12.6.15

প্রেস বিজ্ঞপ্তিঃ ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে বাংলাদেশের জন্য কোন সফলতা ছিলনা; বরং হাসিনা শুধুমাত্র তার ক্ষমতাকে সুরক্ষিত রাখতে উম্মাহ্’র সম্পদকে মুসলিমদের স্বঘোষিত শত্রুর নিকট সঁপে দিয়েছে

বৃহস্পতিবার, ২৪ শা’বান, ১৪৩৬ হিজরি                                                          ১১. ০৬. ২০১৫ ইং

::প্রেস বিজ্ঞপ্তি::

ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে বাংলাদেশের জন্য কোন সফলতা ছিলনা; বরং হাসিনা শুধুমাত্র তার ক্ষমতাকে সুরক্ষিত রাখতে উম্মাহ্’র সম্পদকে মুসলিমদের স্বঘোষিত শত্রুর নিকট সঁপে দিয়েছে

৬ জুন, ২০১৫, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির সফরের সময় বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে কানেকটিভিটি ও অবকাঠামো হতে শুরু করে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষরিত হয়। মোদির সফরের এসব চুক্তি হতে বাংলাদেশ যেসব কাল্পনিক সুবিধা পেতে পারে তা নিয়ে মিডিয়াতে যে তোলপাড় দেখা যাচ্ছে তা মূলত সত্যের উপর অপঘাত ছাড়া আর কিছুই না। যেসব রাজনৈতিক জ্ঞানশূন্য ও বিক্রিত ব্যক্তিরা সফরটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে শুধুমাত্র তারাই একথা বিশ্বাস করে যে, ভারতের সঙ্গে চুক্তিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সুবিধা আসবে। অথচ প্রকৃত সত্য হচ্ছে ভারত নিজেই একটি দারিদ্র-জর্জরিত দেশ, যে নিজেই তার অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ এবং যার ফলে সে এই বছর ১৯৪ মিলিয়ন ক্ষুধার্ত মানুষ নিয়ে বিশ্ব তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। তাছাড়া, বাংলাদেশের প্রতি সর্বদা শত্রুরাষ্ট্রের ভূমিকা পালনকারী ভারতের মতো এরকম একটি উগ্র জাতীয়তাবাদী দেশ কেন আমাদেরকে সাহায্য করতে মরিয়া হবে, যদি না বাংলাদেশের কাছ থেকে তার নিজস্ব অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সুবিধা আদায়ের উদ্দেশ্য না থাকে? ভারত-ভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক, অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের লেখক রবি শেখর নারায়ন সিং কয়েক বছর পূর্বে তার “এশিয়ান স্ট্র্যাটিজিক এন্ড মিলিটারি পারসপেক্টটিভ” শিরোনামের বইয়ে লিখেছে যে, কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা ট্রানজিট রুট (গত শনিবার হাসিনা ও মোদি কর্তৃক উদ্বোধনকৃত) ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অর্থনৈতিক কল্যাণ বৃদ্ধি করতে পারে। ভারতের অর্থনীতিকে শক্তিশালীকরণের এসব চেষ্টা ছাড়াও হাসিনা ভারতকে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে বঙ্গোপসাগরে ভারতের আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক কৌশলগত উপস্থিতিকে সহযোগীতা করতে সম্মত হয়েছে।

তাছাড়া ৭৭ মিলিয়ন বিদ্যুৎহীন ঘরবাড়ি নিয়ে ভারত যে কার্যতঃ একটি বিদ্যুৎ সঙ্কটের টাইম বোমার উপর অবস্থান করছে তা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। যেখানে ভারতের উত্তরাঞ্চল এখনো ৫০০০ মেগাওয়াটেরও বেশী বিদ্যুতের ঘাটতিতে ভুগছে, সেখানে কেন সে নিজ দেশের জনগণকে ৪৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ হতে বঞ্চিত করবে, যা ভারতীয় কোম্পানীগুলো বাংলাদেশে উৎপাদন করবে? নিজ দেশের কোম্পানীগুলোর জন্য লাভের রাস্তা বের করাই এই মুশরিক রাষ্ট্রের লক্ষ্য নয়, বরং সে বাংলাদেশের কৌশলগত জ্বালানী খাতের উপর কর্তৃত্ব নিতে চায়। তাই অপরাধী হাসিনা জ্বালানী সম্পদ ও স্পর্শকাতর স্থানগুলোকে আমাদের শত্রু রাষ্ট্রের হাতে তুলে দিয়ে তার চরম বিশ্বাসঘাতকার নজির দেখাচ্ছে। শুধু তাই নয়, যেখানে শত্রুরাষ্ট্র ভারত আমাদের তৈরি পোষাক খাতকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছে এবং ইতিমধ্যে আমাদের পাটশিল্পকে ধ্বংস করে দিয়েছে, সেখানে নির্লজ্জ হাসিনা শুধুমাত্র ভারতীয় কোম্পানীকে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রদানে সম্মত হয়েছে!

