30.11.14

আবদুর রহমান ইবন আউফ (রা.)

আবদুর রহমান ইবন আউফ (রা.)

ইমাম বুখারীর মতে জাহিলী যুগে আবদুর রহমান ইবন আউফের নাম ছিল আবদু আমর। ইবন সা’দ তাঁর ‘তাবাকাতে’ উল্লেখ করেছেন, জাহিলী যুগে তাঁর নাম ছিল আবদু কা’বা। ইসলাম গ্রহণের পর রাসূল (সাঃ) তাঁর নাম রাখেন ‘আবদুর রহমান’। তাঁর মাতা-পিতা উভয়ে ছিলেন ‘যুহরা’ গোত্রের লোক। মাতার নাম শিফা বিনতু আউফ। দাদা ও নানা উভয়ের নাম আউফ।

ইবন সা’দ ওয়াকিদীর সূত্রে উল্লেখ করেছেন, তিনি আমূল ফীলের (হস্তীর বৎসর) দশ বছর পর জন্মগ্রহণ করেন। এ বর্ণনার ভিত্তিতে তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে বয়সে দশ বছর ছোট। রাসূল (সাঃ) আমুল ফীলের ঘটনা পঞ্চাশ দিন পর জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু ইবন হাজার তাঁকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর তের বছর ছোট বলে উল্লেখ করেছেন।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নবুওয়্যাত প্রাপ্তির পর প্রথম পর্যায়ে যাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেন তিনি তাঁদেরই একজন। মক্কার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা প্রায় প্রতিদিনই হযরত আবু বকরের বাড়ীতে বৈঠকে মিলিত হতেন। আবদুর রহমানও ছিলেন এ বৈঠকের একজন নিয়মিত সদস্য। আবু বকরের সাথে ছিল তাঁর গভীর বন্ধুত্ব। আবু বকরের দাওয়াতেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। আবু বকরের বাড়ীর এ বৈঠকের নিয়মিত পাঁচজন সদস্যের নাম ইতিহাসে পাওয়া যায়। যেমনঃ উসমান, সা’দ, তালহা, যুবাইর এবং আবদুর রহমান। তাঁদের সকলেই আবু বকরের দাওয়াতে প্রথম পর্বেই ইসলাম গ্রহণ করেন এবং ইসলামের জন্য অপরিসীম ত্যাগের বিনিময়ে দুনিয়াতেই জান্নাতের সুসংবাদ লাভ করেন

নবুওয়্যাতের পঞ্চম বছর রজব মাসে যে এগারজন পুরুষ ও চারজন নারীর প্রথম কাফিলাটি মক্কা থেকে হাবশায় হিজরাত করে তার মধ্যে আবদুর রাহমানও ছিলেন। আবার রাসূলের (সাঃ) মদীনায় হিজরাতের পর তিনিও মদীনায় হিজরাত করেন। যাঁরা হাবশা ও মদীনা দু’স্থানেই হিজরাত করেছিলেন তাঁদেরকে বলা হয় ‘সাহিবুল হিজরাতাইন’। মদীনায় তিনি হযরত সা’দ ইবন রাবী’ আল-খাযরাজীর গৃহে আশ্রয় নেন এবং তাঁর সাথেই রাসূল (সাঃ) ভ্রাতৃসম্পর্ক স্থাপন করে দেন। এ সম্পর্কে ইমাম বুখারী একাধিক সনদের মাধ্যমে বহু হাদীস বর্ণনা করেছেন। এ সম্পর্কে হযরত আনাস (রা.) বলেনঃ ‘আবদুর রহমান ইবন আউফ  হিজরাত করে মদীনায় এলে রাসূল (সাঃ) সা’দ ইবন রাবী’র সাথে তাঁর ভ্রাতৃসম্পর্ক কায়েম করে দেন। সা’দ ছিলেন মদীনার খাযরাজ গোত্রের নেতা ও ধনাঢ্য ব্যক্তি। তিনি আবদুর রহমানকে বললেনঃ ‘আনসারদের সকলে জানে আমি একজন ধনী ব্যক্তি। আমি আমার সকল সম্পদ সমান দু’ভাগে ভাগ করে দিতে চাই। আমার দু’জন স্ত্রী আছেন। আমি চাই, আপনি তাদের দু’জনকে দেখে একজনকে পছন্দ করুন। আমি তাকে তালাক দেব। তারপর আপনি তাকে বিয়ে করে নেবেন।’ আবদুর রহমান বললেনঃ ‘আল্লাহ আপনার পরিজনের মধ্যে বরকত ও কল্যাণ দান করুন! ভাই, এসব কোন কিছুর প্রয়োজন আমার নেই। আমাকে শুধু বাজারের পথটি দেখিয়ে দিন।’

ইসলামী ভ্রাতৃত্বে হযরত সা’দের এ দৃঢ় আস্থা ও অতুলনীয় উদারতার দৃষ্টান্ত ইসলামী উম্মাহ তথা মানব জাতির ইতিহাসে বিরল। অন্যদিকে হযরত আবদুর রহমানের মহত্ব, আত্মনির্ভরতা ও নিজ পায়ে দাঁড়ানোর দৃঢ় সংকল্পও বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়।

মদীনায় অবস্থানের দ্বিতীয় দিন আবদুর রহমান তাঁর আনসারী ভাই সা’দকে জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘‘বেচাকেনা হয় এমন কোন বাজার কি এখানে আছে?’’ বললেনঃ ‘‘হাঁ, ইয়াসরিবে (মদীনায়) কায়নুকার বাজার তো আছে।’’ হযরত আব্দুর রহমান এক স্থান থেকে কিছু ঘি ও পনির খরিদ করে বাজারে যান। দ্বিতীয় দিনও তিনি এমনটি করলেন। এভাবে তিনি বেচাকেনা জারি রাখেন। কিছু পয়সা হাতে জমা হলে তিনি এক আনসারী মহিলাকে বিয়ে করেন।

বিয়ের পর তিনি একদিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর খিদমতে হাজির হলেন। তাঁর কাপড়ে হলুদের দাগ দেখে রাসূল (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘তুমি কি বিয়ে করেছ?’ বললেনঃ ‘হাঁ’। জিজ্ঞেস করলেনঃ কাকে?’ তিনি বললেনঃ ‘এক আনসারী মহিলাকে।’ রাসূল (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘মোহর কত নির্ধারণ করেছ?’ তিনি বললেনঃ ‘কিছু সোনা।’ অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ ‘একটি ছাগল দিয়ে হলেও ওয়ালিমা করে নাও।’

তিনি ব্যবসা চালিয়ে যেতে থাকলেন। কিছুদিন পর তার হাতে আরও কিছু অর্থ জমা হলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নির্দেশমত ওয়ালিমার কাজটি সেরে নেন। ধীরে ধীরে তাঁর ব্যবসা আরও সম্প্রসারিত হয়। মক্কার উমাইয়া ইবন খালফের সাথে একটি ব্যবসায়িক চুক্তিও সম্পাদন করেন।

হযরত আবদুর রহমান ইবন আউফ বদর, উহুদ ও খন্দক সহ সকল যুদ্ধেই অংশগ্রহণ করেন এবং অত্যন্ত সাহস ও দৃঢ়তার পরিচয় দেন। ইমাম বুখারী ‘কিতাবুল মাগাজী’তে বদর যুদ্ধের একটি ঘটনা তাঁরই যবানে এভাবে বর্ণনা করেছেনঃ ‘‘বদর যুদ্ধে, আমি সারিতে দাঁড়িয়ে। তুমুল লড়াই চলছে। আমি ডানে বাঁয়ে তাকিয়ে আমার দু’পাশে দুই নওজোয়ানকে দেখলাম। তাদের ওপর আমার খুব একটা আস্থা হলো না। তাদের একজন ফিসফিস করে আমাকে জিজ্ঞেস করলোঃ ‘‘চাচা, বলুন তো আবু জাহল কোন দিকে?’’ বললামঃ ‘‘ভাতিজা, তাকে দিয়ে কি করবে?’’ সে বললোঃ ‘‘আমি আল্লাহর সাথে অংগীকার করেছি, হয় আমি তাকে কতল করবো, না হয় এ উদ্দেশ্যে আমার নিজের জীবন কুরবান করবো।’’ একই কথা ফিসফিস করে আমাকে বলল অন্যজনও। আবদুর রহমান বলেনঃ ‘‘তাদের কথা শোনার পর আমার আনন্দ হলো এই ভেবে যে, কত মহান দু’ব্যক্তির মাঝখানেই না আমি দাঁড়িয়ে। আমি ইশারা করে আবু জাহলকে দেখিয়ে দিলাম। অকস্মাৎ তারা দু’জন একসাথে বাজপাখীর মত আবু জাহলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মুহূর্তের মধ্যেই তাকে কতল করে। এ দু’নওজোয়ান ছিল আফরার দু’পুত্র মুয়ায ও মু’য়াওবিয।’ বদর যুদ্ধে আবদুর রহমান পায়ে আঘাত পান।

