাই ওসব বিষয় মুবাহ, তারা হাদিসটির ভুল ব্যাখ্যা দেন। বিষয়টি এমন না যে শারী’আহ কোন ব্যাপার ব্যাখ্যা করে নাই এবং এই চিন্তা করাও পাপ কারন আল্লাহ বলেছেনঃ

“আজকে আমি তোমাদের জন্য দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম... [সূরা আল-মায়িদাহঃ ৩]

আরো বলেছেনঃ

আমরা এই কিতাব নাযিল করেছি সবকিছুর ব্যাখ্যা দিয়েই [সূরা আন-নাহলঃ ৮৯]

তাই ওপরের হাদিসটিতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বোঝাতে চেয়েছেন সেসব টেক্সট গ্রহন করো যা তোমাদের দেয়া হয়েছে। আর যে বিষয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করা হয়নি তা নিয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করো না কারন হয়তো তা আবার হারামও হয়ে যেতে পারে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছিলেনঃ

ذَرُونِي مَا تَرَكْتُمْ فَإِنَّمَا هَلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ بِكَثْرَةِ سُؤَالِهِمْ وَاخْتِلَافِهِمْ عَلَى أَنْبِيَائِهِمْ . فَإِذَا نَهَيْتُكُمْ عَنْ شَيْءٍ فَاجْتَنِبُوهُ . وَإِذَا أَمَرْتُكُمْ بِأَمْرِ فَأْتُوا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ

আমাকে চাপ দিও না সেসবের বাইরে কিছু বলতে যা আমি তোমাদের ইতিমধ্যেই বলেছি। তোমাদের আগে যারা এসেছিল তারা অতিরিক্ত প্রশ্ন করা এবং তাদের নবীদের সাথে বিতর্ক করার কারণে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। তাই আমি যদি তোমাদের কিছু করতে নিষেধ করি তাহলে তা থেকে দূরে থাক এবং যদি কিছু করার আদেশ দেই তাহলে তোমাদের সাধ্যমতো করার চেষ্টা করো [মুসলিম]

তাই মুল কথা হল ইসলামে এমন কিছু নাই যা শারী’আহ এক্সপ্লেইন করেনি। তাই কোন কিছু মুবাহ বলতে নিলেও আমাদের আগে দলীল ঘাটতে হবে এবং প্রমাণ করতে হবে শারী’আহ উক্ত বিষয়টিকে মুবাহ ঘোষণা দিয়েছে।  

আবার অনেকেই যুক্তি দিয়ে থাকেন নিউক্লিয়ার বোমা, উড়োজাহাজ তৈরি ইত্যাদি একশনগুলোর ক্ষেত্রে তো কোন শারী’আহ বিধান নেই। তাই এই কাজগুলো যদি আমরা ইবাহা ধরে করতে পারি, তাহলে কেন সকল কাজের আসল” (অরিজিন) এর ক্ষেত্রে আমরা একই কথা বলতে পারি না?  এই বিষয়ে ফুকাহাদের মত হল কিছু চিন্তা থাকে আকিদাহ এবং আহকাম সংক্রান্ত এবং কিছু থাকে উলুম (বিজ্ঞান), মাদানিয়্যাহ (প্রযুক্তি), উদ্ভাবন/উৎপাদন, দক্ষতা ইত্যাদি সংক্রান্ত। তাই দ্বিতীয় বিষয়ের (যেগুলো আকিদাহ বা আহকাম সংক্রান্ত নয়) ক্ষেত্রে যদি শারী’আহ দ্বারা নিষেধকারী কোন দলীল না থাকে, তাহলে তা গ্রহন করা যায়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) একবার কিছু কৃষক এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন এবং তাদের বললেনঃ 

أَنْتُمْ أَدْرَى بِأُمورِ دُنْيَاكُمْ

তোমরা দুনিয়ার বিষয়ে আমার চেয়ে অধিক সচেতন

বদরের যুদ্ধের সময় সাহাবা আল-হুব্বাব বিন আল-মুনযির (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে যুদ্ধ-কৌশল সংক্রান্ত এক প্রশ্ন করেছিল। রাসুলের পরিকল্পনাটি কি ওহী ছিল নাকি রাসুলের নিজস্ব মতামত ছিল তা ঐ সাহাবা জানতে চেয়েছিল, উত্তরে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছিলেনঃ

بَلْ هُوَ الرَّأْيُ وَالحَرْبُ وَالمَكِيدَة

অবশ্যই এটা আমার মতামত, যুদ্ধবিগ্রহ ও ধূর্ত (বিষয়ের ক্ষেত্রে)

ঐ সাহাবার পরামর্শে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যুদ্ধের কৌশল পরিবর্তন করেছিলেন। কারন তা ওহী ছিল না। তাই নন-আহকাম/আকিদার বিষয়ের আসলএর ক্ষেত্রে ইবাহা (অনুমতি) আছে যদি কোন বিপরীত টেক্সট আমরা না পাই শারী’আহতে। কিন্তু গণতন্ত্র সরাসরি আকিদাহ বিরোধী।  

মোদ্দা কথাঃ সকল বস্তু বাই ডিফল্ট হালাল এবং সকল একশন এর ক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের শারী’আহ দ্বারা সীমাবদ্ধ রাখতে হবেকোনভাবেই বস্তুর সাথে একশনকে এক করে দেখলে হবে না। কারন একশনের ক্ষেত্রে আল্লাহ বলেছেনঃ

وَمَا آَتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ

“এবং আল্লাহর রাসুল যা কিছু তোমাদের জন্য এনেছেন তা গ্রহন করো এবং যেসব থেকে দূরে থাকতে বলেছেন তা পরিত্যাগ করো” [সূরা আল-হাশরঃ ৭]

তাই ওপরের আয়াতের 'তালাব' (আবেদন) টিতে যে 'মাআ' (যা কিছু) শব্দটি এসেছে তা 'আম' আকারে এসেছে এবং এই তালাব হোক সেটা "তালাব উত তারক" (কোন কাজ পরিত্যাগ করার আবেদন) বা তালাব উল ফি' (কোন কিছু করার আবেদন) হল তালাব জাযিম (সুনির্দিষ্ট আবেদন) যা মেনে চলা ফরয। তাই সকল একশনের ক্ষেত্রে খুজতে হবে শারী’আহর নুসুস (দলীল) কি বলছে। এটাই হল আফ'আল এর ক্ষেত্রে 'আসল'


***লেখকঃ ইমতিয়াজ সেলিম