হে বাংলাদেশের নিষ্ঠাবান মুসলিমগণ!

এসব চুক্তিসমূহ নিতান্তই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয় নয় যেখান থেকে দুই পক্ষই সুবিধা লাভ করবে। বরং, এটা উম্মাহ্’র ধন-সম্পদকে মুশরিক রাষ্ট্র ভারতের হাতে তুলে দেয়া। বাংলাদেশের মুসলিমদের জন্য পরাজয় এবং গ্লানি বয়ে আনতে বিশ্বাসঘাতক হাসিনা তার কোন চেষ্টাই বাদ রাখছে না। সুতরাং খিলাফত পুণঃপ্রতিষ্ঠায় হিযবুত তাহরীর-এর সাথে রাজনৈতিক সংগ্রামে অংশগ্রহণ করুন; খিলাফত রাষ্ট্র মুশরিকদের কাছে সম্মান ও ক্ষমতা প্রত্যাশী এসব আওয়ামী-বিএনপি শাসকগোষ্ঠীর হাত থেকে এদেশকে মুক্ত করবে এবং ভারতকে পুনরায় ইসলামী শাসনের অধীনে নিয়ে আসবে।

بَشِّرِ الْمُنَافِقِينَ بِأَنَّ لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا ﴿١٣٨﴾ الَّذِينَ يَتَّخِذُونَ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِن دُونِ الْمُؤْمِنِينَ ۚ أَيَبْتَغُونَ عِندَهُمُ الْعِزَّةَ فَإِنَّ الْعِزَّةَ لِلَّهِ جَمِيعًا ﴿١٣٩﴾

“সেসব মুনাফিককে সুসংবাদ শুনিয়ে দিন যে, তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব; যারা মুসলিমদের বর্জন করে কাফিরদেরকে নিজেদের বন্ধু বানিয়ে নেয় এবং তাদেরই কাছে সম্মান প্রত্যাশা করে, অথচ যাবতীয় সম্মান শুধু আল্লাহরই জন্য।” [সূরা আন-নিসাঃ ১৩৮-১৩৯]


হিযবুত তাহরীর-এর মিডিয়া কার্যালয়, উলাই’য়াহ্ বাংলাদেশ

Mobile: +8801798367640                    Skype: htmedia.bd
New official Website: www.ht-bangladesh.info
হিযবুত তাহরীর-এর আমীর শেখ আতা’ ইবনে খলিল আবু-রাশতা-এর ফেসবুক লিংকঃ www.facebook.com/Ata.AbualRashtah
fb page: PeoplesDemandBd
Hizbut Tahrir official website: www.hizb-ut-tahrir.org
Hizbut Tahrir Media Website:
 www.hizb-ut-tahrir.info