উহুদের যুদ্ধেও তিনি অংশগ্রহণ করেন। এ যুদ্ধেও তিনি অসম সাহসিকতা প্রদর্শন করেন। রাসূল (সাঃ) উহুদ পর্বতের এক কোণে আশ্রয় নিয়েছেন, উবাই ইবন খালফ এগিয়ে এলো আল্লাহর রাসূল (সাঃ)-কে শহীদ করার উদ্দেশ্যে। আবদুর রহমান তাকে জাহান্নামে পাঠাবার উদ্দেশ্যে অগ্রসর হলে রাসূল (সাঃ) তাঁকে বাধা দেন। অতঃপর রাসূল (সাঃ) নিজেই হারিস ইবন সাম্মার নিকট থেকে বর্শা নিয়ে উবাই ইবন খালফের গর্দানে ছুড়ে মারেন। সামান্য আহত হয়ে সে চেঁচাতে চেঁচাতে পালিয়ে যায় এবং মক্কার পথে ‘সারফ’ নামক স্থানে নরক যাত্রা করে।

ইবন সা’দ ‘তাবাকাতুল কুবরা’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, উহুদের যুদ্ধে আবদুর রহমান অসীম সাহস ও বীরত্বের পরিচয় দেন। বালাযুরী তাঁর ফুতুহুল বুলদান, ইবনে হাজার তাঁর আল-ইসাবা এবং ইবন খালদুন তাঁর তারীখে বর্ণনা করেছেন, এ যুদ্ধে তিনি সারা দেহে মোট একত্রিশটি আঘাত পান।

ষষ্ঠ হিজরীর শাবান মাসে রাসূল (সাঃ) মদীনা থেকে প্রায় তিনশো মাইল উত্তরে ‘দুমাতুল জান্দালে’ একটি অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিলেন। এ বাহিনীর পরিচালনার দায়িত্ব দেন আবদুর রহমানকে। যাত্রার পূর্বে তিনি উপস্থিত হলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট। রাসূল (সাঃ) নিজ হাতে আবদুর রহমানের মাথার পাগড়ীটা খুলে রেখে দিয়ে অন্য একটি কালো পাগড়ী তার মাথায় বেঁধে দেন। তারপর যুদ্ধের পলিসি সংক্রান্ত কিছু হিদায়াত দিয়ে তিনি আবদুর রহমানকে (রা.) বিদায় দেন।

মক্কা বিজয়ের সময় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মুহাজিরদের যে ছোট্ট দলটির সংগে ছিলেন, আবদুর রহমানও ছিলেন সেই দলে।

মক্কা বিজয়ের পর রাসূল (সাঃ) আরব উপদ্বীপে দাওয়াতী কাজের জন্য কতকগুলি তাবলীগী গ্রুপ বিভিন্ন দিকে পাঠান। তখনও আরব গোত্রগুলি মূর্খতা ও আসাবিয়্যাতের মধ্যে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। এ কারণে রাসূল (সাঃ) তাবলীগী গ্রুপগুলিকে সশস্ত্র অবস্থায় পাঠলেন। যাতে প্রয়োজনে তারা আত্মরক্ষা করতে পারে। এরকম তিরিশ সদস্য বিশিষ্ট একটি দলকে হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদের নেতৃত্বে বনু খুযায়মার লোকদের নিকট পাঠানো হলো। কিন্তু হযরত খালিদ ও বনু খুযায়মার মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে হযরত খালিদ বনু খুযায়মার ওপর হামলা করে তাদের বহু লোককে হতাহত করেন। এ ঘটনা অবগত হয়ে রাসূল (সাঃ) হযরত খালিদকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং তার ভুলের জন্য আল্লাহর নিকট মাগফিরাত কামনা করেন। রাসূল (সাঃ) নিহত ব্যক্তিদের দিয়াত আদায় করেন। এমনকি কারও একটি কুকুরও মারা গিয়ে থাকলে তারও বিনিময় মূল্য আদায় করা হয।

বনু খুযায়মার এ দুর্ঘটনা নিয়ে খালিদ ও আবদুর রহমানের মধ্যে বচসা ও বিতর্ক হয়। এ কথা রাসূল (সাঃ) অবগত হয়ে খালিদকে ডেকে তিরস্কার করেন। তিনি বলেনঃ ‘তুমি সাবেকীনে আওয়াবীন’ (প্রথম পর্বে ইসলাম গ্রহণকারী) একজন সাহাবীর সাথে ঝগড়া ও তর্ক করেছ। এমনটি করা তোমার শোভন হয়নি। আল্লাহর কসম, যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ সোনার মালিকও তুমি হও এবং তার সবই আল্লাহর রাস্তায় বিলিয়ে দাও, তবুও তুমি আমার সেসব প্রবীণ সাহাবীর একজনেরও সমকক্ষ হতে পারবে না।’ উল্লেখ থাকে যে, হযরত খালিদ আহযাবের যুদ্ধের পর ষষ্ঠ হিজরীতে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।

নবম হিজরীতে তাবুক অভিযানের সময় মুসলমানগণ যে ঈমানী পরীক্ষার সম্মুখীন হয়  সে পরীক্ষায়ও তিনি কৃতকার্য হন। রাসূলুল্লাহর (সাঃ) আবেদনে সাড়া দিয়ে এ অভিযানের জন্য হযরত আবু বকর, উসমান ও আবদুর রহমান (রা.) রেকর্ড পরিমাণ অর্থ প্রদান করেন। আবদুর রহমান আট হাজার দিনার রাসূলুল্লাহর (সাঃ) হাতে তুলে দিলে মুনাফিকরা কানাঘুষা শুরু করে দেয়। তারা বলতে থাকে, ‘সে একজন রিয়াকার- লোক দেখানোই তার উদ্দেশ্য।’ তাদের জবাবে আল্লাহ বলেনঃ ‘এ তো সেই ব্যক্তি যার উপর আল্লাহর রহমত নাযিল হতে থাকবে।’ (সূরা তাওবাহঃ ৭১) অন্য একটি বর্ণনায় আছে, উমার (রা.) তাঁর এ দান দেখে বলে ফেলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে আবদুর রহমান গুনাহগার হয়ে যাচ্ছে। কারণ, সে তার পরিবারের লোকদের জন্য কিছুই রাখেনি।’ একথা শুনে রাসুল (সাঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ ‘আবদুর রহমান, পরিবারের জন্য কিছু রেখেছ কি?’ তিনি বলেনঃ ‘হাঁ।’ আমি যা দান করেছি তার থেকেও বেশী ও উৎকুষ্ট জিনিস তাদের জন্য রেখেছি।’ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘কত?’ বললেনঃ ‘আল্লাহ ও তার রাসূল যে রিযিক, কল্যাণ ও প্রতিদানের অঙ্গীকার করেছেন, তাই।’

এ তাবুক অভিযানকালে একদিন ফজরের নামাযের সময় রাসূল (সাঃ) প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাইরে যান। ফিরতে একটু দেরি হয়। এদিকে নামাযের সময়ও হয়ে যায়। তখন সমবেত মুসল্লীদের অনুরোধে আবদুর রহমান ইমাম হিসাবে নামাযে দাড়িয়ে যান। এদিকে রাসুল (সাঃ) ফিরে এলেন, এক রাকায়াত তখন শেষ। আবদুর রহমান রাসূলুল্লাহর (সাঃ) উপস্থিতি অনুভব করে পেছন দিকে সরে আসার চেষ্টা করেন। রাসূল (সাঃ) তাঁকে নিজের স্থানে থাকার জন্য হাত ইশারা করেন। অতঃপর অবশিষ্ট দ্বিতীয় রাকা’আতটিও তিনি শেষ করেন এবং রাসুল (সাঃ) তাঁর পেছনে ইকতিদা করেন। ইমাম মুসলিম ও আবু দাউদ তাঁদের সহীহ গ্রন্থদ্বয়ে এ সম্পর্কিত হাদিস বর্ণনা করেছেন।

প্রথম খলীফা হযরত আবু বকর (রা.) অন্তিম রোগশয্যায়। জীবনের আশা আর নেই। তাঁর পর খলীফা কে হবেন সে সম্পর্কে ‍চিন্তাশীল বিশিষ্ট সাহাবীদের ডেকে পরামর্শ করলেন। হযরত আবদুর রহমানের সাথেও পরামর্শ করেন এবং হযরত উমারের কিছু গুণাবলী তুলে ধরে পরবর্তী খলীফা হিসাবে তাঁর নামটি তিনি প্রস্তাব করেন। আবদুর রহমান ধৈর্য্য সহকারে খলীফার কথা শুনার পর বললেনঃ ‘আপনি ঠিকই বলেছেন। তাঁর যোগ্যতা সম্পর্কে কোন সন্দেহ নেই। তবে স্বভাবগতভাবেই তিনি একটু কঠোর।’