8.6.15

ভারচ্যুয়াল অর্থনীতির সারকথা

ভারচ্যুয়াল অর্থনীতির সারকথা

ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির আরেকটি প্রবঞ্চনাপূর্ণ উপাখ্যান হচ্ছে ভারচ্যুয়াল অর্থনীতি। সম্পদ ও আয়ের সুষম বণ্টনের যে হঠকারী প্রস্তাবনা ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থা উপস্থাপন করে, ভারচ্যুয়াল অর্থনীতির পক্ষেও তারা সেই প্রস্তাবনাকেই বর্ধিত করে। তারা মনে করে ব্যবসায়ে লগ্নিকৃত পুঁজিকে (ইকুইটি এবং ঋণ) যদি লেনদেনের জন্য উন্মুক্ত করা হয় তবে উদ্বৃত্ত পুঁজি যথাযথ খাতে প্রবাহিত হবে এবং জাতীয় আয়ের ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত হবে। দ্বিতীয় আরেকটি ধারনা হচ্ছে বাজারের সব ধরনের গতিপ্রকৃতি অনুমান-পটুতার ভিত্তিতে লাভ অর্জন করার অধিকার সবার আছে। সুতরাং পুঁজি লেনদেনের তারল্য এবং নানা বিশিষ্টের আর্থিকপত্র (Financial Instrument) সৃষ্টির মাধ্যমে বিনিয়োগকারীর যে কোনো অনুমানকে বাস্তবে রূপ দেবার বন্দোবস্ত থাকতে হবে যা বাজারকে পরিণত এবং পূর্ণবিকশিত (Market Completeness) করবে। অধিকন্তু, বিনিয়োগকারীগন তাদের ঝুঁকি গ্রহণের রুচি (Risk Appetite) অনুপাতে বিনিয়োগ ঝুড়ি (Investment Portfolio) কে সাজাতে পারবে এবং যে কোনো সময় তাতে পরিবর্তন ও সামঞ্জস্য বিধান করতে পারবে।

উপরের চিন্তা থেকে ব্যবসা থেকে পুঁজির চুক্তিকে পৃথক করে তা বাজারজাত করা হয়। পুঁজির ধরন অনুসারে চুক্তিগুলোকে নানা নামে অভিহিত করা হয়। যেমন চুক্তির প্রকৃতি মালিকানা (ইকুইটি) হলে তাকে বলা হয় শেয়ার এবং চুক্তির প্রকৃতি ঋণ হলে তাকে বলা হয় বন্ড, ডিবেঞ্চার ইত্যাদি। যদি চুক্তির প্রকৃতি মালিকানা ও ঋণের বৈশিষ্ট্য মিশ্রিত হয় এবং মালিকানার বৈশিষ্ট্য অধিক প্রকাশ্য হয় তবে তাকে বলা হয় প্রতি-ইকুইটি (Quasi Equity), যেমন প্রেফারড শেয়ার। অপরপক্ষে ঋণের বৈশিষ্ট্য যদি অধিক প্রকাশ্য হয় তবে তাকে বলা হয় প্রতি-ঋণ (Quasi Debt), যেমন কনভার্টিবল বন্ড, পার্টিসিপেটরি বন্ড ইত্যাদি।

চুক্তিকে বাজারজাতযোগ্য করার জন্য চুক্তির প্রকৃতিতে কিছু মৌলিক পরিবর্তন আনা হয়। যেমন কোম্পানির দায়কে সীমিত করা যাতে চুক্তিকারী ব্যক্তির (আরও সঠিকভাবে চুক্তি ক্রয়কারীর) দায় চুক্তি-মুল্যের অতিরিক্ত না হয়। দায় সীমিত থাকার কারণে চুক্তি ক্রয়কারীকে সেই কোম্পানির দায়ের ভার নিতে হয় না। যে কারনে চুক্তির বাজার তারল্য বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। দ্বিতীয়ত কোম্পানিকে একটি স্বতন্ত্র কৃত্রিম ব্যক্তিসত্ত্বা হিসেবে আইনগত ভিত্তি দেয়া হয়। যে কারনে পুঁজি সরবরাহের চুক্তিগুলো হয় নৈর্ব্যক্তিক। অর্থাৎ চুক্তি হয় নৈর্ব্যক্তিক কোম্পানির সংগে পুঁজির, পুঁজি বিনিয়োগকারীর সংগে নয়। সুতরাং চুক্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে চুক্তির ক্রেতা এবং বিক্রেতার পরিচিতি বা সংযোগের কোন প্রয়োজন পরে না। যেকারনে চুক্তিটি চুক্তির স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হারিয়ে একটি সাধারণ ভোগ্যপণ্যে রূপান্তরিত হয়। চুক্তির এই নৈর্ব্যক্তিকরণ চুক্তিপণ্যের বাজার তারল্য বহুগুণ বৃদ্ধি করে। ইন্টারনেটের ব্যবহার ব্যপক বিস্তৃতি লাভ করায় এই চুক্তিপন্যের লেনদেন তারল্য আরেক দফা বৃদ্ধি করেছে।

পরবর্তী পর্যায়ে মূল চুক্তিকে অন্তরালে রেখে চুক্তিটি ক্রয় বা বিক্রয়ের প্রতিশ্রুতিকেনাবেচা করার বাজার সুবিধা সৃষ্টি করা হয়। অর্থাৎ এই পর্যায়ে এসে চুক্তির প্রতিশ্রুতিকে চুক্তি থেকে বিচ্ছিন্ন করে পণ্যের চরিত্র দেয়া হয় এবং তা বাজারজাত করার মাধ্যমে তারল্য বৃদ্ধি করা হয়। আরও খানিকটা অগ্রসর হয়ে প্রতিশ্রুতি ক্রয়-বিক্রয়ের প্রতিশ্রুতিকেও বাজারজাত করা হয়। এই আর্থিকপত্রগুলো মূলত বাজারের ভবিষ্যৎ গতিপ্রকৃতির উপর একধরনের বাজি (Bet)
এই প্রতিশ্রুতি বাজারের প্রধান কয়েকটি আর্থিকপত্র হচ্ছে অপশন, ফিউচার, সোয়াপ ইত্যাদি। সামগ্রিকভাবে এই পত্রগুলোর বাজারকে বলা হয় Derivatives Market. ডেরিভেটিভস মার্কেটের আর্থিকপত্রগুলো ক্রয় করতে যেহেতু পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করতে হয় না তাই বাজার তারল্য বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পায়।

ব্যবসা থেকে পুঁজিকে বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে সৃষ্ট এই মেকি অর্থনীতিই হচ্ছে ভারচ্যুয়াল অর্থনীতি। ভারচ্যুয়াল অর্থনীতির প্রক্রিয়াটি আরও জটিল আকার ধারন করে যখন এই আর্থিকপত্র ঋণ নিয়ে ক্রয় করা হয় অথবা ধার করে বিক্রি করা হয়।

চুক্তিপত্রের (শেয়ার, বন্ড ইত্যাদি) মূল্য নির্ধারণে কোম্পানির ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য আয়কে বিবেচনায় নেয়া হয়। সম্ভাব্য আয় অবশ্যই অনিশ্চিত। স্বাভাবিকভাবেই চুক্তিগুলোর মূল্য বিনিয়োগকারীদের উপলব্ধি এবং অনুমানের উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ মূল্য এবং উপযোগিতা Speculative. সুনির্দিষ্ট কোন মূল্য না থাকার কারণে চুক্তিপত্রের চাহিদা ও যোগান বিনিয়োগকারীদের ধারনার উপর নির্ধারণ হয়। সুতরাং মূল্য নির্ধারণে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ-আচরণ (Investment Behavior) একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই বিনিয়োগ আচরণের উপস্থিতির কারণে আর্থিকপত্রের মূল্য কোম্পানির ভবিষ্যৎ আয়ের চেয়েও বাজারের গতিধারার (Market Trend) উপর অধিক নির্ভর করে। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীর লোভ, গুজব, অযৌক্তিক প্রত্যাশা চুক্তিপত্রের মূল্য নির্ধারণে অধিক ভূমিকা রাখে। ডেরিভেটিভস মার্কেটের আর্থিকপত্রগুলোর মূল্য নির্ভর করে চুক্তিপত্রের অনুমিত মুল্যের গতিধারার অনুমানের উপর!

উপরের এই সবকিছুর যোগফল হিসেবে সৃষ্টি হয় একটি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, অসার, স্ফীত এবং বিকারগ্রস্থ অর্থনীতি যেখানে পৃথিবীর প্রকৃত উৎপাদনের কয়েকগুণ লেনদেন হয়! শতশত বিনিয়োগকারী এবং মার্কেট অপারেটর যৌক্তিক চেতনা হারিয়ে মোহাবিষ্টের মত এই অযৌক্তিক কর্মকাণ্ডে ব্যাপৃত হয়। চুক্তিকে বাজারজাত করার কারণে সেখানে সবারই অংশগ্রহন করা সুগম হয়। যে ব্যক্তি কোনদিন টেক্সটাইল ব্যবসা করার কথা চিন্তাও করে না সেও স্কয়ার টেক্সটাইলের একটি শেয়ার কিনে। কারণ শেয়ার কেনা আর প্রকৃত ব্যবসায়ী বিবেচনায় পুঁজি লগ্নি করা এক বিষয় নয়। সুতরাং ভারচ্যুয়াল অর্থনীতি যথাযথ খাতে পুঁজি প্রবাহ ঘটায় এই দাবীটি অশুদ্ধ।