হযরত আবু বকরের (রা.) খিলাফতকালে আটজন বিশিষ্ট সাহাবীকে ফাতওয়া ও বিচারের দায়িত্ব প্রদানের সাথে সাথে অন্য সকলকে ফাতওয়া দান থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। আবদুর রহমান ছিলেন এ আটজনের একজন।

হযরত উমারও তাঁর খিলাফতকালে জ্ঞান ও বিচক্ষণতার অধিকারী সাহাবীদের ছাড়া অন্য সকলকে বিচার কাজ থেকে বিরত রাখেন। এমনকি যে আবদুল্লাহ ইবন মাসউদকে তিনি ‘খাযিনাতুল ইলম’ (জ্ঞানের ভাণ্ডার) বলে অভিহিত করতেন, তিনিও যখন পূর্ব অনুমতি ছাড়াই ফাতওয়া দিতে শুরু করেন, তাঁকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। জ্ঞানের যে শাখায় যিনি বিশেষজ্ঞ ছিলেন হযরত উমার তাকেই কেবল সে বিষয়ে মতামত প্রকাশের অনুমতি প্রদান করেন। এ সম্পর্কে সিরিয়া সফরকালে ‘জাবিয়া’ নামক স্থানে এক বক্তৃতায় বলেনঃ ‘যারা কুরআন বুঝতে চায়, তারা উবাই বিন কা’ব, যারা ফারায়েজ সম্পর্কে জানতে চায়, তারা যায়িদ বিন সাবিত এবং যারা ফিকহ সংক্রান্ত বিষয়ে অবগত হতে চায়, তারা মুয়ায বিন জাবাল ও আবদুর রহমান বিন ’আউফের সাথে যেন সম্পর্ক গড়ে তোলে।’

খলীফা হযরত উমার হযরত আবদুর রহমানকে বিশেষ উপদেষ্টার মর্যাদা দেন। রাতে তিনি যখন ঘুরে ঘুরে নগরের মানুষের অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিতেন, অনেক সম সংগে নিতেন হযরত আবদুর রহমানকে এবং নানা বিষয়ে তাঁর সাথে পরামর্শ করতেন।

একদিন রাতে খলীফা উমার বের হলেন আবদুর রহমানকে সংগে নিয়ে নগর পরিভ্রমণে। দূর থেকে তাঁরা লক্ষ্য করলেন একটি বাড়ীতে আলো। কাছে গিয়ে দেখলেন বাড়ীর দরজা-জানালা সব বন্ধ; কিন্তু ভেতর থেকে কিছু লোকের উচ্চকণ্ঠ ভেসে আসছে। খলীফা উমার আবদুর রহমানকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি ভেতর থেকে আসা আওয়ায শুনতে পাচ্ছেন?

- ‘জী হ্যাঁ, শুনতে পাচ্ছি।’
- ‘কি বলছে, তা-কি বুঝতে পারছেন?’
- ‘সমবেত কণ্ঠের আওয়ায। কেবল শোরগোল শোনা যাচ্ছে। কি বলছে তা বুঝা যাচ্ছে না।’
- ‘আপনি কি জানেন বাড়ীটি কার?’
- ‘বাড়ীটি তো রাবীয়া’ ইবন উমাইয়্যার।’
-উমার বলেন, ‘সম্ভবতঃ তারা মদপান করে মাতলামি করছে। আপনার কি মনে হয়?’
- ‘‘আল্লাহ আমাদেরকে গুপ্তচরবৃত্তি থেকে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেনঃ ওয়ালা তাজাসসাসূ (গুপ্তচর বৃত্তি করোনা) এবং ওয়ালা তাকফু মা লাইসা লাকা বিহি ইলমুন (যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই, তার অনুসরণ করো না)।’’

এ কথা শুনে উমার বললেনঃ ‘আপনি ঠিক বলেছেন এবং যথাসময়ে স্মরণ করে দিয়েছেন।’- এই বলে তিনি আবদুর রহমানকে সংগে নিয়ে সামনে অগ্রসর হন। হযরত আবদুর রহমান এ ক্ষেত্রে যে আয়াত দু’টি আমীরুল মুমিনীনকে স্মরণ করে দেন, তা হচ্ছে মুসলিম সমাজ জীবনে ব্যক্তির বুনিয়াদী অধিকারের প্রাণস্বরূপ।

১৬ হিজরী সনে ইরাক বিজয়ের ফলে ইরাকে কিসরা শাহানশাহীর পতন হয় এবং ইয়ারমুকে যুদ্ধের পর সিরিয়া থেকে রোমের কাইসার সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। খলীফা জিযিয়া ও খারাজ নির্ধারণের ব্যাপারে উদ্যোগী হন। কিন্তু এ ব্যাপারে তিনি সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদ, বিলাল ও আবদুর রহমানের প্রবল প্রতিবাদের সম্মুখীন হন। অবশেষে মজলিসে শূরার ক্রমাগত বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনার পর খলীফার মতামতই গৃহীত হয়।

খলীফা হযরত উমার রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাহাবীদের ভাতা নির্ধারণের ইচ্ছা করলেন। এ ইচ্ছা তিনি ব্যক্ত করলেন হযরত আবদুর রহমানের নিকট। তিনি পরামর্শ দিলেন, কুষ্ঠি বিদ্যায় পারদর্শী তিন ব্যক্তি- মাখযামা ইবন নাওফিল, খায়বর ইবন মাতয়াম এবং আকীল ইবন আবু তালিবের ওপর একটি তালিকা প্রণয়নের দায়িত্ব অর্পণের জন্য। তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী খলীফা তাঁদেরকে দায়িত্ব প্রদান করলেন। তাঁরা তালিকা প্রণয়ন করে খলীফার নিকট পেশ করলে আমীরুল মুমিনীন ও আবদুর রহমান দু’জনেই তা পরীক্ষা করেন। হযরত উমার তালিকা দেখার পর বললেনঃ ‘‘বর্তমান তালিকার ক্রমধারা পরিবর্তন করে আমার নিজের ও আমার গোত্রীয় অন্য লোকদের নাম রাসূল (সাঃ) এর সাথে বংশগত সম্পর্কে দিক দিয়ে যখন আসবে তখন লিখবে’ হযরত আলী ও হযরত আবদুর রহমান আপত্তি করে বললেনঃ ‘আপনি আমীরুল মুমিনীন। তালিকার সূচনা আপনার নাম দিয়েই হওয়া উচিত।’ তিনি বললেনঃ ‘‘না।রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর চাচা আব্বাস (রা.) থেকে শুরু কর, তারপর আলীর (রা.) নামটি লিখ।’ ভাতার পরিমাণ তিনি আবদুর রহমানের সাথে পরামর্শ করেই নির্ধারণ করেন। তারপর তা মজলিসে শূরায় পেশ করেন।

আযওয়াজে মুতাহহারাত (রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সহধর্মিণীগণ) বেশ আগে থেকেই হজ্জ্ব পালনের ইচ্ছা প্রকাশ করছিলেন। তেইশ হিজরী সনে খলীফা উমার তাঁদের হজ্জ্ব আদায়ের ব্যবস্থা চূড়ান্ত করেন। তিনি নিজেও তাঁদের সফরসংগী হন। তাঁদের সফর ব্যবস্থাপনার যাবতীয় দায়িত্ব হযরত আবদুর রহমান ও হযরত উসমানের (রা.) ওপর অর্পণ করেন। সফরের সময় আবদুর রহমান কাফিলার আগে এবং উসমান পেছনে সশস্ত্র অবস্থায় পাহারা দিয়ে চলতেন। কোন ব্যক্তিকে তাঁদের উটের কাছে ঘেঁষতে দিতেন না। তাঁরা যখন কোথাও অবস্থান করতেন, এরা দু’জন তাঁবুর প্রহরায় নিয়োজিত থাকতেন।

হযরত উমার তাঁর খিলাফতের প্রথম বছর আবদুর রহমানকে আমীরে হজ্জ নিয়োগ করে মক্কায় পাঠান। আর তাঁর সাথে পাঠান নিজের পক্ষ থেকে কুরবানীর একটি পশু। এ বছর বিশ্ব মুসলিম তাঁর নেতৃত্বেই হজ্জ্ব আদায় করে।

লীফা হযরত উমার (রা.) ফজরের জামায়াতে ইমামতি করছিলেন। ‍মুগীরা ইবন শু’বার পারসিক দাস ফিরোয তাকে ছুরিকাঘাত করে। আহত অবস্থায় সংগে সংগে তিনি পেছনে দণ্ডায়মান আবদুর রহমানের হাতটি ধরে নিজের স্থানে তাঁকে দাঁড় করে দেন এবং তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। অতঃপর আবদুর রহমান অবশিষ্ট নামায দ্রুত শেষ করেন।