যোগের দ্বিতীয় ফল হচ্ছে পুঁজিবাজারে একটি সার্বক্ষণিক উত্থান-পতন বা অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি। এই উত্থান-পতনের প্রক্রিয়ায় দরিদ্র ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীগনকে প্রায়ই তাদের সর্বস্ব হারাতে দেখা যায়। বাজারের চরিত্র সম্বন্ধে অজ্ঞ সাধারণ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদেরকে প্রলুব্ধ করে এখানে টেনে আনা হয়। তারা সরল বিশ্বাসে মৌমাছির মত ভারচ্যুয়াল মধুর পেয়ালায় আছড়ে পড়ে। পুঁজির বিনিয়োগ এবং উত্তোলনের মাধ্যমে বৃহৎ বিনিয়োগকারীগন বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। পুঁজির ক্ষমতাবলে বাজার থেকে তারা তাদের লাভ তুলে নিতে সক্ষম হয়। অপরপক্ষে ক্ষুদ্র পুঁজিগুলো খড়কুটোর মত বৃহৎ পুঁজির স্রোতে হারিয়ে যায়। এভাবেই দরিদ্ররা লুণ্ঠিত হয় এবং সম্পদ বৃহৎ পুঁজিপতিদের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়। একারনেই আমরা প্রায়শই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নিঃস্ব হতে দেখলেও বৃহৎ বিদেশী বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের খুব কমই নিঃস্ব হতে দেখি। শেয়ার কেনা প্রকৃত ব্যবসায়ে পুঁজি লগ্নির অনুরূপ না হওয়ায় জাতীয় আয়ের যে বণ্টনের কথা বলা হয় তা ভ্রান্ত। পুঁজিবাজারের এই উত্থান-পতন পণ্যবাজারকেও দারুনভাবে প্রভাবিত করে। দেখা যায় পুঁজিবাজার যখন চাঙ্গা থাকে তখন ভোক্তারা তাদের বর্তমান ভোগ হ্রাস করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে যা পণ্যবাজারের প্রান্তিক ব্যবসায়ীদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আবার পুঁজিবাজারের পতন দ্রুত ঘটার কারণে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা দ্রুত পুঁজি হারায়, ফলে পণ্যবাজারে আরেক দফা মন্দা সৃষ্টি করে। সুতরাং পুঁজিবাজার অর্থনীতিকে প্রাণবন্ত করে এ দাবীটি বাস্তবতা বিবর্জিত।

যোগের তৃতীয় ফল হচ্ছে প্রকৃত বিনিয়োগ হ্রাস। পুঁজিবাজার কিছু বৃহৎ কর্পোরেটকে পুঁজি সংগ্রহে সাহায্য করলেও তা রাষ্ট্রের সার্বিক বিনিয়োগকে বৃদ্ধি করে না। অর্থাৎ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করার সুযোগ সৃষ্টি এবং সরকারীভাবে এখানে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করার কারণে জনসাধারণ তাদের উদ্বৃত্ত পুঁজি প্রকৃত ব্যবসায়ে বিনিয়োগ না করে পুঁজিবাজারে প্রবাহিত করে, যা শুধুমাত্র গুটিকয়েক পুঁজিপতিকে তাদের মূলধন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় ব্যাপক ব্যক্তি উদ্যোগ এবং নতুন ব্যবসা সৃষ্টির তাড়না হ্রাস পায়। সুতরাং অর্থনৈতিক সম্পদ তার পূর্ণমাত্রায় ব্যবহৃত হতে পারে না।