হযরত উমার আহত হওয়ার দশ ঘন্টা পর সমবেত লোকদের বললেনঃ ‘আপনারা যেমন বলতেন আমিও চাচ্ছিলাম, এ উম্মাতের বোঝা বহনের ক্ষমতা রাখে এমন এক ব্যক্তিকে আমি আমীর বানিয়ে যাই। পরে আমি চিন্তা করলাম, এমনটি করলে আমার মৃত্যুর পরও এর দায়-দায়িত্ব আমার ওপর বর্তাবে। এ কারণে, আমার সাহস হলো না। এ ছ’ব্যক্তি- আলী, উসমান, আবদুর রহমান, সা’দ, যুবাইর ও তালহা। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) তাদেরকে জান্নাতী হওয়ার সুসংবাদ দিয়েছেন। তাদের কোন একজনকে আপনারা আমীর নির্বাচন করে নেবেন। এ ছ’জন ছাড়া আমার পুত্র আবদুল্লাহও আছে। তবে খিলাফতের সাথে তার কোন সম্পর্ক থাকবে না। উল্লেখিত ছয় ব্যক্তি যদি খলীফা নির্বাচনের ব্যাপারে তিনজন করে সমান দু’দলে বিভক্ত হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে আবদুল্লাহ যে দকে সমর্থন করবে সে দল থেকেই খলীফা হবে। কিন্তু আবদুল্লাহর মতামত যদি সর্বসাধারণের নিকট গৃহীত না হয় তাহলে আবদুর রহমান যে দলে থাকবেন তাঁদের মতই গ্রহণযোগ্য হবে।’ হযরত উমারের এ পরামর্শের মধ্যে আবদুর রহমান সম্পর্কে তাঁর ধারণা স্পষ্ট হয়ে উঠে।

হযরত উমার ইনতিকাল করলেন। আবদুর রহমান খলীফা হতে রাজি ছিলেন না। এদিকে হযরত তালহাও তখন মদীনায় ছিলেন না। অবশিষ্ট চার ব্যক্তি খলীফা নির্বাচনের পূর্ণ দায়িত্ব আবদুর রহমানের ওপর ন্যস্ত করেন।

হযরত আবদুর রহমানের ওপর অর্পিত এ দায়িত্ব তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠা ও আমানতদারীর সাথে পালন করেন। ক্রমাগত তিন দিন তিন রাত বিভিন্ন স্তরের লোকদের সাথে মত বিনিময় করেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ হযরত উসমানের পক্ষেই মত ব্যক্ত করেন। অবশেষে উমারের নির্ধারিত সময় তিন দিন তিন রাত শেষ হওয়ার আগে তিনি মানুষকে ফজরের জামায়াতে শরীক হওয়ার জন্য আবেদন জানান। নামায শেষে তিনি সমবেত জনমণ্ডলীর সামনে খলীফা হিসাবে হযরত উসমানের নামটি ঘোষণা করেন। হযরত উমারের ছুরিকাহত হওয়ার পর থেকে তাঁরই নির্দেশে তৃতীয় খলীফা হিসাবে উসমানের (রা.) নাম ঘোষিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি জামায়াতের ইমামতি করেন এবং প্রশাসনের যাবতীয় দায়িত্ব পালন করেন।

চব্বিশ হিজরী সনের মুহাররম মাসে হযরত উসমান খলীফা নির্বাচিত হন। সে বছরই তিনি আবদুর রহমানকে আমীরুল হজ নিযুক্ত করেন। মুসলিম উম্মাহ সে বছরের হজটি তাঁরই নেতৃত্বে আদায় করে।

হযরত আবদুর রহমান আমরণ খলীফা উসমানের মজলিসে শূরার সদস্য থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরামর্শ দানের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর বিশেষ খিদমাত আঞ্জাম দেন। হযরত আবু বকর, উমার, উসমান (রা.) এ তিন খলীফার প্রত্যেকের নিকটই তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিশ্বাসভাজন ও আস্থার পাত্র।

ইবন সা’দের মতে, হযরত আবদুর রহমান হিঃ ৩২ সনে ৭৫ বছর বয়সে ইনতিকাল করেন। তবে ইবন হাজারের মতে, তিনি ৭২ বছর জীবন লাভ করেছিলেন। ইবন হাজার এ কথাও বলেছেন, হযরত উসমান অথবা যুবাইর ইবনুল আওয়াম তাঁর জানাযার ইমামতি করেন এবং তাঁকে মদীনার বাকী’ গোরস্থানে দাফন করা হয়। গোরস্থান পর্যন্ত তার লাশ বহনকারীদের মধ্যে প্রখ্যাত সাহাবী হযরত সা’দ ইবন আবী ওয়াক্কাসও ছিলেন।

পূর্বেই আমরা দেখেছি সম্পূর্ণ রিক্ত হস্তে আবদুর রহমান মদীনায় এসেছিলেন। সামান্য ঘি ও পনির কেনাবেচার মাধ্যমে তিনি তাঁর ব্যবসা শুরু করেন। কালক্রমে তিনি তৎকালীন মুসলিম উম্মাহর একজন সেরা ব্যবসায়ী ও ধনাঢ্য ব্যক্তিকে পরিণত হন। রাসূল (সাঃ) তাঁর সম্পদ বৃদ্ধির জন্য দুআ করেছিলেন এবং সে দুআ আল্লাহর দরবারে কবুলও হয়েছিল। কিন্তু সে সম্পদের প্রতি তাঁর একটুও লোভ ও আকর্ষণ সৃষ্টি হয়নি। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জীবদ্দশায় এবং তাঁর ইনতিকালের পরেও আমরণ তিনি সে সম্পদ অকৃপণ হাতে আল্লাহর পথে ও মানব কল্যাণে ব্যয় করেছেন।

একবার রাসূল (সাঃ) একটি অভিযানের সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি বলেনঃ ‘আমি একটি অভিযানে সৈন্য পাঠানোর ইচ্ছা করেছি, তোমরা সাহায্য কর।’ আবদুর রহমান এসে দৌড়ে বাড়ীতে গিয়ে আবার ফিরে এসে বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমার কাছে এ চার হাজার আছে। দু’হাজার আমার রবকে করজে হাসানা দিলাম এবং বাকী দু’হাজার আমার পরিবার-পরিজনদের জন্য রেখে দিলাম।’ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ ‘তুমি যা দান করেছ এবং যা রেখে দিয়েছ, তার সবকিছুতে আল্লাহ তা’আলা বরকত দান করুন।’

একবার মদীনায় শোরগোল পড়ে গেল, সিরিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য নিয়ে একটি বাণিজ্য কাফিলা উপস্থিত হয়েছে। শুধু উট আর উট। উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা (রা.) জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘এ কার বাণিজ্য কাফিলা?’ লোকেরা বললোঃ ‘আবদুর রহমান ইবন আউফের।’ তিনি বললেনঃ আমি রাসূলকে (সাঃ) বলতে শুনেছি, আমি যেন আবদুর রহমানকে সিরাতের ওপর একবার হেলে গিয়ে আবার সোজা হয়ে উঠতে দেখলাম।’ অন্য একটি বর্ণনায় আছে, হযরত আয়িশা বলেনঃ ‘আল্লাহ দুনিয়াতে তাকে যা কিছু দিয়েছেন তাতে বরকত দিন এবং তাঁর আখিরাতের প্রতিদান এর থেকেও বড়। আমি রাসূলুল্লাহকে (সাঃ) বলতে শুনেছিঃ আবদুর রহমান হামাগুড়ি দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’

হযরত আয়িশার এ কথাগুলো আবদুর রহমানের কানে গেল। তিনি বললেনঃ ‘ইনশাআল্লাহ আমাকে সোজা হয়েই জান্নাতে প্রবেশ করতে হবে।’ অতঃপর তিনি তাঁর সকল বাণিজ্য সম্ভার সাদকা করে দেন। পাঁচশো, মতান্তরে সাতশো উটের পিঠে এ মালামাল বোঝাই ছিল। কেউ বলেছেন, বাণিজ্য সম্ভারের সাথে উটগুলিও তিনি সাদকা করে দেন। হযরত আবদুর রহমান ছিলেন উম্মাহাতুল মুমিনীনের প্রতি নিবেদিত প্রাণ। তাঁদের সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য তিনি আজীবন অকাতরে খরচ করেছেন। তাঁদের নিকট তিনি ছিলেন একজন বিশ্বাসী ও আস্থাভাজন ব্যক্তি। একবার তিনি কিছু ভূমি চল্লিশ হাজার দীনারে বিক্রি করেন এবং বিক্রয়লব্ধ সমুদয় অর্থ বনু যুহরা (রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জননী হযরত আমিনার পিতৃ-গোত্র), মুসলিম, ফকীর মিসকীন, মুহাজির ও আযওয়াজে মুতাহহারাতের মধ্যে বণ্টন করে দেন। হযরত আয়িশার নিকট তাঁর অংশ পৌঁছলে তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘কে পাঠিয়েছে?’ বলা হলোঃ ‘আবদুর রহমান ইবন আওফ।’ তিনি বলেনঃ ‘রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘আমার পরে ধৈর্যশীলরাই তোমাদের প্রতি সহানুভূতি দেখাবে।’

ইবন হাজার ‘আল-ইসাবা’ গ্রন্থে জা’ফর ইবন বারকানের সূত্রে উল্লেখ করেছেনঃ আবদুর রহমান মোট তিরিশ হাজার দাস মুক্ত করেছেন। জাহিলী যুগেও মদ পানকে তিনি হারাম মনে করতেন।

হযরত আবদুর রহমান ছিলেন তাকওয়া ও আল্লাহভীতির এক বাস্তব নমুনা। মক্কায় গেলে তিনি তাঁর আগের বাড়ী-ঘরের দিকে ফিরেও তাকাতেন না। লোকেরা জিজ্ঞেস করলোঃ ‘আপনার বাড়ী-ঘরের প্রতি আপনি এত নাখোশ কেন?’ তিনি বললেনঃ ‘ওগুলি তো আমি আমার আল্লাহর জন্য ছেড়ে দিয়েছি।’

একবার তিনি তাঁর বন্ধুদের দাওয়াত দিলেন। ভালো ভালো খাবার এলো। খাবার দেখে তিনি কান্না শুরু করে দিলেন। লোকেরা জিজ্ঞেস করলোঃ ‘কি হয়েছে?’ তিনি বলেনঃ ‘রাসূল (সাঃ) বিদায় নিয়েছেন। তিনি নিজের ঘরে যবের রুটিও পেট ভরে খেতে পাননি।’

একদিন তিনি সাওম পালন করছিলেন। ইফতারের পর তাঁর সামনে আনীত খাবারের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ ‘মুসয়াব ইবন উমায়ের ছিলেন আমার থেকেও উত্তম মানুষ। তিনি শহীদ হলে তাঁর জন্য মাত্র ছোট্ট একখানা কাফনের কাপড় পাওয়া গিয়েছিল। তা দিয়ে মাথা ঢাকলে পা এবং পা ঢাকলে মাথা বেরিয়ে যাচ্ছিল। তারপর আল্লাহ তা’আলা আমাদের জন্য দুনিয়ার এ প্রাচুর্য দান করলেন। আমার ভয় হয়, আমাদের বদলা না জানি দুনিয়াতেই দিয়ে দেওয়া হয়।’ অতঃপর তিনি হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন।

হযরত উমার তাঁর সম্পর্কে মন্তব্য করেছেনঃ ‘আবদুর রহমান মুসলিম নেতৃবৃন্দের একজন।’ হযরত আলী একটি ঘটনা বর্ণনা প্রসংগে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেনঃ ‘আবদুর রহমান আসমান ও যমীনের বিশ্বাসভাজন ব্যক্তি।’
হযরত আবদুর রহমান রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে সরাসরি ও উমার (রা.) থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাঁর থেকে তাঁর পুত্রগণ, যেমন ইবরাহীম, হুমায়েদ, উমার, মুসয়াব, আবু সালামা, তাঁর পৌত্র মিসওয়ার, ভাগ্নে মিসওয়ার ইবন মাখরামা এবং ইবন আব্বাস, ইবন উমার, জুবাইর, জাবির, আনাস, মালিক ইবন আওস (রা.) প্রমুখ সাহাবীগণ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাঁর বড় পরিচয়, তিনি আশারায়ে মুবাশশারার একজন।

তালহা ইবন উবাইদুল্লাহ (রা.)

তালহা ইবন উবাইদুল্লাহ (রা.)

আবু মুহাম্মাদ তালহা তাঁর নাম। পিতা উবাইদুল্লাহ এবং মাতা সাবা। কুরাইশ গোত্রের তাইম শাখার সন্তান। হযরত আবু বকরও (রা.) ছিলেন এই তাইম কবীলার লোক। তাঁর মা সাবা ছিলেন প্রখ্যাত শহীদ সাহাবী হযরত আলা ইবন হাদরামীর বোন।

হযরত তালহা ইসলামের সূচনা পর্বেই মাত্র পনেরো বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। হযরত আবু বকর সিদ্দীকের (রা.) দাওয়াতে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। জাহিলী যুগে আবু বকরের বাড়ীতে অনুষ্ঠিত বৈঠকের তিনি ছিলেন নিয়মিত সদস্য।

তাঁর ইসলাম গ্রহণের ঘটনাটি বড় চমকপ্রদ। তিনি গেছেন কুরাইশদের বাণিজ্য কাফিলার সাথে সিরিয়া। তাঁরা যখন বসরা শহরে পৌঁছলেন, দলের অন্য কুরাইশ ব্যবসায়ীরা তাঁর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাজারের বিভিন্ন স্থানে কেনা-বেচায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তিনি বাজারের মধ্যে ঘুরাফেরা করছেন, এমন সময় যে ঘটনাটি ঘটলো তা তালহার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিল। তিনি বলেনঃ আমি তখন বসরার বাজারে। একজন খৃষ্টান পাদ্রীকে ঘোষণা করতে শুনলামঃ “‘ওহে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়! আপনারা এ বাজারে আগত লোকদের জিজ্ঞেস করুন, তাদের মধ্যে মক্কাবাসী কোন লোক আছে কিনা?’ আমি নিকটেই ছিলাম। দ্রুত তার কাছে গিয়ে বললামঃহ্যাঁ, আমি মক্কার লোক।জিজ্ঞেস করলেনঃতোমাদের মধ্যে আহমাদ কি আত্মপ্রকাশ করেছেন?’ বললামঃ কোন আহমাদ?’ বললেনঃআবদুল্লাহ ইবন আবদিল মুত্তালিবের পুত্র। যে মাসে তিনি আত্মপ্রকাশ করবেন, এটা সেই মাস। তিনি হবেন শেষ নবী। মক্কায় আত্মপ্রকাশ করে কালো পাথর ও খেজুর উদ্যান বিশিষ্ট ভূমির দিকে হিজরাত করবেন। যুবক, খুব তাড়াতাড়ি তোমার তাঁর কাছে যাওয়া উচিত।তালহা বলেনঃতাঁর এ কথা আমার অন্তরে দারুণ প্রভাব সৃষ্টি করলো। আমি আমার কাফিলা ফেলে রেখে বাহনে সওয়ার হলাম। বাড়ীতে পৌঁছেই পরিবরের লোকদের কাছে জিজ্ঞেস করলামঃ ‘আমার যাওয়ার পর মক্কায় নতুন কিছু ঘটেছে কি?’ তারা বললোঃ হ্যাঁ, মুহাম্মাদ ইবন আবদিল্লাহ নিজেকে নবী বলে দাবী করেছে এবং আবু কুহাফার ছেলে আবু বকর তাঁর অনুসারী হয়েছে।’”

তালহা বলেনঃ আমি আবু বকরের কাছে গেলাম এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, এ কথা কি সত্যি যে, মুহাম্মাদ নবুওয়্যাত দাবী করেছেন এবং আপনি তাঁর অনুসারী হয়েছেন?’ তিনি বললেনঃ ‘হ্যাঁ।’ তারপর তিনি আমাকেও ইসলামের দাওয়াত দিলেন। আমি তখন খৃষ্টান পাদ্রীর ঘটনা তাঁর কাছে খুলে বললাম। অতঃপর তিনি আমাকে সংগে করে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট নিয়ে গেলেন। আমি সেখানে কালেমা শাহাদাত পাঠ করে ইসলাম গ্রহণ করলাম এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট পাদ্রীর কথা সবিস্তারে বর্ণনা করলাম। শুনে তিনি দারুণ খুশী হলেন। এভাবে আমি হলাম আবু বকরের হাতে ইসলাম গ্রহণকারী চতুর্থ ব্যক্তি।