উপরের আলোচনা থেকে এটা বলা যায় যে, ভারচ্যুয়াল অর্থনীতি আমাদের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয় বরং মুষ্টিমেয় ধনীর হাতে সম্পদকে কেন্দ্রীভূত করার একটি হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। প্রকারান্তরে এই প্রক্রিয়া একটি শক্তিশালী, স্বনির্ভর ও কাম্য অর্থব্যবস্থা সৃষ্টির একটি বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। সর্বোপরি এটি একটি বাস্তবতা বিবর্জিত প্রহসনমূলক অনুশীলন যা মানুষের কোন মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান দেয় না।

ইসলাম এই অন্যায্য ভারচ্যুয়াল অর্থনীতির অবসান ঘটিয়ে একটি শক্তিশালী ও কল্যাণকর অর্থনীতি গড়ে তুলবে যাতে তার অভ্যন্তরীণ সম্পদের সুষ্ঠু ও সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত হয়। জনসাধারণ প্রকৃত ব্যবসায়ে সম্পৃক্ত হবার কারণে সার্বিক অর্থনীতিতে ভারসাম্যপূর্ণ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। ভারচ্যুয়াল অর্থনীতি সৃষ্টির উৎসসমূহ বিলুপ্তির মাধ্যমে ইসলাম এই কাজগুলো সম্পাদন করবে। অর্থাৎ ইসলাম সীমিত দায় কোম্পানি নিষিদ্ধ করে অসীম দায়ের অংশীদারি কারবারকে অনুমোদন দিবে। ব্যবসাকে নৈর্ব্যক্তিক সত্ত্বা হিসেবে কোন আইনি ভিত্তি দিবে না, ফলে অংশীদারি কারবারের পুঁজিকে ব্যবসা থেকে পৃথক করা যাবে না।

ইসলাম বর্তমান ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার নিষ্পেষণ থেকে মানবতাকে অচিরেই মুক্ত করবে ইনশা'আল্লাহ।



***লেখকঃ মাহমুদ সাদিক

বিদেশী মিউচ্যুয়াল ফান্ড আমাদের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে...... আসলেই?

বিদেশী মিউচ্যুয়াল ফান্ড আমাদের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে...... আসলেই?

“Foreign mutual funds…...will be to bring in increasing foreign investments, which will then be available as a source of capital, investment in telecom, digitization and the IT sector and in general (fields) as well.” -- Oh really?

উপরের কথাগুলো বলেছেন সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয় [May 7, 2015 in Digital Investment Summit, Dhaka]। তিনি বিদেশী মিউচুয়াল ফান্ডকে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে সরাসরি অপারেট করতে দেয়ার নীতি গ্রহন করতে যাচ্ছেন। তার এই নীতির সপক্ষে উপরের যুক্তি তুলে ধরেন। অর্থাৎ তিনি বলেন যে এই মুক্তনীতি আমাদের টেলিকম, ডিজিটাইজেশন, আইটি এবং সাধারণ খাতে বিনিয়োগের পুঁজি যোগান দিবে। তাই কি? তবে বাস্তবতা একটু বিশ্লেষণ করা যাক।

আমাদের মত অনুন্নত অর্থনীতিকে বলা হয় প্রান্তিক বাজার (Frontier Market), আর এই প্রান্তিক বাজার হচ্ছে বৃহত্তর উদীয়মান বাজারের (Emerging Market) অন্তর্ভূক্ত। এই বাজারগুলোতে সাধারণত উচ্চ ঝুঁকি গ্রহণকারী Hedge Fund এবং Emerging Market Fund গুলোই বিনিয়োগ করে থাকে। অর্থাৎ তাদের বিনিয়োগের উদ্দেশ্যই হয় অগভীর বাজারগুলো থেকে স্বল্প সময়ে অভাবনীয় লাভ অর্জন করা। ফান্ডগুলো তাই Frontier Market-এ কোন দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে যায় না। সর্বোপরি বাজার অগভীর এবং অপক্ক হওয়ায় তারা বাজারকে সহজেই প্রভাবিত করতে পারে। বৃহৎ পুঁজির সক্ষমতার কারণে তারা নানা ম্যানুপুলেটিভ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়। বৃহৎ দেশীয় ব্রোকারেজ হাউজ, সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি এবং মার্চেন্ট ব্যাংক এই বিদেশী ফান্ডের নানাধরনের সুবিধা লাভ করে থাকে। স্বাভাবিকভাবেই তারা এই বিদেশী ফান্ডের স্বার্থ রক্ষার জন্য সবসময় সচেষ্ট থাকে। প্রয়োজনে তারা গুজব ছড়িয়ে বাজারকে প্রভাবিত করতেও কুণ্ঠিত হয়না।

আমাদের পুঁজিবাজার কত ক্ষুদ্র এবং অগভীর তা বোঝার জন্য কিছু পরিসংখ্যান দেখা যাক। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামগ্রিক পুঁজির বাজারমূল্য (Market Capitalization) হচ্ছে প্রায় ৪৭ বিলিয়ন ডলার। এই অংক আমেরিকার যেকোনো একটি কোম্পানির চেয়ে বহুলাংশে কম। যেমন DuPont এর Market Capitalization হচ্ছে ৬৪৭ বিলিয়ন ডলার, Apple এর ৬৭৩ বিলিয়ন, Wal-Mart এর ২৭৪ বিলিয়ন, Chevron এর ২২০ বিলিয়ন, Facebook এর ২০৪ বিলিয়ন এবং CocaCola এর ১৯৪ বিলিয়ন। অর্থাৎ আমাদের সব কোম্পানির পুঁজি মিলে ওদের যেকোনো একটি কোম্পানির চেয়েও হাস্যকর পর্যায়ের ছোট। আর নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের তুলনায় আমাদের বাজারের মূল্যপরিধি হচ্ছে ০.০০০০০০০০০২৮%!

আবার একটি Hedge Fund এর পরিমাণও আমাদের বাজারের প্রায় সমান। যেম Bridgewater Pure Alpha এর পরিমাণ হচ্ছে ৩৬ বিলিয়ন ডলার এবং Quantum Endowment Fund এর পরিমাণ ৩১ বিলিয়ন ডলার। আমাদের Frontier Market-এ এই ফান্ডগুলোর বিনিয়োগ তাদের মোট পোর্টফলিওর অনুপাতে দশমিকের ঘরে। তাই তাদের এই বিনিয়োগ যদি পুরোটা নষ্টও হয় তবুও তাদের কিছু যায় আসে না। তাদের এই বৃহৎ পুঁজির সক্ষমতা এবং স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগ (Tactical Investment) প্রকৃতির কারণে তারা প্রতিনিয়ত পুঁজি উত্তোলন করে তাদের বেইস কান্ট্রিতে নিয়ে যায়। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উপর কোন lock-in নাই। অর্থাৎ তারা যেকোনো সময় পুঁজি ফেরত নিতে পারে। শুধুমাত্র Pre-IPO বিনিয়োগের উপর ৬ মাসের Lock-in Period আছে। ফেরত নেবার সময় ডলারের আউট-ফ্লো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইন-ফ্লোর চেয়ে বেশী হয়। কারণ চাঙ্গার সময় শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধির হার টাকার দর পতনের চেয়ে বেশী হয়। বিনিয়োগ উত্তোলনের সময় বাজার মন্দা থাকলে তারা বাজারে আরও বিনিয়োগ করছে এমন গুজব তাদের স্থানীয় এজেন্টদের মাধ্যমে ছড়িয়ে বাজারকে চাঙ্গা করতে পারে। বিভিন্ন ধরনের বাজার গবেষণা-পত্রের মাধ্যমেও তারা বাজারের কনফিডেন্স ধরে রাখে। অথবা কিছু প্রকৃত বিনিয়োগ করে বাজারকে চাঙ্গা করে পূর্ববর্তী বিনিয়োগকে লাভজনকভাবে তুলে নেয়। এই সবই সম্ভব হয় তাদের পুঁজির সক্ষমতার কারণে। সুতরাং, বিদেশী ফান্ড আমাদের দীর্ঘমেয়াদী পুঁজি সরাবরাহ করবে এমন যুক্তি গ্রহন করা যাচ্ছে না। বরং আমাদের ডলার রিজার্ভের নেট পজিশন হ্রাস পাবার সম্ভাবনাই বেশী। কারণ স্বল্প সময়ের ভিতর কোন প্রকৃত বিনিয়োগ আয় সৃষ্টি করে না, বিশেষ করে টেলিকম এবং আইটির মত বৃহৎ বিনিয়োগের জন্য তা আরও সত্য। সর্বোপরি টেলিকম কোন বিদেশী মুদ্রা অর্জনকারী খাত নয়।