তালহার ইসলাম গ্রহণে তাঁর মা বড় বেশী হৈ চৈ শুরু করলেন। কারণ, তাঁর বাসনা ছিল, ছেলে হবে গোত্রের নেতা। গোত্রীয় লোকেরা তাঁকে ইসলাম থেকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য চাপাচাপি করে দেখলো তিনি পাহাড়ের মত অটল। সোজা আংগুলে ঘি উঠবে না ভেবে তারা নির্যাতনের পথ বেছে নিল। মাসুদ ইবন খারাশ বলেনঃ একদিন আমি সাফা-মারওয়ার মাঝখানে দৌড়াচ্ছি, এমন সময় দেখলাম, একদল লোক হাত বাঁধা একটি যুবককে ধরে টেনে নিয়ে আসছে। তারপর তাকে উপুড় করে শুইয়ে তার পিঠে ও মাথায় বেদম মার শুরু করলো। তাদের পেছনে একজন বৃদ্ধ মহিলা চেঁচিয়ে গলা ফাটিয়ে তাকে গালাগালি দিচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ ‘ছেলেটির এ অবস্থা কেন?’ তারা বললোঃ ‘এ হচ্ছে তালহা ইবন উবাইদুল্লাহ।’ পৈতৃক ধর্ম ত্যাগ করে বনী হাশিমের সেই লোকটির অনুসারী হয়েছে। এ মহিলাটি কে? তারা বললোঃ ‘সাবা বিনতু আল-হাদরামী---যুবকটির মা।

কুরাইশদের সিংহ বলে পরিচিত নাওফিল ইবন খুয়াইলিদ তালহার কাছে এলো। তাঁকে একটি রশি দিয়ে বাঁধলো এবং সেই একই রশি দিয়ে বাঁধলো আবু বকরকেও। তারপর তাদের দুজনকে সোপর্দ করলো, মক্কার গোঁয়ার লোকদের হাতে নির্যাতন চালানো জন্য। একই রশিতে তাঁদের দুজনকে বাঁধা হয়েছে, তাই তাঁদেরকে বলা হয় কারীনান

ইসলাম গ্রহণের পর এভাবে তিনি আপনজন ও কুরাইশদের যুলুম অত্যাচারের শিকার হন। দীর্ঘ তেরো বছর অসীম ধৈর্যের সাথে সবকিছু সহ্য করেন এবং একনিষ্ঠভাবে ইসলামের তাবলীগ ও প্রচারের কাজ চালিয়ে যান। তিনি মক্কার আশপাশের উপত্যকায় বিদেশী অভ্যাগতদের সন্ধান করতেন, বেদুঈনদের তাঁবু এবং শহরের পরিচিত অংশীবাদীদের গৃহে চুপিসারে উপস্থিত হয়ে তাদের নিকট দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছাতেন। মক্কার দারুল আরকামেঅন্যদের মত তিনিও নিয়মিত যেতেন। ইসলাম ও মুসলিমদের এ দুঃসময়ে আল্লাহর দ্বীনের জন্য তিনি সম্ভাব্য সব ধরণের চেষ্টা ও সাধনা করেছেন।

৬২২ সনের অক্টোবর মাসে আবু বকরকে সংগে করে রাসূল (সাঃ) মক্কা থেকে মদীনায় হিজরাত করেন। তাঁদের এ দুর্গম সফরের পথ প্রদর্শক ছিলেন আবদুল্লাহ ইবন উরায়কাত। তিনি তাঁদেরকে মদীনায় পৌঁছে দিয়ে মক্কায় ফিরে আসেন এবং আবু বকরের পুত্র আবদুল্লাহর নিকট তাঁদের সফরের কাহিনী সবিস্তারে বর্ণনা করেন। হযরত আবু বকরের পরিবার-পরিজন মদীনায় হিজরাতের প্রস্তুতি নিচ্ছেন এমন সময় হযরত তালহা ও সুহায়েব ইবন সিনান তাঁদের সাথে যোগ দেন। তালহা হলেন সেই কাফিলার আমীর। মদীনায় উপস্থিত হয়ে তালহা ও সুহায়েব হযরত আসয়াদ ইবন যারারার বাড়ীতে অবস্থান করতে থাকেন। ইবন হাজার বলেনঃ হিজরাতের পূর্বে মক্কায় তালহা ও যুবাইরের মধ্যে রাসূল (সাঃ) ভ্রাতৃ-সম্পর্ক কায়েম করে দিয়েছিলেন এবং হিজরাতের পর মদীনার প্রখ্যাত আনসারী সাহাবী আবু আইউব আনসারীর সাথে তাঁর ভ্রাতৃ-সম্পর্ক স্থাপিত হয়। অবশ্য অন্য একটি বর্ণনায় জানা যায়, রাসূল (সাঃ) কাব বিন মালিকের সাথে তাঁর ভ্রাতৃ-সম্পর্ক স্থাপন করে দিয়েছিলেন এবং আপন ভায়ের মত আমরণ তাঁদের এ সম্পর্ক অটুট ছিল।

বদর যুদ্ধে তিনি প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ না করলেও পরোক্ষভাবে করেছিলেন। এ কারণে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁকে গণীমতের হিসসা দিয়েছিলেন। যুদ্ধের সময় একদল কাফির মদীনার মুসলিম জনপদের ওপর আক্রমণের ষড়যন্ত্র করেছিল। রাসূল (সাঃ) তাদের খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য তালহাকে পাঠিয়েছিলেন। তালহা ছাড়াও সাত ব্যক্তিকে রাসূল (সাঃ) বিভিন্ন দায়িত্ব দিয়ে বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়েছিলেন। এ কারণে প্রত্যক্ষভাবে তাঁরা যুদ্ধে শরীক হতে পারেননি। তবে তাঁদেরকে বদরী হিসাবে গণ্য করা হয়।

হিজরী তৃতীয় সনে মক্কার মুশরিকদের সাথে সংঘটিত হয় উহুদের যুদ্ধ। এ যুদ্ধে হযরত তালহা বীরত্ব ও সাহসিকতার নজীরবিহীন রেকর্ড স্থাপন করেন। প্রকৃতপক্ষে তিনিই ছিলেন উহুদ যুদ্ধের হিরো। তীরন্দাজ বাহিনীর ভুলের কারণে মুসলিম বাহিনী যখন দারুণ বিপর্যয়ের সম্মুখীন, তখন যে কজন মুষ্টিমেয় সৈনিক আল্লাহর রাসূলকে ঘিরে প্রতিরোধ সৃষ্টি করেন, তালহা তাদের অন্যতম। এ সময় হযরত আম্মার বিন ইয়াযিদ শহীদ হন। কাতাদা বিন নুমারের চোখে কাফিরের নিক্ষিপ্ত তীর লাগলে চক্ষু কোটর থেকে মণিটি বের হয়ে তাঁর গণ্ডের ওপর ঝুলতে থাকে। আবু দুজানা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে তাঁর পুরো দেহটি ঢাল বানিয়ে নেন। এ সময় সাদ বিন আবী ওয়াক্কাস অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে তীর ছুড়ছিলেন। আর তালহা এক হাতে তলোয়ার ও অন্য হাতে বর্শা নিয়ে কাফিরদের ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালান।

যুদ্ধের এক পর্যায়ে আনসারদের বারোজন এবং মুহাজিরদের এক তালহা ছাড়া আর সকলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। রাসূল (সাঃ) পাহাড়ের একটি চূড়ায় উঠলেন, এমন সময় একদল শত্রুসৈন্য তাঁকে ঘিরে ফেললো। রাসূল (সাঃ) তাঁর সংগের লোকদের বললেনঃ যে এদের হটিয়ে দিতে পারবে, জান্নাতে সে হবে আমার সাথী।তালহা বললেনঃ ‘আমি যাব ইয়া রাসূলুল্লাহ।’ রাসূল (সাঃ) বললেনঃ ‘না, তুমি থাম।’ একজন আনসারী বললোঃ ‘আমি যাব।’ বললেনঃ ‘হাঁ, যাও।’ আনসারী গেলেন এবং মুশরিকদের সাথে যুদ্ধ করে শহীদ হলেন। এভাবে বার বার রাসূল (সাঃ) আহ্বান জানালেন এবং প্রত্যেক বারই, তালহা যাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করলেন, কিন্তু রাসূল (সাঃ) তাঁকে নিবৃত্ত করে একজন আনসারীকে পাঠালেন। এভাবে এক এক করে যখন আনসারীদের সকলে শাহাদাৎ বরণ করলেন, তখন রাসূল (সাঃ) তালহাকে বললেনঃ ‘এবার তোমার পালা, যাও।’