বিদেশী ফান্ডগুলো অনেক ক্ষেত্রে সরকারি নীতিকে তাদের অনুকুলে নেবার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে পারে। বিভিন্ন ধরনের বাজার সমৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের অধীনে বিশ্বব্যাংক-আইমএফ তাদের জন্য সুবিধাজনক নীতি বাস্তবায়ন করে থাকে। বিদেশী ফান্ডের সরাসরি বিনিয়োগের এই সুযোগ সৃষ্টির বর্তমান উদ্যোগ তারই একটা উদাহরণ। অধিকন্তু, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নেতার বক্তব্যের মাধ্যমেও বাজারে কনফিডেন্স সৃষ্টি করা হয়। যেমন জনাব জয়ের এই বক্তব্যের পরে বাজারে চাঙ্গা ভাব দেখা যায়। সরকারকে ম্যনুপুলেট করার এই সুবিধা দেশীয় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নেই।

বিদেশী ফান্ডগুলো নিজেদের ভিতর যোগাযোগের মাধ্যমে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলে। যে কারনে তারা সহজেই বাজারকে প্রভাবিত করতে পারে। যেহেতু তারা বিদেশে অবস্থান করে, তাদের এই সিন্ডিকেটের খবর প্রচারিত হয় না এবং এই ধরনের সিন্ডিকেট বাংলাদেশের আইনি সীমার বাইরে হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোন রকম ব্যবস্থাও নেয়া যায় না। যেমন বিদেশী বিনিয়োগকারীরা ১৯৯৬ সনের শেয়ার কেলেঙ্কারির মূল হোতা হওয়া সত্যেও তাদের বিরুদ্ধে কোন আইনি ব্যবস্থা নেয়া যায় নি।

বিদেশী ফান্ডের বিনিয়োগগুলো আলটিমেটলি দেশী সাধারণ বিনিয়োগকারীদেরই কিনতে হয়। বলাই বাহুল্য যে তা অধিক মূল্যে। বিদেশী ফান্ড শুধু কিছু সময়ের জন্য বাজারে ঢুকে বাজারকে চাঙ্গা করার মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট বা লোভাতুর করে তোলে। তাদের লোভ যখন তুঙ্গে তখন বিদেশী ফান্ডগুলো চতুরতার সাথে তাদের বিনিয়োগ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে আলতোভাবে গছিয়ে দিয়ে যায়। সাধারণ বিনিয়োগকারীগন কিছু বুঝে উঠার আগেই তাদের হাতে জড়ো হয় কিছু মূল্যহীন কাগজ। দর পতনের মাধ্যমে তাদের নিঃস্ব হবার প্রক্রিয়াটি শেষ হয়।

তাবেদার সরকার তখন খানিকটা বিশ্রাম নিয়ে আবার তাদের বিদেশী প্রভুর স্বার্থে নতুন করে কনফিডেন্স গেম খেলতে শুরু করে। ১৯৯৬ থেকে শুরু করে বেশ কয়েকবার আমরা এই একই চিত্র প্রত্যক্ষ করেছি।

পুঁজিবাজারে পোর্টফোলিও বিনিয়োগ সার্বিক অর্থনীতিতে কোন কল্যাণ বয়ে আনে না। বরং তা প্রকৃত বিনিয়োগের স্পৃহা বিনষ্ট করে এবং অর্থনীতিকে বৈষম্যমূলক ও অস্থিতিশীল করে তোলে। জনাব জয়ের বক্তব্য তাই কোনভাবেই গ্রহন করা গেল না।

ইসলাম শুধু এই বিদেশী ফান্ডের বিনিয়োগ নয় বরং সামগ্রিক ভারচ্যুয়াল অর্থনীতির অবসান ঘটাবে। মানুষের অর্থনৈতিক চাহিদাগুলো পূরণের জন্য একটি শক্তিশালী ও বণ্টনমূলক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করবে। সমস্ত উম্মাহ সেই দিনের অপেক্ষায় আছে।


***লেখক - মাহমুদ সাদিক