হযরত তালহা আক্রমণ চালালেন। রাসূল (সাঃ) আহত হলেন, তাঁর দান্দান মুবারক শহীদ হলো এবং তিনি রক্ত রঞ্জিত হয়ে পড়লেন। এ অবস্থায় তালহা একাকী একবার মুশরিকদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে তাদেরকে একটু দূরে তাড়িয়ে দেন, আবার রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর দিকে ছুটে এসে তাকে কাঁধে করে পাহাড়েরে ওপরের দিকে উঠতে থাকেন এবং এক স্থানে রাসূল (সাঃ)-কে রেখে আবার নতুন করে হামলা চালান। এভাবে সেদিন তিনি মুশরিকদের প্রতিহত করেন। হযরত আবু বকর বলেনঃ ‘এ সময় আমি ও আবু উবাইদা রাসূল (সাঃ) থেকে দূরে সরে পড়েছিলাম। কিছুক্ষণ পর আমরা রসূলের (সাঃ) নিকট ফিরে এসে তাঁকে সেবার জন্য এগিয়ে গেলে তিনি বললেনঃ আমাকে ছাড়, তোমাদের বন্ধু তালহাকে দেখো।” আমরা তাকিয়ে দেখি, তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় একটি গর্তে অজ্ঞান হয়ে আছে। তাঁর একটি হাত দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন প্রায় এবং সারা দেহে তরবারী ও তীর বর্শার সত্তরটির বেশী আঘাত। তাই পরবর্তীকালে রাসূল (সাঃ) তাঁর সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেনঃ ‘যদি কেউ কোন মৃত ব্যক্তিকে পৃথিবীতে হেঁটে বেড়াতে দেখে আনন্দ পেতে চায়, সে যেন তালহা ইবন উবাইদুল্লাহকে দেখে।’ এ কারণে তাঁকে জীবিত শহীদ বলা হতো। হযরত সিদ্দীকে আকবর (রা.) উহুদ যুদ্ধের প্রসংগ উঠলেই বলতেনঃ সে দিনটির সবটুকুই তালহার।এ যুদ্ধে হযরত তালহার কাছে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এত প্রীত হন যে তিনি তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউসের সুসংবাদ দান করেন।

পঞ্চম হিজরী সনের যিলকাদ মাসে আরবের বিভিন্ন গোত্র ও ইহুদীদের সম্মিলিত বাহিনী মদীনা আক্রমণের তোড়জোড় শুরু করে। এদিকে তাদেরকে প্রতিহত করার জন্য রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নেতৃত্বে মুসিলম বাহিনী মদীনার উপকণ্ঠে সালা পর্বতের পাশ দিয়ে পূর্ব পশ্চিমে পাঁচ হাত গভীর খন্দক খননের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এ খন্দক খননের কাজে হযরত তালহাকে ব্যস্ত দেখা যায়। খন্দক খননের কাজ শেষ হতে না হতেই মক্কার কুরাইশ ও অন্যান্য আরব গোত্রের সম্মিলিত বাহিনী মদীনা অবরোধ করে। এদিকে মদীনার অভ্যন্তরে ইহুদী গোত্রগুলি, বিশেষতঃ বনু কুরাইজা চুক্তি ভংগ করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। এ সময় মুসলমানরা ভিতর ও বাইরের শত্রু দ্বারা পরিবেষ্টিত। এমন এক নাজুক পরিস্থিতিতে কিছু সংখ্যক মুসলিম স্ত্রী-পুত্র পরিজনের নিরাপত্তার চিন্তায় স্বাভাবিকভাবেই একটু অস্থির হয়ে পড়েন। কিন্তু অধিকাংশ মুসলিমের মনোবল এবং আল্লাহর প্রতি তাঁদের ঈমান অটল থাকে। তাঁরা নিজেদের জান-মাল সবকিছু আল্লাহর পথে কুরবানী করার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত ছিলেন। হযরত তালহা ছিলেন শেষোক্ত দলের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তায়ালা সূরা আহযাবের দ্বিতীয়  তৃতীয় রুকুতে মুসলিমদের এ সময়কার মানসিক চিত্র সুন্দরভাবে অংকন করেছেন।

খন্দকের ধারে দাঁড়িয়ে কতিপয় মুসলিম আলাপ-আলোচনা করছে। হযরত তালহা যাচ্ছেন পাশ দিয়ে। তাঁর কানে ভেসে এলো, একজন বলছেঃ ‘আমাদের স্ত্রী পরিজনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা উচিত।’ হযরত তালহা একটু থমকে দাঁড়ালেন। বললেনঃ আল্লাহু খায়রুন হাফিজান’- আল্লাহ সর্বোত্তম নিরাপত্তা বিধানকারী। যারা নিজেদের শক্তি ও বাহুবলের ওপর ভরসা করেছে, ব্যর্থ হয়েছে। লোকেরা বললোঃ আপনি ঠিকই বলেছেন। তারা তাদের উদ্দেশ্য থেকে বিরত থাকলো।

বাইয়াতে রিদওয়ান, খাইবার ও মুতাসহ সব অভিযানেই তিনি অংশগ্রহণ করে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। মক্কা বিজয়ের দিন মুহাজিরদের যে ক্ষুদ্র দলটির সাথে রাসূল (সাঃ) মক্কায় প্রবেশ করেন, তালহা ছিলেন সেই দলে এবং রাসূলুল্লাহর (সাঃ) সাথেই তিনি পবিত্র কাবার অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন।

দশম হিজরী সনের ২৫শে যুলকাদা রাসুল (সাঃ) হজ্জের উদ্দেশ্যে মদীনা থেকে যাত্রা শুরু করেন। এটাই ছিল ঐতিহাসিক বিদায় হজ্জ। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সফর সংগী হন তালহাও। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে যুল হুলায়ফা পৌঁছে ইহরাম বাঁধেন। এ সফরে একমাত্র রাসূল (সাঃ) ও তালহা ছাড়া আর কারও সংগে কুরবানীর পশু ছিলনা। (সহীহুল বুখারীঃ কিতাবুল হজ্জ)

প্রিয় নবীর ইন্তিকালে হযরত তালহা দারুণ আঘাত পান। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর শোকে তিনি কাতর হয়ে পড়েন। মাঝে মাঝে বলতেনঃ আল্লাহ তায়ালা সকল মুসীবতে ধৈর্য ধরার হুকুম দিয়েছেন, তাই তাঁর বিচ্ছেদে সবরে জামীলঅবলম্বনের চেষ্টা করি এবং সংগে সংগে আল্লাহর কাছে তাওফীকও কামনা করি।

হযরত আবু বকরের খিলাফতকালে তিনি তাঁর বিশেষ উপদেষ্টা ছিলেন। চিন্তা, পরামর্শ ও কাজের মাধ্যমে সব ব্যাপারে তিনি তাঁকে সাহায্য করেন। রিদ্দার যুদ্ধের সময় অনেক বিশিষ্ট সাহাবী যাকাত আদায় করতে অস্বীকারকারী বেদুইনদের সাথে কিছুটা কোমল আচরণ করার জন্য এবং তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষনা না করার জন্য প্রথমতঃ খলীফাকে পরামর্শ দেন। কিন্তু হযরত তালহা স্পষ্ট করে বলে দেনঃ যে দ্বীনে যাকাত থাকবে না তা সত্য ও সঠিক হতে পারে না।

হিজরী ১৩ সনের জামাদিউস সানী মাসে হযরত আবু বকর (রা.) অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তাঁর অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে লাগলো। একদিন হযরত তালহা গেলেন তাঁকে দেখতে। তিনি উপস্থিত হলে কিছুক্ষণ নিরবতার পর উভয়ের মধ্যে নিম্নোক্ত কথা হয়ঃ

- উমারকে কি স্থলাভিষিক্ত করবো? আবু মুহাম্মাদ (তালহা), আপনার মত কি?
- সাহাবীদের মধ্যে উমার সর্বোত্তম গুণের অধিকারী, তিনি সত্য ও মিথ্যার পার্থক্যকারী।
- তাঁকে আমার স্থলাভিষিক্ত করার ব্যাপারে আমি আপনার পরামর্শ চেয়েছি।
- তাঁর স্বভাবে কিছুটা কঠোরতা আছে এবং তিনি একটু বেশী কড়াকড়ি আরোপ করে থাকেন।
- তাঁর মধ্যে কি কি ত্রুটি আছে?
- আপনার সময়ে তিনি যখন এত কঠোর, আপনার পরে স্বীয় দায়িত্বানুভূতিতে না জানি কত বেশী কঠোর হয়ে পড়েন।
- তাঁর ওপর যখন খিলাফতের গুরু দায়িত্ব এসে পড়বে, তিনি নরম হয়ে যাবেন।
সবশেষে তালহা বললেনঃ  তাঁর গুণাবলী ও যোগ্যতা যে সকলের থেকে বেশী, সে ব্যাপারে আমার দ্বিমত নেই। তাঁর স্বভাবের একটি দিক সম্পর্কে আমার যা প্রতিক্রিয়া তা ব্যক্ত করতে আমি কার্পণ্য করিনি।

হিজরী ১৩ সনে হযরত উমার খলীফা হলেন। তিনিও হযরত তালহাকে যথোপযুক্ত মর্যাদা দিলেন এবং সর্বদা তাঁর পরামর্শ গ্রহণ করে উপকৃত হলেন।

ইরাক বিজয়ের পর সেখানকার কৃষি জমি গণীমতের মালের মত মুজাহিদদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করা হবে কি হবে না, এ প্রশ্নে সাহাবীদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিল। একদল বললেন, ভাগ করাই উচিত হবে। কিন্তু খলীফা সহ অন্য একটি দল ছিলেন ভাগের বিরোধী। অতঃপর মজলিসে শূরার বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনার পর খলীফার মতই সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। এ ব্যাপারে হযরত তালহা শূরার বৈঠকে দ্ব্যর্থহীনভাবে খলীফার মতকে সমর্থন করে জোরালে বক্তব্য রাখেন।

আমিরুল মুমিনীন হযরত উমারের (রা.) ওফাতের পূর্বে যে ছয়জন বিশিষ্ট সাহাবীর ওপর তাঁদের মধ্য থেকে যে কোন একজনকে খলীফা নির্বাচনের দায়িত্ব দিয়ে যান, তার মধ্যে হযরত তালহাও ছিলেন। কিন্তু তিনি আত্মত্যাগের চরম পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে নিজে খিলাফাতের দাবী থেকে সরে দাঁড়ান এবং হযরত উসমানের সমর্থনে নিজের ভোটটি প্রদান করেন।

হযরত উসমান (রা.) বিদ্রোহীদের দ্বারা গৃহবন্দী হলেন। একদিন তিনি ঘরের জানালা দিয়ে মাথা বের করে বিদ্রোহী গ্রুপ ও মদীনার সমবেত লোকদের উদ্দেশ্য করে বক্তব্য রাখলেন। এক পর্যায়ে তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাদের মধ্যে কি তালহা আছেন? কেউ কোন উত্তর দিল না। এভাবে যখন তিনি তৃতীয়বার জিজ্ঞেস করলেন, তখন হযরত তালহা উঠে দাঁড়ালেন। হযরত উসমান তাঁকে লক্ষ্য করে বললেনঃ এ জনতার মধ্যে আপনার উপস্থিতি এবং তিনবার জিজ্ঞেস করার পর সাড়া দেবেন, এমন আশা আমি করিনি। আমি আপনাকে আল্লাহর নামে জিজ্ঞেস করছি, একদিন অমুক স্থানে, যখন রাসূলুল্লাহর (সাঃ) সংগে আমি ও আপনি ছাড়া আর কেউ ছিল না, রাসূল (সাঃ) আপনাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেনঃ তালহা, প্রত্যেক নবীরই তাঁর উম্মতের মধ্য থেকে জান্নাতে একজন সংগী থাকবে। উসমান উবন আফফানই হবে জান্নাতে আমার সংগী। সে কথা আপনার স্মরণ আছে? তালহা সায় দিলেন, হাঁ। তারপর তিনি জনতার ভেতর থেকে উঠে চলে গেলেন।

হযরত উসমান শহীদ হলেন। মুসলিম উম্মাহর একটি অংশ হযরত উসমানের হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে কিসাস দাবী করলেন। হযরত তালহা ও যুবাইর মদীনা থেকে মক্কায় গিয়ে হযরত আয়িশার (রা.) সাথে মিলিত হলেন। বসরার উপকণ্ঠেই তারা হযরত আলীর (রা.) সেনাবাহিনীর মুখোমুখী হলেন। হযরত কাকা ইবন আমরের মাধ্যমে উভয় পক্ষের মধ্যে আলাপ-আলোচনা শুরু হলো। হযরত আলী, উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা, তালহা ও যুবাইর সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের ব্যাপারে মতৈক্যে পৌঁছলেন। উভয় পক্ষ তৃপ্তির নিশ্বাস ফেললো। কিন্তু চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রকারী ইহুদী ইবন সাবার লোকেরা এতে প্রমাদ গুণলো। মূলতঃ তারাই ছিল হযরত উসমানের হত্যাকারী। তারা হযরত আলীর সেনাবাহিনীর মধ্যে গা ঢাকা দিয়েছিল। রাতের অন্ধকারে তারা একদিকে হযরত আয়িশার এবং অন্য দিকে হযরত আলীর সেনাবাহিনীর ওপর তীর নিক্ষেপ শুরু করলো। উভয় পক্ষের সৈন্যরা শান্তিচুক্তির সিদ্ধান্ত হওয়ায় নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়েছিল। অতর্কিত এ আক্রমণে ঘুম থেকে জেগে তারা মনে করলো প্রতিপক্ষ আক্রমণ শুরু করেছে। ইহুদি ইবন সাবার চক্রান্ত সফল হলো। সকাল হতে না হতে তুমুল লড়াই বেঁধে গেল এবং ইতিহাসে এ লড়াই উটের যুদ্ধনামে খ্যাত হলো। এ যুদ্ধে উভয় পক্ষের প্রায় দশ মতান্তরে তের হাজার লোক নিহত হলেন। এ যুদ্ধের সূচনা লগ্নেই সাবায়ীদের নিক্ষিপ্ত একটি তীর হযরত তালহার পায়ে বিঁধে। ক্ষত স্থান থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হচ্ছে না দেখে হযরত কাকা ইবন আমর তাঁকে অনুরোধ করলেন বসরার দারুল ইলাজে’ (হাসপাতাল) চলে যাওয়ার জন্য। তাঁরই অনুরোধে তিনি একটি চাকরকে সংগে করে দারুল ইলাজেচলে যান। কিন্তু ইত্যবসরে তাঁর দেহ রক্তশূণ্য হয়ে পড়ে। সেখানে পৌঁছার কিছুক্ষণ পরেই তিনি ইনতিকাল করেন। বসরাতেই তাঁকে দাফন করা হয়।

ইবন আসাকির বিভিন্ন সূত্রে উল্লেখ করেছেন যে, উটের যুদ্ধের দিন মারওয়ান ইবনুল হিকামের নিক্ষিপ্ত তীরে হযরত তালহা আহত হন। হিজরী ৩৬ সনের জামাদিউল আউয়াল মতান্তরে ১০ই জামাদিউস সানী ৬৪ বছর বয়সে তিনি ইনতিকাল করেন।

হযরত তালহা ছিলেন একজন বিত্তশালী ব্যবসায়ী। কিন্তু সম্পদ পুঞ্জিভূত করার লালসা তাঁর ছিলনা। তাঁর দানশীলতার বহু কাহিনী ইতিহাসে পাওয়া যায়। ইতিহাসে তাঁকে দানশীল তালহাবলে উল্লেখ করা হয়েছে। একবার হাদরামাউত থেকে সত্তর হাজার দিরহাম তাঁর হাতে এলো। রাতে তিনি বিমর্ষ ও উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়লেন। তাঁর স্ত্রী হযরত আবু বকরের (রা.) কন্যা উম্মু কুলসুম স্বামীর এ অবস্থা দেখে জিজ্ঞেস করলেনঃ

- আবু মুহাম্মদ, আপনার কী হয়েছে? মনে হয় আমার কোন আচরণে আপনি কষ্ট পেয়েছেন।
- না, একজন মুসলিম পুরুষের স্ত্রী হিসেবে তুমি বড় চমৎকার। কিন্তু সেই সন্ধ্যা থেকে আমি চিন্তা করছি, এত অর্থ ঘরে রেখে ঘুমালে একজন মানুষের তার পরওয়ারদিগারের প্রতি কিরূপ ধারণা হবে?
- এতে আপনার বিষণ্ন ও চিন্তিত হওয়ার কি আছে? এত রাতে গরীব-দুঃখী ও আপনার আত্মীয় পরিজনদের কোথায় পাবেন? সকাল হলেই বণ্টন করে দেবেন।
- আল্লাহ তোমার ওপর রহম করুন! একেই বলে, বাপ কি বেটী।

পরদিন সকাল বেলা ভিন্ন ভিন্ন থলি ও পাত্রে সকল দিরহাম ভাগ করে মুহাজির ও আনসারদের গরীব মিসকীনদের মধ্যে তিনি বণ্টন করে দেন। তাঁর দানশীলতা সম্পর্কে অপর একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। এক ব্যক্তি হযরত তালহার নিকট এসে তাঁর সাথে আত্মীয়তার সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে কিছু সাহায্য চাইলো। তালহা বললেনঃ অমুক স্থানে আমার একখণ্ড জমি আছে। উসমান ইবন আফফান উক্ত জমির বিনিময়ে আমাকে তিন লাখ দিরহাম দিতে চান। তুমি ইচ্ছে করলে সেই জমিটুকু নিতে পার বা আমি তা বিক্রি করে তিন লাখ দিরহাম তোমাকে দিতে পারি। লোকটি মূল্যই নিতে চাইলো। তিনি তাঁকে বিক্রয়লব্ধ সমুদয় অর্থ দান করেন।